উত্তাল দেশীয় সংগীতাঙ্গন

গত কয়েক দিন ধরে উত্তাল দেশীয় সংগীতাঙ্গন। গানের মানুষগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাদা ছোড়াছুড়ি করছেন। কথা উঠেছে সংগীতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে শতাধিক শিল্পী একাত্মতা প্রকাশ করেন সম্মানী ছাড়া কোনো গান করবেন না। করোনাকালীন এই সময়ে অনেকেই বিভিন্ন লাইভ অনুষ্ঠানে শিল্পীদের বিনা পারিশ্রমিকে গান করিয়ে নিচ্ছেন বলে তারা জানান।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে করোনার কারণে শিল্পীদের স্টেজ শো কমতে থাকে। মার্চ মাস থেকে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে শিল্পীদের আয়ের প্রধান উৎস হলো স্টেজ শো। একদিকে শিল্পীদের স্টেজ শো বন্ধ অন্যদিকে বিনা সম্মানীতে গান করতে হলে শিল্পীদের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে বলে দাবি করেন শতাধিক শিল্পী। তবে শতাধিক শিল্পীর সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন দাবির সঙ্গে কিছুটা দ্বিমত প্রকাশ করেন সিনিয়র কয়েকজন শিল্পী।

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, সারা দুনিয়ায় চলছে মহামারি আর মৃত্যুর মিছিল। আর আমার অনুজরা সেই সময়ে জোট করছে টাকা-পয়সার হিসাব নিয়ে। যেন সম্মানটা গৌণ, সম্মানীটাই মুখ্য। যেখানে শিল্প আর শিল্পীসত্তা নিয়ে কোনো শব্দ নেই, আছে সম্মানী তোলার চিৎকার। শিল্পীরা পয়সা ছাড়া গাইবে না, ভালো কথা। তো সেটার জন্য জোট করে ঢোল পিটিয়ে বলতে হবে কেন? এটা নিয়ে স্টেটমেন্ট দেওয়ার কিছু নেই তো। আমি যত ছোট বা অ-জনপ্রিয় শিল্পীই হই না কেন, নিজের সম্মান বা ব্যক্তিত্বটা অর্থ দিয়ে বিবেচনা করব না। যেখানে আমার সম্মানটা থাকবে, সেখানে দরকার হলে আমি ফ্রি গান করব। সমস্যা নেই তো। এখনো আমি অনেক কাজ করি সম্মানী ছাড়া। আবার যেখানে আমার সম্মান থাকবে না, সত্তা থাকবে না, সেখানে তো টাকার বস্তা দিলেও যাব না।

এদিকে শতাধিক শিল্পীদের এই আন্দোলনের সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে গীতিকারদের কিছু দাবি। শতাধিক কণ্ঠশিল্পী সম্মানী ছাড়া কোনো ধরনের শো করবেন না! এটিকে সাধুবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জনপ্রিয় গীতিকার জুলফিকার রাসেল পাঁচটি দাবি রাখেন। 

এক. এখন থেকে সম্মানীর বিনিময়ে তারা যেসব গান পারফর্ম করবেন তার একটা ভাগ গীতিকবি, আরেকভাগ সুরকার এবং আরেকভাগ সহশিল্পীদের জন্যও রাখবেন! শিল্পীরা নিজেরাও জানেন গানটা হাওয়া থেকে ভেসে আসেনি। 

দুই. এখন থেকে যথাযথ সম্মানী গ্রহণ না করে কোনো গান কোম্পানিকে দেবেন না! যথাযথ সম্মানী না দিয়ে কোনো লিরিক বা সুর ব্যবহার করবেন না! অনেক নতুন গীতিকবি বা সুরকার একটি গান প্রকাশের আশায় আপনার কাছে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক; কিন্তু নৈতিক মূল্যবোধ থেকে আপনারা যথাযথ সম্মানী প্রদান করবেন! কেননা ভবিষ্যতে এই গান আপনি বিভিন্ন শোতে সম্মানীর বিনিময়ে পারফর্ম করবেন।

তিন. গান গাওয়ার সময় নিজের গান বলে চালিয়ে দেবেন না! আপনি কণ্ঠ দিয়েছেন; কিন্তু গানটা লিখেছেন এবং সুর করেছেন হয়তো অন্য আরেকজন! দয়া করে তাদের নাম সম্মানের সঙ্গে উল্লেখ করবেন। 

চার. যন্ত্রশিল্পীদের কথাও ভাববেন! তারাও যেন যথাযথ সম্মানী পেতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করবেন! যেখানে এটা সম্ভব হবে না, সেই শো করবেন না! এই নীতিতে অটল থাকবেন। 

পাঁচ. এখন যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা সারাজীবন মনে রাখবেন। 

জনপ্রিয় এই গীতিকারের পাঁচটি দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন সিনিয়র থেকে চলতি প্রজন্মের গীতিকারদের অনেকেই। অন্যদিকে সংগীতের উত্তাল এই অবস্থায় আবারও মামলায় পড়লেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর। আসিফের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন গায়িকা দিনাত জাহান মুন্নি।

২ জুলাই রমনা সাইবার ক্রাইম অফিসে অভিযোগ জানাতে গেলে মুন্নিকে পাঠানো হয় হাতিরঝিল থানায়। সেখানে লিখিত অভিযোগ করেন ওই গায়িকা। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছে মামলা। আসিফ নিজেও ফেসবুক পোস্টে মামলার বিষয়টি সবাইকে জানিয়েছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //