সিটি করপোরেশনকে জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব নিতে হবে

স্বাভাবিকভাবেই শ্রাবণে বর্ষা আসার কথা। আর সকলেই জানে, কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরী দরিয়ায় রূপ নেয়। হয়েছেও তাই। এবারও যানবাহন অচল হয়ে যাত্রীদের অকূল পাথার তথা সড়ক নামক ময়লা স্রোতধারায় ডুবিয়ে দিচ্ছে। অনেকের ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকছে, আর অর্ধেক পানিতে ডোবা ঘরে নিম্নবিত্ত নগরবাসী মানবেতর জীবন যাপন করছে। বর্ষায় এই ধরনের জীবন নগরবাসীর নিয়তি হয়ে উঠছে। নগরপিতারা এই মৌসুমে ভোগান্তি ছাড়া শহর পরিচালনায় অক্ষম, তা যেন চিরায়ত দৃশ্যে পরিণত হচ্ছে। এমনকি এই জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতে জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে কারও কারও।

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের পুরনো সমস্যা। সর্বশেষ ৪ ও ৫ আগস্ট দুই দফায় অন্তত ৫০টি এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় পানি জমে ছিল ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত। এবারও ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতায় রাস্তায় ডুবে প্রাণ গেছে নিপা পালিত নামের এক তরুণীর। জলাবদ্ধতার এ সমস্যা নিরসন না হওয়ার জন্য একসময় অর্থ বরাদ্দকে অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করা হতো। কিন্তু এখন সে সমস্যা নেই। কিন্তু বিপুল টাকা খরচ হলেও নগরবাসী সুফল পাচ্ছেন না। গত ছয় বছরে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা খরচ হলেও চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন তো হয়ইনি; বরং প্রকট হয়েছে। এখন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আবার ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করপোরেশনকে জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব দেওয়া হলেও রাজধানীতে এই কয়দিনের ভারী বৃষ্টিতে কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার ভোগান্তি তৈরি হয়েছে।

আমরা জানি, জলাবদ্ধতা প্রাকৃতিক বিষয় নয়। তাই এর দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে মানুষের ওপর বর্তায়; স্পষ্ট করে বললে, নগর প্রশাসক ও ক্ষমতাবানদের ওপর। জেনে-শুনে তারা এমন সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকেন, যার প্রতিক্রিয়ায় নতুন ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। নিঃসন্দেহে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছিল সবচেয়ে প্রশস্ত ও খাল-নালা-ছড়া এবং লেক ও জলাশয়ের শহর। আজ নগরায়ণের বলি হয়েছে এগুলো। অন্যদিকে এই দুটি শহরেই উন্নয়ন কাজের চাপ ছিল সবচাইতে বেশি। কিন্তু তাতে জনগণের জীবনমানের তেমন কোনো উন্নতি চোখে পড়েনি, বরং বর্ষায় তাদের যাপিত জীবন তছনছ হয়ে যাচ্ছে।

পৃথিবীর বহু দেশে নগরায়ণের জন্য পানি ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু নিদারুণ সত্যি হলো, আমাদের দেশে সেটাই থাকে উপেক্ষিত। আর সেই উপেক্ষার ফল ভোগ করতে হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় নগরের অধিবাসীদের। বিশেষ করে বর্ষা আসলে তাদের এই মহাভোগান্তি নিরসনে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। দায়িত্ব বদলে, প্রচুর পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়েও পরিস্থিতি ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’ থেকে যাচ্ছে। আমরা বর্ষায় এই ভোগান্তির নিরসন চাই।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //