পাঁচ গুণ বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী

বিশেষ সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ প্রয়োজন

দেশে গত বছরের তুলনায় এ বছর পাঁচ গুণ বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে দেশবাসীকে এডিস মশাবাহিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সম্পর্কে তিনি যে তথ্য দিয়েছেন, তা উদ্বেগজনক।

গত বছরের প্রথম ৫ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩৫২ জন এবং তাদের মধ্যে কেউ মারা যাননি। অথচ ২০২৩ সালে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৬২০ জন এবং মারা গেছেন ১৩ জন। সেই হিসাবে, বছরের প্রথম ৫ মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ৩৬০ শতাংশ। 

এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ জানুয়ারি থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল। এডিস মশার প্রজনন মৌসুম শুরুর আগেই এবার রাজধানীতে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মে মাসে বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার ঘনত্ব বেড়েছে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা ১২ জনের পর্যন্ত রক্ত খেতে পারে। এর ফলে জ্যামিতিক হারে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। 

গত কয়েক বছরে ডেঙ্গু সংক্রমণ একটি ধারাবাহিক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর এ নিয়ে দৃষ্টিগ্রাহ্য তৎপরতা এবং অগ্রগতি নেই। বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন, মশক নিধনে সাময়িক পদক্ষেপে সুফল পাওয়া যায় না। তাই বছরব্যাপী বিশেষ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন কী দায়িত্ব পালন করেছে, তা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়া ডেঙ্গু রোগীদের দেখলেই বোঝা যায়।

একসময় ডেঙ্গু ছিল বড় শহরকেন্দ্রিক রোগ। কিন্তু এটি এখন প্রায় সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নরসিংদী, বরিশাল, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, লক্ষ্মীপুর, কিশোরগঞ্জ, খাগড়াছড়ি ও সাতক্ষীরায়ও সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। এডিস মশার আচরণেও পরিবর্তন আসছে। এমন অনেক জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে বৃষ্টির জমে থাকা পানি নেই। যেমন বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেসমেন্ট, ওয়াসার মিটার বাক্স এবং বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি রয়েছে। কাজেই এ বিষয়ক গবেষণায় আরও গুরুত্ব বাড়াতে হবে।

সব ধরনের মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন কর্মীদের দিয়ে রোগীদের শনাক্ত করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় এডিস মশার প্রজননক্ষেত্রগুলো ধ্বংস এবং নিয়মিত মশা মারার ওষুধ সরবরাহ করতে হবে। ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত এলাকায় মশা মারার কাজ জোরদার করতে হবে। বহুতল ভবনগুলোর ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে ডেঙ্গু মোকাবিলায় তৎপর হতে হবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে গণসচেতনতামূলক কার্যক্রমও।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //