‘ইতিহাসের কঠিনতম’ জিম্মিসংকট: বন্দি ইসরায়েলিদের কী হবে

ফিলিস্তিনের গাজায় হাসপাতালে হামলা করেছে ইসরায়েল। এ হামলায় ৫০০ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। এমন অবস্থায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনাও নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ফিলিস্তিনি এ সংগঠনটির হাতে ইসরায়েলি বন্দিদের কী হবে তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

এর আগে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল থেকে হামাস বন্দুকধারীরা অন্তত ১৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে গিয়েছিল, যাদের গাজার বিভিন্ন গোপন জায়গায় রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে নারী, শিশু ও বয়স্করাও রয়েছেন।

এদিকে ইসরায়েল স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে গাজা সীমান্তে সেনা মোতায়েন, ভারী আর্টিলারি এবং ট্যাংক জড়ো করেছে তারা।

প্রশ্ন হচ্ছে, ইসরায়েল যদি এখন গাজায় পূর্ণ মাত্রার অভিযান চালায়, তাহলে এসব জিম্মি বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে?

সমঝোতার আভাস নেই

পেছন থেকে কাতার, মিসর ও সম্ভবত আরও কয়েকটি দেশ জিম্মিদের একাংশের মুক্তির জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

একটি আইডিয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে যে হামাস নারী ও শিশু বন্দীদের মুক্তি দেবে এবং বিনিময়ে ইসরায়েল ৩৬ নারী ও কিশোর বন্দীকে ছেড়ে দেবে।

ইসরায়েলের রেইচম্যান ইউনিভার্সিটির ইন্সটিটিউট ফর পলিসি অ্যান্ড স্ট্রাটেজির সিনিয়র বিশ্লেষক মাইকেল মিলস্টাইন বলছেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেকোনো মূল্যে জিম্মি হওয়া ব্যক্তিদের ফেরত পাওয়াই হতো ইসরায়েলের বড় অগ্রাধিকার। কিন্তু এখন তাদের অগ্রাধিকার হলো সামরিক হুমকি হিসেবে হামাসকে নির্মূল করা।

উভয় পক্ষেই উত্তেজনা ও ক্রোধ বাড়ছে। ইসরায়েল ও হামাস-কারও মধ্যেই সমঝোতার মেজাজটাই নেই।

ইসরায়েলিরা হতভম্ব ও ক্ষুব্ধ যে বন্দুকধারীরা কীভাবে সহজেই দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকে ঠাণ্ডা মাথায় তাদের সেনা ও নাগরিতদের হত্যা করতে পারলো।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা, শুধু হামাস নয়, শনিবারের পর থেকে গাজায় দুই হাজারের মতো বিমান হামলার আড়াই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুতে ক্রোধে ফুঁসছে। গাজায় তেল, বিদ্যুৎ, পানি ও ঔষধ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

কোনো সতর্কতা ছাড়া বিমান হামলা চালিয়ে ইসরায়েল কোনো বেসামরিক নাগরিক হত্যা করলে জবাবে এর প্রতিটির জন্য একজন করে জিম্মিকে হত্যার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। তবে এমন কিছু তারা করেছেন তেমন প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

একইসাথে ইসরায়েলের দিক থেকেও সংযমের কোনো আভাস নেই। গাজার বড় অংশকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে।

তবে মাইলস্টেইন বিশ্বাস করেন যে হামাস হয়তো নারী, শিশু ও বয়স্কদের আটকে রাখতে আগ্রহী নাও হতে পারে।

কারণ ব্যাপক বিমান হামলার মধ্যে তাদের উচ্চ মাত্রার যত্ন নেওয়া সহজ নাও হতে পারে। হামাস তাদের অবস্থানও গোপন রাখার চেষ্টা করছে যাতে করে সেখানে ইসরায়েল কোনো তথ্য না পেতে পারে।

এর পরিবর্তে হামাস চাইবে তাদের হাতে জিম্মি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে পূর্ণ সুবিধা আদায় করতে। আলোচনা হলেও যাতে এদের মুক্তির বিনিময়ে বড় কিছু আদায় করা যায়।

‘ইতিহাসের কঠিনতম’ জিম্মিসংকট

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে বলে খবর আসছে। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে এসেছে দেশটির বিশেষ রণতরি।

অন্যদিকে হামাস তার সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। ইসরায়েলের আধুনিক প্রযুক্তি ও অস্ত্রের শক্তির মুখেও নিজেদের প্রমাণ করেছে।

শুধু প্রযুক্তিগত যোগাযোগ এড়িয়ে তারা ৭ অক্টোবর বড় হামলা করতে সক্ষম হয়েছে। যেসব বন্দুকধারী ১৫০ জনকে জিম্মি করেছে, তাদেরকেও সম্পূর্ণ অগোচরে রাখা হয়েছে। ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরত্বে রাখা হয়েছে জিম্মিদেরও।

মাইকেল মিলস্টাইন বলেছেন, এটা নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন নেই যে ইসরায়েল এবার ইতিহাসের কঠিনতম জিম্মিসংকট মোকাবেলা করছে।

সূত্র : বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //