সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি

সাংবাদিকতা পৃথিবীর ঝুঁকিপূর্ণ পেশাগুলোর মধ্যে অন্যতম। পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার পরিধি যত বেড়েছে, তাল মিলিয়ে ঝুঁকির মাত্রাও বিস্তৃত হয়েছে। পত্র-পত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশনের যুগ পেরিয়ে সাংবাদিকতা সম্প্রসারিত হয়েছে অন্তর্জাল অবধি। কেবল মাধ্যমগত সম্প্রসারণ নয়, বিষয় বৈচিত্র্যের দিক থেকেও এ পেশা হয়ে উঠেছে বহুমাত্রিক।

যুদ্ধ থেকে শুরু করে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, সংঘাত-সংঘর্ষ-সহিংসতার মধ্যেও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত কর্মীদের। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় তাদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে নানা রকমের ঝুঁকির। এসব মূলত শারীরিক, স্বাস্থ্যগত, আইনি ও চাকরির নিরাপত্তার ঝুঁকি।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য মতে, ২০১৯ সালে ১৪২ জন সাংবাদিক, হামলা, মামলা বা গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন। আর্টিকেল ১৯-এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩১টি মামলায় ৫৩ সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। এই আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৩ সাংবাদিককে। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে বলেছে, সম্প্রতি কভিড-১৯ মহামারির সময় বাংলাদেশে সরকারের সমালোচনাকারীদের গ্রেফতারের হার বেড়ে গেছে।

করোনাকালে সর্বাধিক ঝুঁকি নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন সাংবাদিকরা। মফস্বলের সাংবাদিকতায় করোনার প্রভাব পড়েছে আরো মারাত্মক। বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিস্টস নেটওয়ার্কের (বিআইজেএন) এক জরিপ প্রতিবেদনে জানা যায়, করোনাকালে দেশের উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে প্রকাশিত ৪৫৬টি স্থানীয় সংবাদপত্রের মধ্যে ২৭৫টি (৬০.৩১ শতাংশ) সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

সংবাদকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ ‘আমাদের গণমাধ্যম আমাদের অধিকারে’র হিসাব মতে, ২২ জুলাই পর্যন্ত চার হাজারের মতো সংবাদকর্মী চাকরি হারানোসহ নানা ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এর মধ্যে ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ছয়শ’ সাংবাদিক ও সংবাদকর্মী। 

তাদের হিসাবে, এ পর্যন্ত মোট কভিড-১৯ আক্রান্ত সাংবাদিক ৬৪৪ জন। ঢাকায় ৪৫৪ ও ঢাকার বাইরে ১৯০ জন। কভিড-১৯ শনাক্ত ও এ রোগের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২৫ সাংবাদিক। তাদের মধ্যে ঢাকায় ১৩ ও ঢাকার বাইরে ১২ জন।

একটি দেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বিকাশের স্বার্থেই সংবাদমাধ্যমের এহেন বেহাল প্রত্যাশিত নয়। সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি একদিকে যেমন গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভিতকে দুর্বল করে, তেমনি সরকারের ভাবমূর্তিকেও করে প্রশ্নবিদ্ধ। এসব দিক বিবেচনায় রেখে সরকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বার্থ সংরক্ষণকারী সব মহল সংবাদকর্মীদের জন্য নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত ও পেশাদার সংবাদমাধ্যম গড়ে তোলায় সর্বাত্মক উদ্যোগী হওয়া আবশ্যক।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //