বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কোন্নয়নে অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সুরাহা জরুরি

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান সরাসরি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ, শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভান্ডারি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম দিন রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে দ্বিতীয় দিন দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও আটটি যৌথ প্রকল্প উদ্বোধন হয়েছে। মনে রাখা দরকার, ইতিমধ্যে দুই দেশের মধ্যকার স্থলসীমান্ত ও সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি হয়েছে। ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট প্রশ্নেও ভারতের প্রত্যাশা পূরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। 

কিন্তু বাংলাদেশের বহুল প্রত্যাশিত পানিবণ্টন ইস্যুটির এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। বলা বাহুল্য দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সুরাহা না হলে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রগুলো কাক্ষিত সাড়া ফেলতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ ভারতের নীতিনির্ধারকরা যদিও বারবার তিস্তা ইস্যু সুরাহার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আশাবাদী হতে পারার কোনো অবকাশ মেলেনি। বরং অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যোগ হয়েছে নাগরিকপুঞ্জি নিবন্ধন ইস্যু ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসকারী বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীকে ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন সময়ে তাদের বাংলাদেশে পাঠানোর হুমকি দিয়ে আসছেন। যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। 

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যাতে স্থিতিশীল, নিরাপদ ও উন্নয়নমুখী হয়, সেজন্য বাংলাদেশ বরাবরই দুই প্রতিবেশীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে; কিন্তু বারবার আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। অথচ ভারতের সাথে অন্য কোনো দেশের সীমান্তেই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড হয় না। 

এর সাথে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতির মতো সমস্যা। এই ঘাটতির পরিমাণ এখন হাজার হাজার কোটি টাকা। ভারতীয় শুল্কনীতির কারণেই বাংলাদেশি পণ্য ভারতে প্রবেশ করতে পারছে না। আমরা এখন অমীমাংসিত ও অস্বস্তিকর এসব ইস্যুতে ভারতের সর্বোচ্চ সদিচ্ছা দেখার অপেক্ষায় আছি। 

গত বছর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার ভার্চুয়াল বৈঠকেও মোদি স্বীকার করেছিলেন, তার নেইবারহুড ফাস্ট পলিসির অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি নিশ্চয়ই এটা উপলব্ধি করবেন যে, দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা রয়েছে তার সমাধান জরুরি। বারবার যদি কেবল আশ্বাস দেয়া হয় এবং সমস্যার কোনো সমাধান না হয়, তা হলে দুই দেশের বন্ধুত্বের জন্য তা কোনো ভালো খবর নয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //