অল ইন: দ্য ফাইট ফর ডেমোক্রেসি- ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার তাৎপর্যপূর্ণ প্রামাণ্য ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনে জয়ী হওয়ার পর দেশে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ওপর কেন এত জোর দিয়েছিলেন এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছেন, সেটা ২০২০ সালে জ্যাক ইয়াংগারসন রচিত এবং লিজ গারবাজ ও লিসা কোর্টস পরিচালিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র, ‘অল ইন: দ্য ফাইট ফর ডেমোক্রেসি’ দেখলে পানির মতো স্বচ্ছ হয়ে যায়। আমরা জানি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি হলো ভোটাধিকার। যদিও পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সুদূর প্রসারিত পথ, কিন্তু সেই পথের শুরু হয় ভোটাধিকারের মধ্য দিয়ে। শুরুর পথ ঠিক না হলে, মানুষ পথ হারিয়ে ফেলে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো গণতান্ত্রিক দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে এখনো যে কত বাধাবিঘ্ন রয়ে গেছে সেটা ‘অল ইন : দ্য ফাইট ফর ডেমোক্রেসি’ একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে আমাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে। ছবিটা মূলত আত্মসমালোচনার ছবি। আত্মসমালোচনা মানুষকে আত্মোপলব্ধির দিকে নিয়ে যায় আর আত্মোপলব্ধি আত্মশুদ্ধি নিয়ে আসে। ছবিটা দেখতে দেখতে দর্শকরাও নিজেদের দেশের গণতন্ত্র নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে বসে। ছবিটা তাই বর্তমান সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ছবি।

অল ইন শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নির্বাচন দিয়ে। যে নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের স্টেসি আব্রামস এবং রিপাবলিকান দলের ব্রায়ান কেম্প প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এবং নির্বাচনে স্টেসির নির্দিষ্ট বিজয়টি ছিনিয়ে নেন ব্রায়ান। কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় ছিনিয়ে নেওয়া হয় তাকে কেন্দ্র করেই ছবির গল্প আবর্তিত। সমাজের নানাস্তরের জনগণ যেমন ইতিহাসবিদ, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, অ্যাক্টিভিস্ট, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, টিভি নিউজরিল এবং সর্বোপরি সাধারণ জনগণের সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে একের পর এক মানুষের ভোটাধিকারের একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই তুলে ধরার মধ্যে কোনো রাখঢাক করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটা নাতিদীর্ঘ ইতিহাসও পরিচালকদ্বয় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন।

ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী স্টেসি আব্রামস

ছবিটা দেখতে দেখতে আমাদের মনে পড়ে যায়, সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্মিত ইরানের একটি ছবি ‘সিক্রেট ব্যালট’-এর কথা। যেখানে পরিচালক বাবাক পায়ামি দর্শককে তিনটি প্রশ্নের মুখোমুখি করেন- ১. ইরানে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত, ২. গণতন্ত্রের পথে সংগ্রামরত এবং ৩. আমজনতার কাছে গণতন্ত্র একটি তাৎপর্যহীন বিষয়। যদিও ছবিটা দেখে দর্শক শেষ পর্যন্ত এই তিনটি প্রত্যয়ের কোনোটিতেই স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারে না (ছবিটা নিয়ে অন্যত্রে আলোচনা করেছি)। 

অন্যদিকে অল ইন ছবিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি ভোটাধিকারের জটিলতার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও জনগণ উভয়ের সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে। যদিও জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার পথে প্রধানত রাষ্ট্রের দায় সব থেকে বেশি, কিন্তু জনগণ সচেতন হলে, সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা সুদূর পরাহত হতে পারে না। এই অধিকার প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করেই অল ইন আবর্তিত।

এই আবর্তনের গল্পের শুরু যুক্তরাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকে। দেশটির উত্তর এবং দক্ষিণ অংশ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সময় থেকে শুরু। যে কারণে ছবির পর্দায় আমরা দেখি লেখা থাকে, ‘This playbook is as old as the nation’। স্টেসি আব্রামসের সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে তার আত্মজীবনী আমরা জানতে পারি। জানতে পারি মিসিসিপির শহর গাল্ফপোর্টে একটা সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারে তার জন্ম। বাবা ছিলেন জাহাজঘাটের কর্মী এবং মা উইলিয়াম ক্যারি কলেজের হেড লাইব্রেরিয়ান। সাধারণ পরিবারে জন্ম হলেও জেসির মা-বাবা তাকে এবং তার ভাইবোনদের ছোট থেকেই নির্বাচন অর্থাৎ ভোট দেওয়ার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলতেন। ভোটের দিন সন্তানদের নিয়ে তার মা-বাবা ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতেন। এভাবে স্টেসির ছোট থেকেই নির্বাচন, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ইত্যাদি নিয়ে সচেতনতা গড়ে ওঠে। 

যে জর্জিয়ায় ২০১৮ সালে গভর্নর পদে স্টেসি দাঁড়িয়েছিলেন, এখানেই হাইস্কুলে পড়ার সময় ভ্যালেডিক্টোরিয়ান অর্থাৎ সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার সুবাদে তাকে ও অন্য শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন গভর্নর। কিন্তু 

কৃষ্ণাঙ্গ বলে তাকে সেদিন সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। স্কুল গেটের দারোয়ানকে কিছুতেই বোঝানো যায়নি যে তিনিও একজন সংবর্ধনাপ্রার্থী। সেই দাগ স্টেসির মনে চিরদিনের জন্য গেঁথে গিয়েছিল। বিখ্যাত আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ লেখক জেমস বল্ডউইনের বরাত দিয়ে তার উক্তি আমাদের জানানো হয়, ‘মানুষ ইতিহাসের ফাঁদে আটকে যায় এবং ইতিহাসও মানুষের মধ্যে আটকে যায়। আমরা এখান থেকে পালাতে পারি না। কিন্তু আমাদের গল্প পুনঃনির্মাণ করার দায়িত্ব আমাদেরই হাতে।’ তাই ইতিহাসবিদ ও লেখক তার সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের (১৮৬১-১৮৬৫) পরে প্রথম প্রশ্নটাই ছিল, দাস ব্যবস্থা কীভাবে প্রতিস্থাপন করা হবে? শ্রম ব্যবস্থা কীভাবে গঠন করা হবে? রাজনৈতিক ব্যবস্থা কীভাবে গঠন করা হবে? জাতিগত সম্পর্কের (শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ) কী হবে? রিকন্সট্রাকশনের (১৮৬৫-১৮৭৭) মধ্যে দিয়ে দাস ব্যবস্থার অবসান ঘটানো হয়।’ 

এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৩, ১৪ ও ১৫ সংশোধনীর মাধ্যমে দাস ব্যবস্থার অবসান, নাগরিক অধিকার এবং ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদিও বিস্তারিত পর্দায় আমরা দেখতে পাই। কিন্তু কিতাবের লেখা আর বাস্তবতা কখনোই অল্প সময়ে এক হয়ে যায় না। তাই আইনজীবী, রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং হোয়াইট হাউসের সাবেক বক্তৃতা লেখক মাইকেল ওয়ালন্ডম্যান বলেন, ইতিহাস ও সমাজের বিকাশ কখনো সোজা রাস্তা দিয়ে যায় না, সেখানে সবসময় বিদ্রোহ বা সংগ্রাম লেগে থাকে। প্রায় একই কথা বলেন ইতিহাসবিদ ও লেখক ক্যারল অ্যান্ডারসন, ভোটাধিকার অর্জন সব সময় রক্তাক্ত হয়। প্রতিযোগিতা হয় এবং এর কারণ হলো, ভোট মানে রাখে। খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা।

এরপর ভোটাধিকার আদায়ের দীর্ঘ ইতিহাস আমরা ছবিতে দেখতে পাই। যে অধিকার প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯১৩ সালে নারীদের ভোটাধিকার আদায়ের মধ্য দিয়ে। কিন্তু তারপরও সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনীতে কঠিন কঠিন আইনি ব্যবস্থার কারণে মানুষের ভোট দেওয়ার পথে যে বাধা সৃষ্টি হয় তার এক পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেওয়া হয়। যেমন ফ্লোরিডার ১৮৬৮ সালের সংশোধনীতে গুরুতর অপরাধীদের জন্য ভোটাধিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা আইন, যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের আগের গুপ্তহত্যার বিবরণ, ১৮৭০ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত চলা জিম ক্রো আইন, ১৮৭৫ সালের মিসিসিপি প্ল্যান, ভোট ট্যাক্স, স্বাক্ষরতা পরীক্ষা, ভোটারদের দলিল-প্রমাণাদি জমা দেওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, ভোটাধিকার কার্যকর আইন, নির্বাচন শুদ্ধিকরণ আইন, সেলমার নাগরিক অধিকার আন্দোলন- এসব থেকে শুরু করে সাম্প্রতিককালের অর্থাৎ ২০১৩ সালে বারাক ওবামার শাসনকালে শেলবি কাউন্টির রুল জারির মধ্য দিয়ে শুধু কৃষ্ণাঙ্গ নয়, 

আদিবাসীদেরও ভোট দেওয়ার পদ্ধতি কঠিন করে তোলা হয়। এসব আইনের পুঙ্খানুপুঙ্খ অসুবিধাগুলো বিভিন্ন মানুষের সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়। যে কারণে Voter Suppression বা ভোটার দমননীতির প্রশ্নটি মুখ্য হয়ে দেখা দেয়। 

ন্যাশনাল ভোটিং রাইটস অরগানাইজেশনের সিইও এবং একজন রাজনৈতিক কৌশলী লরেন গ্রো-ওয়ারগো, যিনি স্টেসির নির্বাচনে প্রচুর পরিশ্রম করেছিলেন, তাকে ‘রিফরমেশন’ ব্লগে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ভোটার দমননীতি বলতে তিনি কী বোঝেন? তার উত্তরটা ছিল চমৎকার, ‘ভোটার দমন হলো তিনটি চেষ্টা যা আমাদের ভোটাধিকার আদায়ের ওপর প্রভাব রাখতে পারে- ১. ভোটার হিসেবে নিবন্ধন হওয়া এবং থাকা, ২. মেইল বা সরাসরি ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যালট আদায়ের সক্ষমতা অর্জন করা এবং ৩. ব্যালট ঠিকমতো গণনা করা। কারণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আফ্রিকান-আমেরিকান, ল্যাটিন আমেরিকার আমেরিকান, এশিয়ান আমেরিকান, যুবক সম্প্রদায় এবং গরিব ভোটারদের খুব কৌশলে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। আপাতদৃষ্টিতে বিভিন্ন ধরনের ভোটার আইন ভালো হলেও বাস্তবে প্রয়োগের সময় কত ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন যে হতে হয়, বিশেষ করে লরেনের উল্লেখিত জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তার পুঙ্খানুপুুঙ্খ বিবরণ পাওয়া যায় ছবিতে।

বার্ব সিম্যানস নামে একজন রেড ইন্ডিয়ান বা আদিবাসী জানান, অধিকাংশ ইন্ডিয়ানের কোনো বাস্তব ঠিকানা নেই। তারা পোস্ট অফিস বক্সের ঠিকানা দেয়। ফলে ২০১৫ সালের ভোটার আইডি আইন পাস হওয়ার পর নর্থ ডাকোটার এক-চতুর্থাংশ আদি আমেরিকান ভোটার শনাক্তকরণ ফর্ম পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন না করায় তিন ভাগের দুই ভাগ আইডি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। ওহাইওর ডেমোক্র্যাটিক দলের চেয়ারম্যান ডেভিড পেপার বলেন, সময়ে সময়ে নির্বাচন তালিকা হালনাগাদ করতে হয়। মানুষ মারা যায়, স্থানান্তর হয়। কিছু কিছু রাজ্য এসব বিষয়ে চৌকস। তারা অটোভোটার রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু ওহাইওতে কেউ যদি কয়েকটা নির্বাচনে ভোট না দেয় বা নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পাঠানো পোস্টকার্ডে (হালনাগাদ ফর্ম) সাড়া না দেয় তাহলে তার ভোটার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়। এরপরই টিভি নিউজে দেখা যায়, বলা হচ্ছে- ‘ওহাইও রাজ্যে ভোটাধিকারের প্রশ্ন আসলেই বলা হয়, হয় তুমি এটা ব্যবহার করো নয়তো হারাও।’ এসবের উত্তরে একজন ভোটার জানায়, তাদের পাঠানো পোস্টকার্ড এতটাই সাধারণ যে ‘Junk Mail’ বলে মনে হয়, ফলে অনেকে এসব মেইলের গুরুত্ব দেয় না। স্টেসির মতে, এভাবে শুদ্ধিকরণের নামে প্রকৃতপক্ষে voter suppression বা ভোটার দমন চলে। 

‘অল ইন : দ্য ফাইট ফর ডেমোক্রেসি’ প্রামাণ্য ছবির একটি দৃশ্য

স্টেসির প্রতিযোগী প্রার্থী ব্রায়ান কেম্প, যিনি সেক্রেটারি অব স্টেট হিসেবে জর্জিয়ায় আট বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তিনি খুব সূক্ষ্মভাবে সারা দেশে এই ভোটার দমননীতি পালন করে আসছিলেন। যার অন্যতম একটা ব্যবস্থা ছিল ‘Exact Match System’। অর্থাৎ ভোটার নিবন্ধনকরণ ফর্মের স্বাক্ষরের সঙ্গে যদি প্রার্থীর ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং সোশ্যাল সিকিউরিটির দলিলের স্বাক্ষরে মিল না থাকে, তাহলে তার নিবন্ধনকরণ প্রক্রিয়া আটকে রাখা হয়। এই স্বাক্ষরতা ব্যবস্থা সম্পর্কে জর্জিয়ার আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের পরিচালক শন জে ইয়ুং বেশ মজার একটা তথ্য দেন। তিনি বলেন, যাদের প্রথম ভাষা ইংরেজি না, তাদের ক্ষেত্রে এই স্বাক্ষরতা বিভ্রাট ঘটে। বাইরে থেকে আসা অনেক অভিবাসী আমেরিকান নাম ধারণ করে, বিশেষ করে এশিয়ান অভিবাসী, তারা চট করে ইংরেজি স্বাক্ষর মেলাতে পারে না। যেমন আমার দাদির কথাই বলতে পারি, উনি কখনোই একই রকম স্বাক্ষর দিতে পারতেন না। এভাবে জর্জিয়ার ২০১৮ সালের নির্বাচনে অনেক ভোটার ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হন। 

ব্রায়ান কেম্প শুধু নির্বাচনী প্রতিযোগী ছিলেন না, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা করাও তার দায়িত্ব ছিল। কারণ তিনি সাংবিধানিকভাবে অনুমোদিত কর্মকর্তা ছিলেন। যে কারণে জর্জিয়ার নির্বাচনে আমরা প্রথমেই জেনেছি যে স্টেসি আব্রামসের পরাজয় ঘটবে।

এভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয় পুরো প্রামাণ্যচিত্রে। ছবিতে তাই জনগণের ভোট দেওয়ার সচেতনতার পাশাপাশি জাতীয় জীবনে ভোট প্রদান কতটা গুরুত্ব বহন করে তার কথা বলা হয়। সমাজবিজ্ঞান ও পলিটিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ফ্রান্সিস ফক্স পিভেন বলেন, ‘গণতন্ত্র আসলে কী? গণতন্ত্র হলো একটা ব্যবস্থা, যে ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ভোটাররা তাদের পছন্দের মানুষকে শাসনকাজে বসাতে পারে।’ একজন ভোটার খুব ভালো একটা কথা বলেন, ‘আমি প্রতিটা নির্বাচনে ভোট দিয়েছি। কোনো ভোট মিস করিনি। কারণ এই ভোটের মধ্য দিয়ে আমি আমার কণ্ঠস্বর শুনতে চাই।’ 

‘অল ইন : দ্য ফাইট ফর ডেমোক্রেসি’ প্রামাণ্য ছবির একটি দৃশ্য

স্টেসি বলেন, যখন নির্বাচিত প্রার্থীরা অফিসিয়ালি অনুভব করে যে, সে সব সময় থাকবে না, তখন তার সামনে দুটো পছন্দ থাকে- হয় তাকে জনগণের প্রতি বেশি পরিমাণে সংবেদনশীল হতে হবে অথবা জনগণের প্রশ্নের উত্তর দিতে সে প্রত্যাখ্যান করতে পারে। ফ্লোরিডার ভোটার অধিকার আন্দোলনের অ্যাক্টিভিস্ট ডেসমন্ড মিড বলেন, বিভিন্ন আইন ও নীতিতে পরিবর্তন আনার জন্য যদি রাজনীতিবিদদের সেই রকম সাহস না থাকে তখন জনগণকেই সেই সাহস নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত- আমাদের ক্ষমতা আমাদের ভোটের মধ্যে। আমাদের শক্তি আমাদের মতপ্রকাশের মধ্যে। আপনি যদি ইচ্ছা করে নিশ্চুপ থাকেন, তাহলে বুঝবেন সেই শক্তি আপনি অন্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। 

ইতিহাসবিদ ও লেখক ক্যারল অ্যান্ডারসন আরেক কাঠি বাড়িয়ে বলেন, আপনি যদি একজন লোক, একটা ভোটে বিশ্বাস রাখেন, যদি বিশ্বাস রাখেন নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপর, তাহলে আপনাকে গণতন্ত্রের জন্য অবিরাম সংগ্রাম করেই যেতে হবে। শন জে ইয়ুং, ডেভিড পেপার, অ্যান্ডারসন, জায়লা অ্যালেন সবাই মিলে জানান, ভোট ঠিকমতো গণনা হয়েছে কিনা, ভোট শুধু একা দিলে হবে না, নিজ পরিবার এবং পাড়া-প্রতিবেশীরা দিয়েছে কিনা সেসব খোঁজ রাখতে হবে, যত সকালে সম্ভব তত সকাল সকাল ভোট দিতে হবে, পোলিং সেন্টার আগে থেকে চিনে আসতে হবে, নির্বাচনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব আগে থেকে ঠিকঠাক করে রাখতে হবে ইত্যাদি। লেখক অরিল বারম্যান বলেন, ভোটাধিকার অর্জন মানে নাগরিক অধিকার অর্জন। ফ্রান্সিস ফক্স তাই বলেন, এটা আমাদের জীবন-মরণের প্রশ্ন। ছবির শেষে আমাদের তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না, একটা দেশে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কতটা জরুরি। তবে স্টেসি আব্রামস হাল ছেড়ে দেন না। ছবির শেষে তিনি জানান, গণতন্ত্রে তার দৃঢ় বিশ্বাস আছে। বিশ্বাস আছে দেশপ্রেমে। দেশপ্রেম মানে, প্রতিটা মতপ্রকাশ মানে রাখে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //