উত্তাপহীন উপ-নির্বাচন

অতিমারির মধ্যে (২১ মার্চ থেকে ২০ জুলাই, ২০২০ পর্যন্ত) কোনো ধরনের ভোট গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। ফলে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশনসহ জাতীয় সংসদের কয়েকটি উপনির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। নির্দিষ্ট মেয়াদে উপ-নির্বাচন করতে না পারার কারণে পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিষয়ে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।

জাতীয় সংসদের শূন্য আসনে প্রথম ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যেও নির্বাচন করা সম্ভব না হলে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতির কাছে পরামর্শ চাইতে পারে।

নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেয়া সময় ২০ জুলাইয়ের পর আবার শুরু হয়েছে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন কার্যক্রম। অতিমারির মধ্যেই তিনটি আসনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে; কিন্তু এসব নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত কম। ভোটারের উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে প্রধান নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য হলো, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবং উপ-নির্বাচনে মানুষের আগ্রহ কম। তবে ভোটারের উপস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশন সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য অংশত সত্য। কারণ ইতিহাস বলে, সব ধরনের নির্বাচনের প্রতিই বাংলাদেশের মানুষের প্রবল আগ্রহ রয়েছে। উৎসবের মতো আনন্দ নিয়েই মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনের প্রস্তুতি থেকে ফল ঘোষণা পর্যন্ত তারা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে; কিন্তু লক্ষণীয় হলো, বিগত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনের প্রতি আগ্রহের মাত্রা কমে আসছে। সাম্প্রতিককালের উপনির্বাচনগুলোর উত্তাপহীনতা তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। নির্বাচনের প্রতি মানুষের অনাগ্রহের কারণ যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক, দেশের গণতন্ত্রের জন্য তা বিপজ্জনক।

ভোট দানে মানুষের অনাগ্রহের অন্যতম আরেকটি কারণ হতে পারে, প্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন নির্বাচন। বিজয়ী ঘোষিত প্রার্থীর সঙ্গে পরাজিত প্রার্থীদের ভোটের ব্যবধান এত বিস্তর, যা অনেকক্ষেত্রেই নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মধ্যে বিস্ময়ের উদ্রেক করে। তাই গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থেই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা। অন্যথায় নির্বাচনের প্রতি মানুষের অনাগ্রহ আরও বেশি হলে তা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষার অনুকূল হবে না।

নির্বাচনের প্রতি মানুষের আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন কমিশন দেশের সব রাজনৈতিক দল, দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা, বিশেষজ্ঞ মহলকে নিয়ে সংলাপের আয়োজন করতে পারেন। নিরপেক্ষভাবে তাদের বক্তব্য বিচার-বিশ্লেষণ করে নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা ধরে রাখাই হবে এ মুহূর্তে তাদের অন্যতম কর্তব্য।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //