ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনায় কী আছে

বহুল প্রতীক্ষিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

এতে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অবিচ্ছেদ্য রাজধানী রাখার অঙ্গীকার আছে। তিনি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রেরও প্রস্তাব করেছেন এবং পশ্চিম তীরের ইহুদী বসতির উপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে তার।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, তার প্রস্তাব ফিলিস্তিনিদের জন্য শেষ সুযোগ হতে পারে।

এই প্রস্তাবকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে এটি নাকচ করেছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

ট্রাম্পের পরিকল্পনায় কী আছে?

হোয়াইট হাউসে নিজের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আজ ইসরায়েল শান্তির পক্ষে বড় ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে। আমার দূরদৃষ্টি বলছে, এটা উভয় পক্ষের জন্যই একটি জয়ের সুযোগ, একটি বাস্তবসম্মত দ্বি-রাষ্ট্রের সমাধান যা ইসরায়েলের নিরাপত্তার মুখে থাকা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের মর্যাদার প্রতি হুমকি দূর করবে।

তার প্রস্তাবগুলো হলো:

- যুক্তরাষ্ট্র সেই সেসব এলাকার উপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেবে যা ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসরায়েলের অংশ। এই পরিকল্পনায় একটি আনুমানিক মানচিত্রের কথা বলা হয়েছে যা ট্রাম্পের মতে, ভূমি ও সীমানাগত ত্যাগ যা ইসরায়েল করতে আগ্রহী।

- এই মানচিত্রটি ফিলিস্তিনি ভূমির আয়তন দ্বিগুন করবে এবং পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি রাজধানী করার সুযোগ তৈরি করবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র একটি দূতাবাস গড়বে বলে জানান ট্রাম্প। ফিলিস্তিনের দ্য প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) বলেছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের তাদের উল্লেখিত ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের ১৫% এর উপর নিয়ন্ত্রণ দেবে মাত্র।

- জেরুজালেম ইসরায়েলের অবিচ্ছেদ্য রাজধানী থাকবে। পবিত্র এই শহরকে নিজেদের বলে দাবি করে থাকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয়ই। ফিলিস্তিনিদের দাবি অনুযায়ী, ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমের যে অংশ দখল করে নিয়েছে তা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী।

- ফিলিস্তিনিদের জন্য নিজেদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জনের সুযোগ বলেছেন, কিন্তু তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

- কোনো ফিলিস্তিনি বা ইসরায়েলিকেই তাদের বাড়ি থেকে উৎখাত করা হবে না। এটা থেকে বোঝা যায়, ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরে বসতি থাকবে।

- ইসরায়েল জর্দানের বাদশাহর সঙ্গে কাজ করবে এটা নিশ্চিত করতে যে, জেরুজালেমে ইহুদীদের পবিত্র অঞ্চল টেম্পল মাউন্ট ও মুসলিমদের আল-হারাম আল শরিফ যাতে সংরক্ষিত থাকে। এই অঞ্চলটি পরিচালনায় গঠিত ট্রাস্টটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে জর্দান।

-  ট্রাম্পের প্রস্তাবিত মানচিত্রে ফিলিস্তিনের জন্য যে ভূমি বরাদ্দ করা হয়েছে তা চার বছরের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং এতে কোনো ধরণের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে না। এই সময়ের মধ্যে ফিলিস্তিনিরা চুক্তি সম্পর্কে পড়াশোনা করে, ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতা করবে ও রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মানদণ্ড অর্জন করবে।

কোন কোন বিষয় ঝুঁকির মুখে রয়েছে?

মধ্যপ্রাচ্যের অন্য যেকোনো সংঘাতের চেয়ে ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনের মধ্যে দ্বন্দ্ব সবচেয়ে একগুঁয়ে। যদিও ১৯৯৩ সালে দুই পক্ষ একটি শান্তি চুক্তিতে সই করেছিল, তারপরেও ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে দুই পক্ষ একে অপর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে।

জেরুজালেম: ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয়েই এই শহরের উপর নিয়ন্ত্রণ দাবি করে। ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে জর্দানের কাছ থেকে এর পূর্বাঞ্চল দখল করে নিয়েছিল, তারা পুরো জেরুজালেমকেই নিজেদের রাজধানী দাবি করে। ফিলিস্তিনারও পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানী দাবি করে।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মর্যাদা: ফিলিস্তিনিরা নিজেদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র চায়। যার মধ্যে থাকবে পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেম। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছেন কিন্তু এটির যে আকার হবে তা নিয়ে তার আপত্তি রয়েছে। নেতানিয়াহু বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে ডিমিলিটারাইজড ও তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার সক্ষমতা থাকবে কিন্তু তা ইসরায়েলের প্রতি হুমকি হবে না।

স্বীকৃতি: ইসরায়েলের দাবি, যেকোনো ধরণের শান্তি চুক্তিতে ইসরায়েলকে ইহুদিদের জাতি রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি থাকতে হবে। তারা মনে করে, এটি না হলে ফিলিস্তিনিরা ইহুদীদের ভূমির উপর তাদের মালিকানার দাবি অব্যাহত রাখবে, যার কারণে সহিংসতা থেকেই যাবে। ফিলিস্তিনিরা বলেছে, ইসরায়েল যা দাবি করে সেটি তাদের নিজস্ব বিষয়, কিন্তু ইসরায়েলকে ইহুদী রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়াটা হবে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত আরব বাসিন্দা, যারা মুসলিম, খ্রিস্টান ও দ্রুজ তাদের স্বার্থ বিরোধী।

সীমানা: ফিলিস্তিনের সীমানা কোথায় হওয়া উচিত তা নিয়ে দুই পক্ষেরই আলাদা মতবাদ রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের প্রস্তাব অনুযায়ী, ১৯৪৯ ও ১৯৬৭ সালের অস্ত্র বিরতি চুক্তি যা ইসরায়েলকে পূর্ব জেরুজালেম, গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে আলাদা করেছিল সে অনুযায়ী সীমানা রেখা হওয়া উচিত। ইসরায়েল বলে, ওই রেখাগুলো সামরিকভাবে অরক্ষনীয়/অযৌক্তিক ও এগুলো কখনোই স্থায়ী হতে পারে না। তারা বলেনি যে কোথায় সীমান্ত হওয়া উচিত তবে এটা বলেছে যে তাদের নিজেদের পূর্ব সীমানা হওয়া উচিত জর্দান নদীর তীর ধরে।

বসতি: ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েল প্রায় ১৪০টি বসতি গড়ে তুলেছে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে। যার মধ্যে ১২১টি আউটপোস্ট বসতি সরকারের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলোতে প্রায় ছয় লাখ ইহুদী বাস করে। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই বসতিকে অবৈধ মনে করে থাকে, যদি ইসরায়েল এর বিরোধিতা করে। ফিলিস্তিনিরা বলে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র তৈরির জন্য এসব বসতি সরিয়ে ফেলা উচিত। নেতানিয়াহু এসব বসতি কখনোই সরিয়ে ফেলা নয় বরং এসব এলাকা ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের অন্তর্ভূক্ত করার কথা বলছেন।

শরণার্থী: জাতিসংঘ বলছে, প্রায় ৫৫ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে মধ্যপ্রাচ্যে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে তারা (ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, শরণার্থীর সংখ্যা ৬০ লাখ)। -বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //