এনডিটিভি বিশ্লেষণ

হামাস কীভাবে ফাঁকি দিল ইসরায়েলের আয়রন ডোমকে

হামাস গোষ্ঠীর নজিরবিহীন হামলার পর ইসরায়েল বাহিনী এবারে যুদ্ধে নেমেছে। অপারেশন ‘ আল-আকসা ফ্লাড’ ঘোষণার মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের দিকে ৫ হাজারেরও  বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস। ইসরায়েল জুড়ে বিমান হামলার সাইরেন বাজার সাথে সাথে ভোরের নীরবতা ভেঙে যায়। 

আয়রন ডোম সিস্টেম হলো বিশ্বের অন্যতম সেরা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা ফের সক্রিয় হয়েছে। আয়রন ডোম রকেটগুলোকে মধ্য-বাতাসে ধ্বংস করার সক্ষমতা রাখে এবং আকাশ অগ্নিশিখার বিস্ফোরণে আলোকিত হয়ে থাকে এসব ডোম।

দুই পক্ষের মধ্যে নতুন করে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী এই সংঘাতের সূত্রপাত হয় গতকাল শনিবার সকালে। এদিন সকালে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে মুহুর্মুহু রকেট হামলা চালানো হয়। 

আয়রন ডোম সিস্টেম কি?

আয়রন ডোম সিস্টেম হল এমন একটি স্থল থেকে আকাশপথে স্বল্প-পরিসরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা দেশের বিভিন্ন স্থানে রকেট আক্রমণ, মর্টার, আর্টিলারি শেল এবং স্বল্প পরিসরে এরিয়াল ভেহিকেল (UAVs) মোকাবেলায় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে থাকে। 

‘আয়রন ডোম’ বিশ্বের অন্যতম সেরা ও অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।

শনিবার দেখা যায়, হামাসের ছোড়া রকেট মাঝ আকাশে ধ্বংস করতে থাকে ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’। একের পর এক রকেট ধ্বংসের ফলে আকাশ অগ্নিশিখায় আলোকিত হয়। আকাশে তৈরি হয় এক নাটকীয় দৃশ্য।

এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের পরিসীমা প্রায় ৭০ কিমি জুড়ে বিদ্যমান থাকে। এবং এতে তিনটি কেন্দ্রীয় উপাদান রয়েছে যা একেকটি ইউনিট গঠন করতে সমর্থ্য। ডিটেকশন এবং ট্র্যাকিং রাডার, ব্যাটল ম্যানেজমেন্ট এবং উইপন্স কন্ট্রোল এবং ২০টি তামির মিসাইল দিয়ে সজ্জিত এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

এটি ২০১১ সাল থেকে ইসরায়েলকে পাহারা দিয়ে আসছে। ২০০৬ সালের লেবানন সংঘাতের সময় হিজবুল্লাহ যখন হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছিল এবং হাইফা সহ বেশ কয়েকটি উত্তরাঞ্চলে হামলা হয়েছিল, যার দরুন মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছিল উল্লেখযোগ্যহারে, সেসময় দেশটি নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে মনস্থির করে। ২০০৬ সালের সেই হামলাই ইসরাইলকে তার নিজস্ব বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

আয়রন ডোম কিভাবে কাজ করে?

যখন কোন রকেট ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করা হয়, তখন সনাক্তকরণ এবং ট্র্যাকিং রাডার আগত ট্র্যাজেক্টোরি সনাক্ত করে এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় তথ্যের জানান দেয় যা রকেটের গতিপথ, গতি এবং প্রত্যাশিত লক্ষ্য সনাক্ত করতে দ্রুততার সঙ্গে গণনার মাধ্যমে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে। 

যদি আগত রকেটটি একটি জনবহুল এলাকা বা কৌশলগত স্থাপনার দিকে পরিচালিত হয়, তবে লঞ্চারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তামির ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং রকেটটি মধ্য-আকাশে ধ্বংস করার সামর্থ্য রাখে। আয়রন ডোম সিস্টেমের নির্মাতা - রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেম দাবি করছে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাফল্যের হার ৯০ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত ২ হাজারেরও বেশি বাধা অতিক্রম করেছে।

এই সময় কি ঘটেছে?

আপাতদৃষ্টিতে প্রায় নিখুঁত এমন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ফলে হামাসের কাছে থাকা রকেটের ব্যারাজের চাইতে এটিকে অপ্রতিরোধ্য বলে মনে করা হয়েছিল। কয়েক বছর ধরে হামাস গোষ্ঠী, আয়রন ডোম সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারা স্যালভো রকেট আক্রমণ (অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক রকেট উৎক্ষেপণ) দিয়ে সিস্টেমটিকে অপ্রতিরোধ্য করতে অনেকাংশে সফল হয়েছে। তার ফলস্বরূপ এবার মাত্র ২০ মিনিটে ৫ হাজারেরও বেশি রকেট উৎক্ষেপণে সফল হয়েছে হামাস। 

হামাস ক্রমাগত তাদের অপরিশোধিত রকেট প্রযুক্তির উন্মেষ ঘটিয়ে আসছিল এবং কয়েক বছর ধরে এটি তেল আবিব এমনকি জেরুজালেম সহ ইসরায়েলের বড় শহরগুলোয় হামলার জন্য যথেষ্ট যোগ্যতর করে প্রস্তত করেছে।

যদিও হামাস কর্তৃক উৎক্ষেপিত রকেট তামির ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে অনেক সস্তা। ইসরায়েলের জন্য আয়রন ডোম প্রচুর ব্যয়বহুল। 

২০১২ সালে হামাসের সাথে সংঘর্ষের সময় ইসরায়েল দাবি করেছিল যে গাজা উপত্যকা থেকে বেসামরিক এবং কৌশলগত এলাকাগুলোর দিকে ছোড়া ৪০০ টি রকেটের ৮৫ শতাংশ প্রতিহত করতে সক্ষম এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। 

আর ২০১৪ সালের সংঘাতের সময় হামাস কয়েকদিন ধরে সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছিল। তার মধ্যে ৮০০ টিরও বেশি প্রতিহত করা হয়েছিল এবং প্রায় ৭৩৫ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিল ইসরায়েল। সেসময় ইসরায়েল বাহিনী ৯০ শতাংশ সফলতার দাবি করে।

আয়রন ডোমের উন্নতি এবং ২০২১ সালের আক্রমণ

২০২১ সালে ইসরায়েল বলেছিল, তারা অতিরিক্ত হুমকি মোকাবিলারার জন্য আয়রন ডোম ব্যবস্থার সক্ষমতার উন্নতি ঘটিয়েছে। তারা রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র সালভোসের বাধা অতিক্রমেও সিস্টেমটিকে আপগ্রেড করেছে।

দেখা গেছে, ২০২১ সালের মে মাসে দুই সপ্তাহব্যাপী ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সময় ১ হাজারের বেশি রকেট ছোড়ে হামাস। আর পুরো সংঘাতকালে তারা সাড়ে ৪ হাজার রকেট নিক্ষেপ করে।

সে সময় ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, হামাসের ছোড়া রকেটের বিরুদ্ধে আয়রন ডোম ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই সফলতার মাত্রা দেখিয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //