এমএলএম ব্যবসার নামে অর্থ আত্মসাৎ, কঠোর নজরদারি প্রয়োজন

সম্প্রতি এমএলএম ব্যবসার নামে প্রায় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ (এমটিএফই)। এমএলএম কোম্পানির এই প্রতারণায় জড়িয়ে সর্বস্বান্ত দেশের লক্ষাধিক যুবক। এমটিএফই দাবি করেছিল, তারা কানাডায় নিবন্ধিত সংস্থা। ব্যবসা করত অ্যাপের মাধ্যমে।

সহজ পথে অর্থ আয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে এই অ্যাপটি সম্প্রতি অবিশ্বাস্য রকমের জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। কমপক্ষে ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করলে দিনশেষে পাঁচ হাজার টাকা লাভ হবে- এমন কল্পিত মুনাফার লোভে অসংখ্য মানুষ বিনিয়োগ করেছিল এই কোম্পানিতে। যদিও এখন পর্যন্ত কত মানুষ এই প্রতারণার শিকার হয়ে তাদের টাকা হারিয়েছেন, তার হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে কেউ কেউ বলছেন, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে যে পরিমাণ অর্থ গায়েব করেছে, এর চেয়ে বেশি টাকা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে লুট করেছে অ্যাপভিত্তিক অনলাইন ট্রেডিং গ্রুপ মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ (এমটিএফই)।

আমাদের দেশে ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রণীত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম (নিয়ন্ত্রণ) আইনে এমএলএম পদ্ধতিতে ব্যবসার জন্য লাইসেন্স নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করার পাশাপাশি পিরামিডসদৃশ বিপণন কার্যক্রম চালানো, সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ মোড়কজাত না করে পণ্য বিক্রি, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পণ্য বা সেবা বিক্রি না করা, পণ্য বা সেবার অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ, নিম্নমানের পণ্য বা সেবা বিক্রি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অথচ আরও সূক্ষ্ম পদ্ধতিতে তারা সেই কাজটি করছে। ২০২১ সালের পর থেকে এমটিএফই বাংলাদেশে ভার্চুয়ালি কার্যক্রম চালালেও তা কেন প্রশাসনের নজরে এলো না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ দেশের বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ মানুষকে সম্পৃক্ত করে, পাঁচ শতাধিক দপ্তর খুলে, সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে গেছে তারা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি লক্ষণীয়।

এর আগে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘ডেসটিনি’ ও ‘যুবক’ একটি প্রতীক হয়ে উঠেছিল। পরে ইভ্যালির মতো ই-কমার্স এবং এখন এমটিএফইর মতো ক্রিপটোকারেন্সির (ভার্চুয়াল মুদ্রা) মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের মোহে পড়েছেন যুবকেরা। এমটিএফইর মতো অন্তত এক হাজার প্রতিষ্ঠান গোপনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। 

এ ধরনের প্রতারণা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। এমএলএম ব্যবসা পরিচালনাকারী সব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। আমরা আশা করি বিটিআরসি, বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট নিশ্চয়ই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন এ ধরনের প্রতারণামূলক ব্যবসা খুলে বসতে না পারে, সে ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ এভাবে আত্মসাতের ঘটনা চলতে দেওয়া যায় না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //