হুতিদের স্থাপনায় সৌদি জোটের হামলা

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানায় বোমা হামলা চালিয়ে একটি টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি জোট। 

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা এসপিএর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, রাজধানী সানার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পাশের স্যাটেলাইটের জন্য একটি গ্রাউন্ড স্টেশন লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়েছেন কি-না তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।

সৌদি জোটের বরাত দিয়ে এসপিএ বলছে, বিদ্বেষমূলক অভিযান চালানোর জন্য হুতি বিদ্রোহীরা সানায় টেলিকমিউনিকেশন মন্ত্রণালয় ব্যবহার করেছিল। পরবর্তীতে হুতি পরিচালিত টেলিভিশন চ্যানেল আল-মাসিরাহ টেলিকমিউনিকেশন মন্ত্রণালয় লক্ষ্য করে সৌদি জোটের হামলার তথ্য জানায়। হামলায় টেলিকম কোম্পানি টেলিইয়েমেনের ভবন এবং আশপাশের অন্যান্য ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের আভা বিমানবন্দরে হুতিদের ড্রোন হামলার জবাবে ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে বলে সৌদি জোটের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। আভা বিমানবন্দরে হুথিদের বোমা-বোঝাই ড্রোন আটকে দেওয়ার পর ধ্বংস করে সৌদি প্রতিরক্ষা বাহিনী। এ সময় ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে বাংলাদেশি নাগরিকসহ অন্তত এক ডজন মানুষ আহত হন।

সানায় হুতিদের ড্রোন উৎক্ষেপণ স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছিল সৌদি জোট। সোমবার হামলার আগে বেসামরিক নাগরিকদের ওই এলাকা ছাড়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

সৌদি জোট প্রায়ই ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। গত মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে হুতিদের নজিরবিহীন ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুই ভারতীয় এবং এক পাকিস্তানির প্রাণহানির পর ইয়েমেনে হুতিদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ এলাকা ধ্বংস করে দেয় জোটের অন্যতম সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাত।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুতি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।

কিন্তু এই অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।

ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ছায়াযুদ্ধ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং এক সময়ের স্বচ্ছল এই দেশ। জাতিসংঘ বলছে, ইয়েমেনের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খাদ্য ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের গুরুতর সংকটে ভুগছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //