ছাপাখানা: শাসকের সেবার জন্য নয়, শাসনের সেবার জন্য

‘To me freedom of speech is something that represents the very dignity of what a human being is … That’s what makes us off from the stones and the stars. You can speak freely. It’s almost impossible for me to describe. It is the thing that makes us as just below the angels’–Mario Savio, American Activist (1942-1996).

“সব থেকে শিক্ষণীয় উদ্ঘাটন সম্ভবত এই যে, নেতারা তাদের অধীনস্থদের উপর কত কম বিশ্বাস বা আস্থা রাখেন-ঔদ্ধত্যপূর্ণ ক্ষমতাশালীর এটা একটা চিরন্তন বা ধ্রুপদী ঘটনা। প্রতারণা এবং ভুল উপস্থাপনার শেকড় সেখান থেকে উঠে এসেছে যেখানে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা হয়েছে যে জনগণ, ভিয়েতনামের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হবে না। এমনকি সরকারের ভেতরেও পূর্বধারণার নীতির ব্যর্থতার কারণে সুস্থ বুদ্ধির হিসাবকেও রুক্ষভাবে উপেক্ষা করা হয়”-কথাগুলো নেওয়া হয়েছে টাইম ম্যাগাজিনের ১৯৭১ সালের ২৮ জুন সংখ্যা থেকে, যেটা পরবর্তীকালে গত ১০ জুন, ২০১৩ সালে অলিভিয়া বি ওয়েক্সম্যান, টাইমের অনলাইন সংখ্যায় তুলে ধরেছেন। 

নিরাপত্তার নামে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষার প্রচলন রাষ্ট্রের উৎপত্তির সঙ্গে হয়েছে বলা চলে। কিন্তু এই গোপনীয়তা রক্ষা করতে গিয়ে, শুধু তার জনগণের ক্ষতি নয়, সেই রাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িত আরও অনেক রাষ্ট্রের ক্ষতি করে। আবার কেউ যদি এই গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয় তাহলে তাকে চরম শাস্তি পেতে হয়। কিন্তু এই শাস্তি মাথায় রেখে আধুনিক সময়ে আমরা যাদের ‘হুইসেলব্লোয়ার’ বলি যেমন জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জ, এডওয়ার্ড স্নোডেন, ব্র্যাডলি ম্যানিং প্রমুখ কিছু সচেতন, বিবেকবান মানুষ থাকেন যারা রাষ্ট্রের এসব গোপনীয়তা জনগণের কাছে প্রকাশ করে দেন। আমরা আরও জানি, উল্লেখিত হুইসেলব্লোয়াররা ইরাক যুদ্ধের গোপন সব নথি, ভিডিও ক্লিপ ইত্যাদি প্রকাশ করে বর্তমানে কতটা শাস্তি ভোগ করছেন। ঠিক এমনই একজন হুইসেলব্লোয়ার (যাকে বিশ্বের প্রথম আলোচিত হুইসেলব্লোয়ার নামেও আখ্যা দেওয়া যেতে পারে) গত সত্তরের দশকে দেখা দিয়েছিল, যার নাম ড্যানিয়েল এলসবার্গ। ড্যানিয়েল এলসবার্গ ছিলেন র‌্যান্ড কোম্পানির মাধ্যমে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের বিশেষজ্ঞ। যিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন এবং তাকে দিয়েই স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত ‘দ্য পোস্ট’ ছবিটি শুরু হয়।

ছবি শুরু হয়েছে ১৯৬৬ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভিয়েতনামের প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। ‘দ্য পোস্ট’ সিনেমা মূলত এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের পাবলিশার ক্যাথেরিন গ্রাহামের বাস্তব জীবনের এক সংকটপূর্ণ সময়কে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে। শুরুতেই রাষ্ট্র কীভাবে জনগণের সঙ্গে মিথ্যাচার করে, তার একটা প্রতীকী প্রমাণ পরিচালক আমাদের ছোট একটা ঘটনার মধ্য দিয়ে দেখিয়ে দেন। ১৯৬৬ সালে তখনকার মতো যুদ্ধ শেষ করে ড্যানিয়েল যুদ্ধের দুরবস্থার চিন্তায় গভীরভাবে মগ্ন হয়ে বিমানে দেশে ফিরছেন। একই বিমানে একজন জেনারেলের সঙ্গে তার ঊর্ধ্বতন বসের তুমুল তর্ক চলছে। তর্কের বিষয়, ভিয়েতনাম যুদ্ধে আরও সেনাবাহিনী পাঠানো দরকার নিয়ে। জেনারেল যতই তার বসকে বোঝায় যে, যুদ্ধের অবস্থা ভালো নয়, বস সেই কথা মানতে রাজি নয়। শেষে ড্যানিয়েলকে যুদ্ধ পরিস্থিতি জানার জন্য ডেকে নেওয়া হয়। ড্যানিয়েল যখন যুদ্ধের দুরবস্থার কথা জানায়, তখন সেই জেনারেল ভীষণ উত্তেজিত হয়ে তার ঊর্ধ্বতন বসকে বলেন, যুদ্ধের এ অবস্থা জেনেও কি আপনি বলবেন আরও এক হাজার ট্রুপ পাঠানো দরকার, যেখানে আমরা বুঝতে পারছি যুদ্ধের অবস্থা তখনও ভালো হবে না? বিমান থেকে নামার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে উত্তেজিত এই জেনারেলকেই আবার আমরা আরেক চেহারায় দেখি। যুদ্ধের অবস্থা সম্পর্কে তিনি হাসি হাসি মুখে সাংবাদিকদের বলেন, খুব ভালোভাবে যুদ্ধ চলছে, ভয়ের কিছু নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। এভাবেই রাষ্ট্র জনগণের কাছে মিথ্যাচার করে। 

ড্যানিয়েল তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জেনারেলের কথাগুলো মন দিয়ে শোনে এবং বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। মানুষের বিবেক এক বিস্ময়কর জায়গা। সে মিথ্যাচার সহ্য করতে পারে না। সম্ভবত ঠিক এই সময়েই ড্যানিয়েল সিদ্ধান্ত নেয় পেন্টাগনের গোপন নথিগুলো চুরি করে সেসব প্রকাশ করার। যেখানে যুদ্ধের প্রকৃত অবস্থার বিশদ বিবরণ আছে। যেহেতু সে ডিফেন্সের মতো জায়গায় চাকরি করে কাজেই এসব নথি চুরি করা তার জন্য খুব সহজ কাজ। 

এরপরই ১৯৭১ সাল পর্দায় দেখা যায় এবং ক্যাথেরিন গ্রাহামের কাছে পরিচালক আমাদের নিয়ে যান। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের পাবলিশার হতে ক্যাথেরিনকে বিশেষ কোনো কষ্ট করতে না হলেও, সারা ছবিতে তাকে আমরা ভীষণ একটা টেনশনের মধ্য দিয়ে যেতে দেখি। বিশেষ করে, পোস্টের সেই সময়টা ক্যাথেরিন পার করছিলেন যখন পত্রিকাটা দাঁড় করানোর জন্য তাকে ভীষণ সংগ্রাম করতে হচ্ছে। সময়-অসময়ে তার এক্সিকিউটিভ এডিটর বেন ব্র্যাডলির সঙ্গে দেখা করছেন, নাশতার টেবিলেও শুধু পত্রিকা নিয়ে কথা বলছেন, রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠছেন, কখনো বাড়ির টেবিলে বসেই ঘুমিয়ে পড়ছেন ইত্যাদি। এদিকে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের মেয়ের বিয়ের কভারেজ নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট যখন খুব ব্যস্ত ঠিক সেই সময়ে খুব গোপনে তথ্য নিয়ে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পেন্টাগনের গোপন নথির প্রথম কিস্তি প্রকাশ করে। 

ড্যানিয়েল এলসবার্গ যখন প্রথম নথিগুলো খোলে, ক্যামেরার ক্লোজে আমরা লেখা দেখতে পাই-‘Top Secret–Sensitive, UN-Vietnam Relation 

1945-1967, Vietnam War, Vol-1, Justification of War, Public Statement, Internal Commitments etc ’ এবং এসব লেখার মাঝে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান, প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার, প্রেসিডেন্ট কেনেডির 

বক্তৃতা ইত্যাদি পরিবেশিত হতে দেখা যায়। ৪৭ ভলিয়ুমের প্রায় ৭০০০ পৃষ্ঠার নথি, যা টাইমস পত্রিকা ধীরে ধীরে উন্মোচন করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম কিস্তি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে সাড়া পড়ে যায়। পোস্টার হাতে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। সেসব পোস্টারে ‘স্টপ দ্য ওয়ার’, ‘লায়ার’ ইত্যাদি লেখা। এর মধ্যে পেন্টাগনের কিছু গোপন নথি ওয়াশিংটন পোস্টের অফিসে এসে পৌঁছায়। সম্পাদক বেন ব্র্যাডলি সিদ্ধান্ত নেয়, পুরো নথি সংগ্রহ করে ওয়াশিংটন পোস্টে ছাপাতে হবে। এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে বেন যখন ব্যস্ত, ক্যাথেরিন তখন টাইমসের সম্পাদক আর তার বউয়ের সঙ্গে ডিনারে। ডিনারের মাঝেই একজন লোক একটা চিরকুট দিয়ে যায়, সেই চিরকুটে নথির আর কোনো কিস্তি না ছাপানোর আদেশ আসে। ক্যাথেরিন বিষয়টা ধরে ফেলে। এরপরই বেনের সঙ্গে তার দীর্ঘ একটা কথোপকথন আমরা দেখতে পাই। যে কথোপকথনের মধ্য দিয়ে আমরা জানতে পারি, প্রেসিডেন্ট কেনেডি এবং তার পরিবারের সঙ্গে 

ক্যাথেরিন ও তার পরিবার কতটা সম্পৃক্ত ছিল, কাছাকাছি ছিল সাবেক ডিফেন্স সেক্রেটারি রবার্ট ম্যাকনামের সঙ্গে, যিনি এই নথির অনুমোদিত একজন ব্যক্তি ছিলেন এবং ছয় বছর আগে থেকে অর্থাৎ ১৯৬৫ সাল থেকে জানতেন যে ভিয়েতনাম যুদ্ধে তারা জিতবে না। তবে ক্যাথেরিন স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, কেনেডি বা ম্যাকনাম কাউকে নিয়েই তার মাথাব্যথা নেই, মাথাব্যথা শুধু তার পত্রিকা নিয়ে। 

অন্যদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের আরেক সিনিয়র সাংবাদিক বাগডিকিয়ান গোপনে এলসবার্গের কাছে গিয়ে পৌঁছায় বাকি ৩৭ ভলিয়ুম উদ্ধারের জন্য এবং সেসব নথি দেখে এলসবার্গকে যখন সাহসী বলে আখ্যা দেন, এলসবার্গ তখন চমৎকার একটা উত্তর দেন, ‘আমার মনে হয়, মানুষের ভেতরে সাহসের চেয়ে অপরাধবোধ বেশি কাজ করে।’ শুরু হয় ওয়াশিংটন পোস্টে নথি ছাপা নিয়ে সংগ্রাম।

ছবিতে মাঝে মাঝে প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে লং শটে হোয়াইট হাউসে টেলিফোনে কথা বলতে দেখি। রাষ্ট্র সব গোপন খবর পাবে কিন্তু জনগণ রাষ্ট্রের কোনো গোপন খবর জানতে পারবে না। সিনেমার সব থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ সরকারের গোপন খবর প্রকাশের সংগ্রামের মধ্যে আমরা দেখতে পাই। সরকারি গোপন তথ্য শুধু হাতে এলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। এই তথ্য প্রকাশ করার পেছনে যে কত বাধা, সংগ্রাম, সাহস এবং কত আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেটা পরিচালক স্পিলবার্গ কাট টু কাট সিনের মধ্য দিয়ে চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন। 

১৯৯৭ সালে ফ্রেশ এয়ার পত্রিকায় টেরি গ্রসের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাস্তবের ক্যাথেরিন বলেছিলেন, “আমি সবসময় বেন এবং হাওয়ার সিমোনস, যে এই পত্রিকার ম্যানেজিং এডিটর ছিল, তাদের কাছে যেতাম। সব সময় প্রশ্ন করতাম, আমরা নিজেদের কাছে পরিচ্ছন্ন আছি তো? আমরা কি সঠিক পথে চলছি? আমরা কি ঠিকঠাক আছি নাকি ভুল পথে যাচ্ছি, যে পথে গেলে আমাদের মাথা কাটা যেতে পারে?” একজন পাবলিশার কতটা সৎ হলে, এভাবে পত্রিকার এডিটরদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক শুধু যোগাযোগ রক্ষা নয়, কীভাবে তারা কাজ করছে, কতটা সঠিকভাবে করছে অনবরত সেই পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকছে সেটা একটা অনন্য দৃষ্টান্ত। ছবিতেও আমরা দেখি নিজেদের পরিচ্ছন্ন রাখার সংগ্রাম। 

একদিকে আমরা দেখি বেনের বাড়িতে বাকি ৩৮ ভলিয়ুমের নথি নতুন করে টাইপ করা হচ্ছে, অন্যদিকে ক্যাথেরিনের অনেক দিনের বন্ধু ম্যাকনামের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে নথি ছাপা বা না-ছাপা নিয়ে। কারণ এটা ছাপা হলে নথির সত্য কথাগুলো গোপন করার দায়ে ম্যাকনামের দুর্নাম ছড়িয়ে পড়বে। আবার বেনের বাড়িতেও তর্ক চলে। পত্রিকার শেয়ারহোল্ডার, আইনজীবী ও অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে বেনের তর্ক চলে। সাংবাদিক অ্যান্থনি, বেনকে এসব নথি প্রকাশ হলে ১৯১৭ সালের এসপিওনাজ অ্যাক্টের অধীনে চলে যাওয়ার ভয় দেখায়। যে অ্যাক্টের অধীনে পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস করার দায়ে বাস্তবের ড্যানিয়েল এলসবার্গকে ১১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে পরবর্তী সময় সরকারি অনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে সেই সাজা মওকুফ হয়ে যায়। ছবিতে আমরা দেখি এসপিওনাজ অ্যাক্টেরই শুধু ভয় দেখানো হয় না, সেই সঙ্গে ক্যাথেরিনের কলিগ এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফ্রিনজ বেবে বেনকে বলেন, “যদি মামলা হয় এবং সেই মামলায় সরকার জিতে যায় আর আমরা দোষী সাব্যস্ত হই, তাহলে তো ওয়াশিংটন পোস্টের অস্তিত্বই থাকবে না।” উত্তরে বেনের মুখে ভয়ানক সংলাপ পাই, বেন বলেন, “আমরা যদি এমন পৃথিবীতে বাস করি, যেখানে সরকার আমাদের বলে দেয় কী ছাপা যাবে এবং কী ছাপা যাবে না, তাহলে ধরে নিতে হবে ইতিমধ্যে আমাদের অস্তিত্বই বিলিন হয়ে গেছে।” এখানে আমরা পেয়ে যাই সেই চিরচরিত দ্বন্দ্বসংবাদপত্রের স্বাধীনতা বনাম সরকারি নিরাপত্তা। 

অন্যদিকে ক্যাথেরিনকে ম্যাকনাম ভিয়েতনাম যুদ্ধের অজুহাত হিসেবে ‘ডমিনো থিওরির’ কথা বলে। যে তত্ত্বটা ছিল স্নায়ুযুদ্ধের একটা নীতি। যার মাধ্যমে পুঁজিবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কমিউনিস্ট সরকারের সম্প্রসারণ বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল। ম্যাকনাম স্বীকার করে যে সেই তত্ত্ব ত্রুটিযুক্ত ছিল। বাস্তবেও আমরা দেখি শেষ পর্যন্ত ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র হেরে যায় এবং উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম একত্রিত হয়ে আবার কমিউনিস্ট শাসন প্রবর্তন করে।

ছবির সবটা অংশ জুড়ে ১৯৭১ সালের যুক্তরাষ্ট্রকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শিল্পীদের পোশাক, সেই সময়ের গাড়ি, রাস্তাঘাট, দালান, অফিস-সব নিপুণ দক্ষতায় পরিচালক ফুটিয়ে তুলেছেন। অভিনয়ে প্রত্যেকে যার যার ভূমিকায় চমৎকার অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে ক্যাথেরিন গ্রাহামের ভূমিকায় মেরিল স্ট্রিপ এবং বেন ব্র্যাডলির ভূমিকায় টম হ্যাংকস অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এদিকে বেনের বাড়িতে খবর আসে, সেই নথি ছাপা না হলে, দুজন সাংবাদিক ইস্তফা দেবেন। আরও খবর আসে এই নথি ছাপানো সম্পর্কে ওয়াশিংটন শহরের প্রায় অর্ধেক মানুষ জেনে গেছে। এখন ছাপা না হলে, একজন সাংবাদিক বলেন, মানুষ আমাদের বিচক্ষণ মনে করবে, আরেকজন বলেন, না। ভীতু মনে করবে। কিন্তু বেন বলেন অন্য কথা-“আমরা হেরে যাব। দেশ হেরে যাবে। নিক্সন জিতে যাবে। নিক্সন জিতবে তারপর আরেকজন জিতবে এবং তারপর আরেকজন। কারণ আমরা ভয় পেয়েছিলাম। সংবাদপত্রের একমাত্র অধিকার সংবাদ প্রকাশ করা।” জেলের ভয়, মামলার ভয় ও অন্যান্য ভয়-সব উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত পেন্টাগনের সংবাদ প্রকাশ করা হলো। ওয়াশিংটন পোস্টের অফিসে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের দিনেই সেই খবরের বিরুদ্ধে এসপিওনাজ অ্যাক্টের অধীনে মামলা দায়ের করা হলো। শুরু হলো আরেক সংগ্রাম। ইতিমধ্যে অন্যান্য সব পত্রিকা যেমন-St Louis Post, The Boston, Tallahassee Democrate, The Philadelphia Inquirer ইত্যাদি পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের পক্ষে খবর ছাপতে লাগল। আসলে স্বাধীনতা এমন এক কর্মযজ্ঞ যেখানে সবাইকে একত্রিত হতে হয়। একতা ছাড়া স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। 

ছবির একদম শেষে ওয়াশিংটন পোস্টের অফিসে টানটান উত্তেজনার মধ্যে খবর আসে যে ৬৩ ভোটের মাধ্যমে তারা মামলায় জিতেছে এবং সেই সঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমসও জিতেছে। টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে জাসটিস ব্লখের মাধ্যমে এই ছবির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সংলাপটি শোনানো হয়, “আমাদের পূর্বপুরুষেরা আমাদের স্বাধীন ছাপাখানা দিয়ে গেছেন। গণতন্ত্রের পথে তাকে রক্ষা করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। ছাপাখানা, শাসকের সেবার জন্য নয়, শাসনের সেবার জন্য।” 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //