বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ, চোখের পানিতে আফগান মেয়েদের প্রতিবাদ

গত বছর আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের সময় কট্টরপন্থী তালেবানরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা তাদের কট্টর অবস্থান থেকে সরে আসবে। নারী শিক্ষার প্রতি, নাগরিক অধিকারের প্রতি তারা সম্মান দেখাবে। তবে সেই প্রতিশ্রুতির কোনো কিছুই রক্ষা করা হয়নি।

গত মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) তালেবানের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রীর এক চিঠিতে জানানো হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আফগানিস্তানে নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। শিগগিরই এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ ঘোষণায় তালেবানের এমন সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিনদের পাশাপাশি আরও অনেক দেশই এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়। সেই সঙ্গে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ।

এরপরেও অবশ্য আফগানিস্তানের নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা খোলা হয়নি। বুধবার মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গেলেও তাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। রক্ষীদের উপর কড়া নির্দেশ ছিল, বিনা অনুমতিতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

গতকাল বুধবার স্নাতক হওয়া কিছু মেয়েদের ডিগ্রি দেওয়ার অনুষ্ঠান ছিল। সেটা অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রশাসনিক কারণে কিছু মেয়েকে অফিস পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নপূরণ হবে না বলে কান্নায় ভেঙে পড়া নারীরা বাইরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ছেন।

নার্সিং পাঠরত ২৩ বছর বয়সী  এক নারী সংবাদসংস্থা এএফপিকে জানান, 'আমার নিজেকে খাঁচায় বন্দি পাখির মতো মনে হচ্ছে। আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরছি, কাঁদছি, আর প্রশ্ন করছি, কেন শুধু আমাদের সঙ্গে এমন হবে?

আসন্ন পরীক্ষার জন্য তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মেয়েদের জন্য যাবতীয় পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে ওই ছাত্রী বলেন, পরীক্ষার জন্য নেওয়া আমার এই প্রস্তুতি শোকে পরিণত হয়েছে। আমি আর পড়তে পারব না। আমার স্বপ্নপূরণ হবে না। মনে হচ্ছে, মেয়েদের জীবন্ত কবর দেওয়া হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সামনে প্রচুর নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে বলে সেখানে বা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ কম হচ্ছে। বরং আফগানিস্তানের মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ফেসবুক ও টুইটারে হ্যাশট্যাগ লেটহারলার্ন ভাইরাল হয়েছে।

তামানা জানান, তিনি ভোর সাড়ে ৬টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যান। ছাত্রদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল। ছাত্রীদের দেখলেই বন্দুক তুলে বলা হচ্ছিল, বাড়ি যাও। ফেসবুকে হাদিয়া লিখেছেন, এরপর মেয়েদের বাড়ির বাইরে রাস্তাতেও নামতে দেওয়া হবে না।

নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার প্রতিবাদ করে জাতিসংঘ দাবি জানায়, অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। আর মেয়েদের জন্য ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে স্কুল খুলতে হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, তালেবানকে এর ফল ভোগ অরতে হবে। বিশ্বের অন্যকোনো দেশই মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করেনি। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, এটা পিছনের দিকে যাওয়ার একটা উদাহরণ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //