আমাদের চামড়া শিল্পের কৃত্রিম সংকট, সম্ভাবনা ও বৈদেশিক মুদ্রা

প্রতিবছর ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কোরবানিকৃত পশুর চামড়া সংগ্রহ, বিপণন ও বাজারজাতকরন নিয়ে একটি অসাধু সিন্ডিকেট কেমন যেন একটা বন্য খেলায় মেতে ওঠে। এসময় সরকারের নানামূখী দায়িত্বশীল ও অংশগ্রহণমূলক পদক্ষেপের আওতায় চামড়া সংগ্রহের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তদারকির পরেও একটি অসাধু চক্র এই শিল্পকে অস্থির করে তুলতে অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। আর এক্ষেত্রে কৃত্রিম সংকট তৈরিতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে বেশ সিদ্ধ হস্তে যেন দায়িত্ব পালনে পিছপা হয় না।

দেশের প্রধান রপ্তানি যোগ্য পন্যটির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনাকে যেমন হতাশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে অনুরূপ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে এ শিল্পকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে থাকে। সরকারকে সহযোগিতার বদলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ শিল্পের বাজারকে করে তুলছে অস্থির। যা কিনা দীর্ঘ মেয়াদি দেশীয় অর্থনীতিতে ফেলছে মারাত্মক প্রভাব। 

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা অজুহাতে এ খাতের উদ্যোক্তারা শিল্পটিকে ধ্বসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তৈরি পোশাকের পর বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিযোগ্য পণ্য চামড়া। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই দেশের চামড়ার বাজারে বিরাজ করছে ব্যাপক অস্থিরতা। লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া বিক্রি হয় মাত্র তিনশ’ টাকায়। এমনকি ন্যায্য দাম না পেয়ে গত বছর কোরবানির পশুর চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনাও রয়েছে দেশজুড়ে। 

এবারে আবার লবণ সংকটকে অজুহাত দেখিয়ে চামড়া নায্য দামে কিনতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা গেছে অপারগতা। 

আমরা অতীতে দেখেছি অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী পাড়া-মহল্লা থেকে চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করতে এনে ক্রেতা না পেয়ে রাস্তায় ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, লবণ দিতে দেরি করায় চামড়া পচে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

বিভিন্ন সূত্রমতে পাওয়া যায়, দেশীয় চামড়া শিল্পের কাঁচামাল এই চামড়ার বড় একটি জোগান আসে কোরবানির ঈদকে ঘিরে। ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে বলেন, ঈদুল আজহায় চাহিদার ৮০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। অথচ এই কোরবানির সময় দেখা যায় যথাযথ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত না করা এবং সময় মতো না কেনার কারণে প্রচুর চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। এর পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে ক্ষুদ্র মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের।

তবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, গত কয়েক বছর ধরে সৃষ্ট এই সংকট এ বছরও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। ব্যবসায়ী, মাদ্রাসা, মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও সর্বোপরি জনসাধারণের তথ্যমতে এমন চিত্রই ওঠে এসছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। 

মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে চামড়ার অবদান এখন মাত্র শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ। এছাড়াও এ খাতে দক্ষ শ্রমিকের অপ্রতুলতা, নিরাপদ কর্মপরিবেশের অভাব, শ্রমিকের ন্যায্যমজুরি না দেওয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতা। 

আর তাই চামড়া নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে সংশ্লিষ্টদের। 

সরকারের পক্ষ থেকে এই শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে গত পুরো বছরকে চামড়া শিল্পের জন্য উন্নয়নের বছর হিসেবে ঘোষণা করলেও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার অভাবে এর কোনও পরিবর্তন চোখে পড়ার মত হয়নি। 

বিভিন্ন সূত্রমতে প্রাপ্ত তথ্যে পাওয়া যায়, কোরবানি ঈদের মৌসুম চলে এলেই সবাই ব্যস্ত থাকে পশু কেনা নিয়ে। আর ঈদের দিন হতে তৃতীয় দিন পর্যন্ত চলে পশু জবাইয়ের ব্যস্ততা। আর সঙ্গে থাকে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের চিন্তা। এবারে নতুন করে যুক্ত হয়েছে চামড়ায় লবণ মাখানোর বিষয়টি।

এদিকে সরকার দরও নির্ধারণ করে দিয়েছে লবণযুক্ত চামড়ার জন্য। অথচ একটি চামড়ায় ৩০০ টাকার লবণ মাখানোর পর কোরবানিদাতাকে সেই চামড়া বিক্রি করতে হয় কিনা মাত্র ১৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। 

ফলে কোরবানিদাতা পশুটির চামড়ায় লবণ মাখাতে নিরুৎসাহিত হয়ে থাকছে। অনুরূপ নিরুৎসাহিত হন পাড়া-মহল্লার মসজিদ-মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তারাও দান হিসেবে পাওয়া পশুর চামড়ায় লবণ মাখানোর দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে থাকেন। আর এখানেই ঘটে বিপত্তি। পাশাপাশি উপযুক্ত দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের আছে হাজারো অভিযোগ। কখনও দেশীয় আবার কখনও আন্তর্জাতিক ইস্যকে সামনে টেনে অজুহাত দেখিয়ে থাকে।

এদিকে বিভিন্ন পশু কোরবানিদাতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পশুর চামড়া সঠিকভাবে ছাড়ানোসহ উপযুক্ত দাম মিলবে কিনা কিংবা বিক্রিতে বেশি দেরি হলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে কিনা—এমন সব চিন্তা প্রায় সবার কাছেই ঘুরপাক খায়। অন্যদিকে চামড়া দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ ও রফতানি পণ্য। তাই ভালোভাবে চামড়া সংরক্ষণে সবসময় গুরুত্ব দেওয়া হয় বলেও তাদের ভাষ্য। 

এর আগে লবণের অভাবে পচে যাওয়ায় দেশের কোনও কোনও স্থানে নদীতে চামড়া ফেলে দিতে হয়েছিল। 

এবারে অবশ্য সরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলেছেন, সেই সুযোগ দেওয়া হবে না। দেশে যথেষ্ট লবণ রয়েছে। একদিনে প্রচুর লবণ লাগে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কারসাজি করে লবণের দাম বাড়িয়ে দেয় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এবার তা হতে দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাও তৎপর ছিল বলে জানিয়েছেন তারা। 

জানা গেছে, কোরবানিতে চট্টগ্রামের আড়তগুলোতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য থাকলেও চাহিদা মাফিক চামড়া আসেনি। কোরবানির যেসব চামড়া এসেছে তার বেশিরভাগই আড়তদাররা কিনেছেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। গুদামগুলোতে বড় আকারের চামড়া ৫০০ টাকায় কিনলেও এ টাকার অর্ধেকও পাননি কোরবানিদাতারা।

এমনকি নানা জটিলতায় এ খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত শ্রমিকের সংখ্যাও কমে আসছে। আর্থিক সংকট, স্বাস্থ্য ঝুঁকি, ন্যায্য পাওনা না পাওয়া, আবাসন সংকটের মধ্যেই কাজ করছেন চামড়া শিল্পের নিয়োজিত শ্রমিকেরা। আর তাই ক্রমেই তারা উৎশাহ হারিয়ে ফেলছেন ক্রমশ। 

পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রম জরিপের তথ্যে পাওয়া যায়, ২০১৬ সালে এ খাতে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার, যা মোট কর্মসংস্থানের শূন্য দশমিক ২২ শতাংশ।

আর রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ খাতে রফতানি আয় ছিল ১১২ কোটি ডলার। ২০১৬-১৭-তে তা বেড়ে ১২৩ কোটি ডলার হয়। তবে পরের দুই অর্থবছরে চামড়া শিল্পের রফতানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নেমে আসে ১০৮ কোটি ডলারে। আর গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা আরও কমে দাঁড়ায় ১০২ কোটি ডলার। 

পরে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা আরও কমে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারে নেমে আসে। অন্যদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরের এ খাত থেকে আয় ৯৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। 

গত এক বছরে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৩৬ শতাংশের মতো। 

জানা গেছে, বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রধান বাজার ইউরোপের দেশগুলোয় করোনা প্রাদুর্ভাব কমে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করায় চাহিদা বেড়েছে। ফলে নতুন করে রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। কিন্তু এটি কিন্ত একেবারেই মানতে নারাজ দেশীয় চামড়া খাতের উদ্যোক্তারা।

আর এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত ভিন্ন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সারোয়ার আলমের মন্তব্যে পাওয়া যায়, চামড়া খাতের উন্নয়নে দরকার একটি শিক্ষিত উদ্যোক্তা শ্রেণি। পাশাপাশি দরকার সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা,নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন। এছাড়াও লাগবে দক্ষ পর্যাপ্ত শ্রমিক। আর এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা পাওয়া গেলে এ খাতের উন্নয়ন খুব বেশি দূরে নয়।

আর সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলছেন, চামড়া বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাত হওয়ায় এ খাতের উন্নয়নে সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। গত বছরের তুলনায় কাঁচা চামড়ার দাম বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন দেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে বিধায় যদি আমাদের সক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারি তবে বছরে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব।

এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত নানা তথ্য হতে সারাদেশব্যাপী এ খাতের বিষয়েও দেখা গেছে অনাগ্রহ। এমন চিত্র দেখা গেছে নীলফামারীতে। পুঁজির অভাবে কোরবানির চামড়া কেনায় তেমন আগ্রহ ছিল না নীলফামারীর সৈয়দপুরে চামড়া ব্যবসায়ীদের। অথচ ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে তাদের তিন কোটি টাকার মতো বকেয়া পড়ে আছে। বিগত ৫ বছর ধরে এ বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে না। ফলে এখানে চামড়া সংগ্রহে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।

উত্তর জনপদে চামড়া ব্যবসার অন্যতম প্রধান শহর সৈয়দপুর। এখানে একটি এলাকার নাম চামড়া গুদাম। তৎকালীন পাকিস্তান আমলে এখানে চামড়া বেচাকেনা করতে আসতেন পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও রংপুরের ব্যবসায়ীরা।

ঢাকার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এখানকার চামড়া রেলপথে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও পাঠানো হতো তখন। কিন্তু  চামড়ার নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়াসহ নানাবিধ কারণে দিনদিন চামড়া ব্যবসায়ীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে অত্র অঞ্চলে। এমনকি বন্ধ হয়ে পড়ে চামড়ার গুদামগুলোও।

চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সূত্র মতে, বিগত এক যুগ আগেও সৈয়দপুর থেকে কোরবানির ঈদে প্রায় ১০ কোটি টাকার চামড়া যেত ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে। কিন্তু গত ৬-৭ বছর ধরে দরপতনের ফলে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা চরম লোকসান গুনছেন।

তাদের অভিযোগ, তাদের পথে বসিয়ে দিয়েছেন ঢাকার ট্যানারি মালিকরা। করোনা শুরুর আগের বছর থেকে ঢাকার ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনে ঠিকমতো টাকা পরিশোধ না করায় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করলেও সব পুঁজি আটকা রয়েছে ট্যানারি মালিকদের কাছে। বর্তমানে হাতেগোনা ১৩-১৪ জন চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছেন এখানে।

সৈয়দপুর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মো. আজিজুল হক গণমাধ্যমকে  বলেন, গত ৪-৫ বছর ধরে ঢাকার ট্যানারি মালিকরা আমাদের বকেয়া পরিশোধ করছেন না। ফলে আমরা ব্যাংক ঋণের টাকাও পরিশোধ করতে পারছি না; ব্যাংকগুলোও আর নতুন করে ঋণ দিতে পারছেন না। এতে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শুধু পোস্তার আড়তগুলোতে ৭০ হাজার চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ ঈদের দিন পূরণ করেছে। 

গত বছর পোস্তায় ১ লাখ ৪০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করে লবণজাত করে রাখ ছিল। 

তার মতে পোস্তায় আড়তগুলোর চামড়া লবণজাতকরণের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফলে বেশি মাত্রায় লবণজাত করলে চামড়া নষ্ট হওয়ার শংকা থাকে। 

এছাড়াও রাজধানীর বেড়িবাঁধ, কৃষি মার্কেট, হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগর এলাকা, জাজিরাসহ বিভিন্ন জায়গা হতে চামড়া সংগ্রহ করে লবণজাত করেছেন বলেও জানান তিনি। 

অন্যদিকে ঢাকার বাইরের লবণ দেওয়া চামড়া সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক, এ বছর কোরবানির সাত দিন পর ঢাকার বাইরের কোরবানির পশুর চামড়া রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারবে বলেও জানান আফতাব। আর ঢকায় সংরক্ষিত চামড়া ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ট্যানারিগুলোতে চলে যাবে।

আর দামের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার লবণ দেওয়া চামড়ার যে দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে অনুসারেই আমাদের ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া কিনেছেন। কারণ, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই ট্যানারির মালিকেরা চামড়া কিনবেন। ফলে আড়তদারদের পক্ষে দাম কমিয়ে চামড়া কেনার সুযোগ নেই।

এসময় মৌসুমি ব্যবসায়ী  ও কোরবানিদাতাদের কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, লবণজাতের জন্য আড়তদার ছাড়াও ট্যানারির মালিক, ব্যাপারী, ফড়িয়া ও পাইকারেরা কাঁচা চামড়া কেনেন। ফলে বাজারে একধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে। এ কারণে কেউ কাউকে ঠকিয়ে চামড়া কিনবে, এমন সুযোগ কম। সবারই বাজারে দাম যাচাইয়ের সুযোগ রয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৭-৮টি দাম নেন, এরপর তা যাচাই করে চামড়া বিক্রি করেন। ফলে কারও লোকসানে পড়ার আশঙ্কা কম। 

মৌসুমি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তাদের বেশির ভাগই লাভে চামড়া বিক্রি করে চলে গেছেন। কিন্তু কারও লবণজাত চামড়ার ১০ শতাংশ নষ্ট হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। আর ১৫ শতাংশের বেশি চামড়া নষ্ট হলে পুরো লোকসানে থাকব আমরা। 

এসময় ট্যানারির মালিকদের কাছে বকেয়া টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তার উত্তর ছিল, কেউ টাকা ফেরত দিয়েছেন, কেউ আংশিক দিয়েছেন, আবার কেউ ফেরত দেননি। সবকিছু মিলিয়ে আমরা ব্যবসাটা চালিয়ে নিচ্ছি। অনেকেই এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। আগে পোস্তায় প্রায় আড়াই শ আড়ত ছিল। এখন সেখানে মাত্র ১৩৪ জন এই ব্যবসায় যুক্ত রয়েছেন।

বাসসের তথ্যমতে দেখা যায়, এবারের চামড়া সংরক্ষণের বিষয়ে সরকারের পক্ষ হতে প্রতি জেলায় জেলা প্রশাসন বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল। আর জেলা প্রশাসনকে এ কাজে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সহযোগিতা করেছে। ঈদুল আযহার কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার গুনগত মান নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ কোরবানির পশুর হাটে বিনামূল্যে ১০ টন লবণও বিতরণ করা হয়েছিল সরকারের পক্ষ হতে। আর এ লবন দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের ওপর  বিসিকের পক্ষ থেকে গোপালগঞ্জ জেলাসহ সারাদেশে কোরাবানির পশুর হাটে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হয় সরকারের পক্ষ হতে। এছাড়া সঠিক নিয়মে চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণে বিতরণ করা হয় শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত  সচেতনতা মূলক লিফলেটও।

এটা স্পষ্টত যে সরকারের পক্ষ হতে অনেকরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল পশু হতে চামড়া ছাড়ানো থেকে শুরু করে সংগ্রহ, সংরক্ষণের জন্য কাঁচা লবণ সরবরাহসহ জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণের মধ্যদিয়ে। দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। লবণের সংকট যেন তৈরি করতে না পারে সেজন্যও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল সরকার। কিন্ত এতকিছুর পরেও একটি অসাধু সিন্ডিকেট এই অন্যতম প্রধান শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত ও হুমকির মুখে ফেলতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অস্থিরতার বীজ বোপণ করে থাকে প্রতিবছর। আর এই বিষয়ে আরও বেশি তদারকি ও পদক্ষেপের অনুরোধ চামড়া শিলেপ্র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। আর এই দাবি প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে সকল স্তরের ব্যবসায়ীদের। 

আমরা আশা রাখতে পারি, ভবিষ্যতে এই শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের পথকে আরও সুগম করতে সচেষ্ট হবেন সংশ্লিষ্ট সবাই। কারণ ভুলে গেলে চলবে না রপ্তানিজাত এ পণ্যের সঠিক কদর না বাড়ালে দেশ যেমন বঞ্চিত হবে এর সুফলতা  থেকে পাশাপাশি এই শিল্পকে ঘিরে যাদের রুটি-রুজি সেসব ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তরাও কিন্ত আরও সংকটের মধ্যেই পতিত হবেন, কারণ এ শিল্পের ধ্বংস বা সৃষ্টি সম্পুর্ণ আপনাদের হাতেই। আপনাদের সহযোগিতাতেই কেবল গৌরবজ্জল এক রপ্তানিযোগ্য পণ্য হয়ে চামড়া শিল্প দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //