শতবর্ষে প্রথম বদলালো টাইমসের লোগো

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন প্রথমবারের মতো এর কভার পেজের লোগো বদল করেছে। ১৯২৩ সালে যাত্রা শুরুর পর এবারই প্রথম লোগো বদল করলো ম্যাগাজিনটি। এর কারণ হিসেবে ম্যাগাজিনটির প্রধান সম্পাদক এবং সিইও এডওয়ার্ড ফেলসেনথাল করোনা মহামারীর কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, করোনা মহামারীর কারণে মানবজাতির নানা কর্মকাণ্ড থেমে যাওয়ায় মানুষের বাইরের প্রকৃতির অনেক উন্নতি ঘটেছে, নতুন যাত্রা শুরু করেছে প্রকৃতির অনেক কিছুই। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো উপসাগর এলাকায় বসবাসকারী সাদা মুকুটধারী চড়ুই নামের এক প্রজাতির পাখির গানের সুর আগের চেয়ে অনেক শান্ত এবং মিষ্টি হয়ে উঠেছে। করোনা মহামারীর সময়ে প্রকৃতিতে আরো কী কী পরিবর্তন ঘটেছে তা নিয়ে সায়েন্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘Singing in a Silent Spring’ শিরোনামের একটি গবেষণা নিবন্ধের উল্লেখও করেন তিনি।

এডওয়ার্ড ফেলসেনথাল বলেন, প্রায় এক বছর ধরে নানা বেদনা, কষ্ট, বিশৃঙ্খলা এবং ক্ষয়-ক্ষতির পর বিশ্বের জাতিগুলো পুনরায় মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এটাও পরিষ্কার যে এক জনমে একবারের মতো আমরা নিজেদের জীবনের সুর বদলানোরও সুযোগ পেয়েছি। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রকাশিত আমাদের এই সপ্তাহের ইস্যুতেও সেই সুযোগের বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফোরামের চেয়ারম্যান ক্লস শোয়াব এই সুযোগের নাম দিয়েছেন ‘The Great Reset’ তথা ‘মহা নতুন যাত্রা’।

করোনাকালের এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে আমরা বিশ্বকে আরো স্বাস্থ্যবান, আরো প্রাণোচ্ছল, টেকসই এবং ন্যায়পরায়ণ করে তুলতে পারি? আমরা যেন আগের মতোই থেকে না যাই, তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যক্তি, ব্যবসা এবং সরকার সকলে মিলে কী করতে হবে আমাদের?

‘পৃথিবীর একটি উজ্বল ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী হওয়াটা একটু কঠিনই বটে’- এমনটা স্বীকার করে নিয়েই ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের চেয়ারম্যান ক্লস শোয়াব প্রস্তাব করেন, কোম্পানিগুলোকে মুনাফার চেয়ে বরং অন্য কিছুকে তথা পৃথিবীকে ভালো রাখার বিষয়টিকেই তাদের সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। অর্থনীতিবিদ মারিয়ানা ম্যাজুকাটো আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোর রূপান্তরের একটি রোডম্যাপ দিয়েছেন। ড্যানিশ স্থপতি জারকে ইনগেলস মহাসবুজ এক পৃথিবী তৈরির একটি উচ্চাভিলাষী রূপরেখা হাজির করেছেন।

টাইমের সাংবাদদাতারা বিশ্বের বড় বড় ব্যবসায় নেতা এবং নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। এছাড়া ব্রিটিশ যুবরাজ হ্যারি এবং তার স্ত্রী মেগানের সঞ্চালনায় অক্টোবরে অনুষ্ঠিত বিশেষ ‘টাইম হান্ড্রেড টকস'-এ বিশেষজ্ঞদেরও যুক্ত করা হয়েছে কীভাবে আরো উন্নত একটি ডিজিটাল বিশ্ব গড়ে তোলা যায় সে বিষয়ে মতামতের জন্য।

আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলের চেয়ে বরং অন্য কিছু ঘটনা এবার বেশি ভূমিকা পালন করবে আগামী দিনের বিশ্বের চেহারা বদলে দিতে। কেননা আমেরিকানরা নিজেরাই ভাবতে শুরু করেছে তাদের নিজেদেরই ‘রিসেট বোতামটি’ টেপার সময় এসেছে কিনা।

টাইমের জাতীয় রাজনৈতিক সংবাদদাতা মলি বল লিখেছেন, ‘আগামী ৩ নভেম্বর বা এর কিছুদিন পরই হয়তো আমরা অবশেষে এই প্রশ্নের উত্তরটি পেয়ে যাব যে, বিগত চারটি গোলমেলে বছরের অর্থ কী ছিল? এই সিদ্ধান্ত কী নীতি অনুসরণ করা হবে সে বিষয়ে নয় বরং আমরা সমষ্টিগতভাবে কী ধরণের বাস্তবতায় বাস করতে চাই সে বিষয়ে।’

এডওয়ার্ড ফেলসেনথাল বলেন, এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকে চিহ্নিত করার জন্যই আমরা আমাদের প্রায় ১০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো আমাদের ইউএস সংস্করণের লোগো বদল করেছি। এই লোগোর মাধ্যমে আমেরিকানদেরকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের উপদেশ দেয়া হচ্ছে। কেননা এবারের নির্বাচনটি হতে যাচ্ছে আমাদের জীবদ্দশায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এমনকি করোনাকালে কীভাবে নিরাপদে ভোট দিতে হবে সে বিষয়েও আমরা একটি গাইডলাইন সরবরাহ করেছি। লোগোর ছবিটিতেও সে ভাবই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে, করোনা মহামারী গণতন্ত্রের প্রতি কিছু অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেও আমরা ভোটের মাধ্যমে আমাদের গলার স্বর এবং ক্ষমতা ব্যবহারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা এমন এক বিরল ঐতিহাসিক মুহূর্তে এসে দাঁড়িয়েছি যা ইতিহাসকে এর আগের আর পরের বলে ভাগ করবে পরবর্তী প্রজন্মগুলোর জন্য।


- ইনডিপেনডেন্টটিভি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //