রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বায়ুদূষণ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। ২০১৮-১৯ সালে বাংলাদেশ দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় শীর্ষে ছিল। বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশে যৎসামান্য উদ্যোগ গৃহীত হলেও, তা এ গুরুতর নাগরিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
বায়ুদূষণ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকরই নয়, বরং বলা যায় এক নীরব ঘাতক। যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের হিসাব মতে, বিশ্বে বায়ুদূষণজনিত রোগে বছরে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বায়ুর মান ও মানুষের আয়ুর মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এ গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বায়ুমান দ্রুতগতিতে কমছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে শীর্ষ তালিকায়।
গত বছর প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস’ প্রকল্পের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৬ বছর উল্লেখ করা হয়। দূষিত বায়ুর কারণে বাড়তির দিকে থাকা গড় আয়ু নেমে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান লরেন্স বের্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি বলছে, দূষিত বায়ুর কারণে নিউমোনিয়া, মাথাব্যথা, অ্যাজমা ও অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। বায়ুদূষণের সাথে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবি করা হচ্ছে।
অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় শীত মৌসুমে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ে। বিগত কয়েক বছরে এ দূষণের মাত্রা ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ার অন্যতম কারণ, দেশে বেশকিছু বৃহৎ র্নিমাণ প্রকল্প চলমান। বছরজুড়ে অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ, কারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া এর জন্য কম দায়ী নয়।
বিশ্বব্যাংক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য নগরীর আশপাশে গড়ে ওঠা ইটভাটাকে সর্বাধিক দায়ী করা হয়েছে। তাই দূষণমুক্ত বসবাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বায়ুদূষণ রোধে জরুরি কিছু পদক্ষেপ প্রয়োজন। বায়ুদূষণ রোধে অবিলম্বে ইটভাটাগুলোকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা, অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ নিয়ন্ত্রণ, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন নিষিদ্ধ, নির্মাণকাজ চলাকালে নিয়মিত পানি ছিটানো, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখার ব্যবস্থা, কারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনতে হবে।
বায়ুদূষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে পরিবেশ অধিদফতর, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সমন্বিত পরিকল্পনা ও পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার আগেই তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh