অস্থির পেঁয়াজের বাজার: সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি

বিগত কয়েক মাসে দফায় দফায় পেঁয়াজ নিয়ে সংকট চলছে। সর্বশেষ গত ৭ ডিসেম্বর ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মাত্র এক দিনেই পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়ে গেছে একশ টাকা। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষই এক রাতে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি একশ টাকা বেড়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ দেখছেন না। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। তার পাশাপাশি ছিল আগের মজুদ পেঁয়াজও। এরই মধ্যে দেশে নতুন পেঁয়াজও উঠতে শুরু করেছে। তা ছাড়া কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি বন্ধ হলে বাজারে এর প্রভাব পড়তে অন্তত কয়েক দিন সময় লাগার কথা। সুতরাং কোনো সমীকরণেই বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজের মজুদে যেমন ঘাটতি নেই, তেমনি বিঘœ নেই সরবরাহেও। অথচ পেঁয়াজের এই তুঘলকি কা-ে একদিনেই কোটি কোটি টাকা ভোক্তার পকেট থেকে লোপাট করে নিয়েছে একটি সিন্ডিকেট, যা বিস্ময়কর। 

বলা হয় দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অথচ যখনই কোনো বিশেষ পণ্য রপ্তানি নিয়ে সমস্যা হয় তখনই তীব্র সংকট তৈরি হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে দেশে প্রতিবছর কী পরিমাণ পেঁয়াজের প্রয়োজন, তার কত অংশ দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে মেটানো সম্ভব এবং কত অংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে, এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য না থাকায় মজুদদাররা তার সুযোগ গ্রহণ করেন এবং সুযোগ পেলেই কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেন। ইতিপূর্বে বাণিজ্যমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রীসহ সরকারের আরও কয়েক মন্ত্রী সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা স্বীকার করেছেন। একদিকে সরকারের মন্ত্রীরা সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব স্বীকার করছেন, অথচ এর কোনো প্রতিকার-প্রতিবিধান হচ্ছে না কেন এ প্রশ্ন সবার।

এর আগে পেঁয়াজের উৎপাদন কম হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে কোনো তদারক করেনি। ব্যবসায়ীরা সময়মতো পেঁয়াজ আমদানি করছেন কি না এবং সঠিক দামে বাজারে বিক্রি করছেন কি না কিছুই নজরদারিতে রাখা হয়নি। ফলে এ বছর ভারত থেকে কম দামে আমদানি করা পেঁয়াজ দেশের বাজারে তিন গুণ দামে বিক্রির ঘটনাও ঘটেছে। 

বহুদিন ধরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশচুম্বী মূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষ অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এ অবস্থায় পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি তাদের কাছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এ ক্ষেত্রে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজি তো আছেই। কিন্তু তার চেয়েও বেশি দায়ী আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এ সব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে।

তাই মজুদদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও তদারকির পাশাপাশি প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া বাজার স্থতিশীল রাখা কঠিন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //