দরিদ্রদের টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি প্রতিষ্ঠান পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ)। খোদ মন্ত্রণালয়ের তদন্তে সংস্থাটির অর্থ লোপাট ও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে এসেছে। 

দেশের হতদরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠানটি গঠন করেছিলেন। কিন্তু সেখানকার কিছু অসৎ কর্মকর্তার নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে সেই উদ্দেশ্যের প্রায় কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। দিন দিন কমেছে ঋণদান। বিপরীতে বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। দরিদ্র মানুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হলেও পকেট ভারী হয়েছে ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের। দরিদ্র মানুষের টাকা তাদের মধ্যে বিতরণ না করে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে নিজেদের পকেটে ঢুকিয়েছেন তারা। আবার মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে নামসর্বস্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ করা হয়েছে গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত শত শত কোটি টাকা। ফলে লাভ দূরের কথা, বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

প্রতিষ্ঠানটির অপশাসন, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সংবাদ প্রকাশ হলেও অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এর আগে পিডিবিএফের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় ৪ হাজারের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে সে সময় তারা দুটি শ্বেতপত্রও প্রকাশ করেছিল। কিন্তু তারপরও উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করতে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময়ে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্তে বিস্ময়কর অনেক ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা উঠে আসে। মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করলেও তা কার্যকর হয়নি। কেবল দুর্নীতিগ্রস্ত এক ভারপ্রাপ্ত এমডি ছাড়া কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির পাওয়া অনিয়মের মধ্যে রয়েছে- প্রতিষ্ঠানের অর্থ সরকারি ব্যাংকের পরিবর্তে বেসরকারি ব্যাংকে এফডিআর করে কমিশন আদায়, শীর্ষ কর্মকর্তার অতিরিক্ত বেতন-ভাতা নেওয়া, টিআর-কাবিখা প্রকল্পের কাজে কমিশন আদায়, ভুয়া কোম্পানিকে কাজ দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার নামে সদস্যদের অর্থ আত্মসাৎ, কর্মীদের জীবন বীমা করিয়ে দিয়ে বীমা কোম্পানির কাছ থেকে কমিশন নেওয়া, বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, অবৈধভাবে পদোন্নতি-বদলি বাণিজ্য প্রভৃতি। এমন প্রেক্ষাপটে মন্ত্রণালয় থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আর্থিক লুটপাটে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। 

মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে এই দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। আমরা আশা করি দরিদ্রদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথের বাধা এসব দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। যে মহৎ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা পূরণের পথে বাধাগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //