রাজনীতি আবার সংঘাতপ্রবণ: সব পক্ষকে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে

দেশের রাজনীতি আবার সংঘাতপ্রবণ হয়ে উঠেছে। দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের পক্ষে ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচির প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন দলের ‘শান্তি সমাবেশ’ ও বিরোধীদলীয় জোটের ‘শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ’ কেন্দ্র করে সহিংস হয়ে উঠেছে রাজনীতি। ঝরে গেছে চারটি মূল্যবান প্রাণ। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির বহু নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। এক দিনের হরতাল পালনের পর চলছে তিন দিনের অবরোধ। এই পরিস্থিতিতে জনমনে আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশ। 

এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে দেশের অর্থনীতি নাজুক অবস্থায়। ডলার-সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নিম্নমুখী অবস্থায় দেশের অর্থনীতি অনিশ্চয়তার মাঝে। এরকম বাস্তবতায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও সহিংসতা এবং হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি চলতে থাকলে অর্থনৈতিক সংকট আরও গভীরতর হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত, এই বিষয়টি রাজনীতিবিদদের বিবেচনায় আনতে হবে। নইলে নির্দিষ্ট বা বাঁধা আয়ের মানুষের জীবন হয়ে উঠবে আরও দুর্বিষহ, যা কারও কাম্য হতে পারে না।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিহাস নতুন নয়। নিকট অতীতে ২০০৬, ২০১৩-১৪ সালে নির্বাচনের আগেও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমরা দেখেছি এসব সহিংসতা শেষ পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সমাধান বয়ে আনতে পারেনি; বরং সংকট বেড়েছে। দিনের পর দিন হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে সহিংসতায় বহু প্রাণহানি হয়েছে। দেশজুড়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদহানির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। তাই সংঘাত, সহিংসতা, হরতাল কিংবা শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার নয়; আলাপ-আলোচনা, সংলাপই রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটানোর একমাত্র গ্রহণযোগ্য পথ। এজন্য অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

আমাদের দুই বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে দীর্ঘ কয়েক বছরের বৈরী সম্পর্ক এখনো চলমান, যা দেশকেই পিছিয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতার রাজনীতির পরিবর্তে পরস্পরের প্রতি সহনশীল না হয়, তাহলে দেশের উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। 

আমাদের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক সব পক্ষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ববোধের পরিচয় দেবে এবং পরস্পরের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আলোচনার টেবিলে সমাধানের চেষ্টা করবে। সংলাপে বসতে হবে সত্যিকারের আন্তরিকতা নিয়ে, যাতে এক পক্ষের যৌক্তিক প্রস্তাব অন্য পক্ষ মেনে নিতে প্রস্তুত থাকে। তা না হলে সংলাপ হবে অর্থহীন। 

সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক সহিংসতায় যাদের কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, তাদের শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন কোনোভাবেই বিরোধী রাজনীতিবিদদের দমন-পীড়নের হাতিয়ার হয়ে না ওঠে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //