একুশ শতক বনাম বিংশ শতকের সম্পাদকীয় ভাবনা

বিশ্বের জনপ্রিয় বেশ কিছু উপন্যাস শিশু ও বয়স্কদের সমানতালে আকৃষ্ট করে এসেছে এতদিন ধরে। আর এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আগাস্টা ক্রিস্টির মত লেখকের কালজয়ী লেখকের বই। এছাড়াও শিশু উপন্যাসের লেখক রোয়াল্ড দাহল ও ইয়ান ফ্লেমিংয়ের জেমস বন্ডের মত বিশ্বখ্যাত গ্রন্থও রয়েছে। 

মূলত বর্ণবাদ ও যৌন আবেদনময়ী ভাষা ছাড়াও নানারকম আপত্তিজনক শব্দ ব্যবহারের ফলে এসব উপন্যাস এবারে সংশোধনের কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে অবশ্য সহমত জানিয়ে রোয়াল্ড বলছেন, চমকপ্রদ এসব কালজয়ী চরিত্রগুলো এখনও শিশুরা উপভোগ করে থাকেন। আর তাই আপত্তিজনক শব্দগুলো সরিয়ে দেওয়া উচিত।  

তবে এমন সিদ্ধান্ত মুক্ত সাহিত্য চর্চার জন্য কিছুটা হুমকিস্বরূপ। সেসময়ের সমকালীন ভাবনার মিশ্রণে অনেক ভাষাই ব্যবহৃত হয়েছে যা হয়ত বর্তমানের ভাবনার সঙ্গে যায় না। আবার এটাও ঠিক এরকম পদক্ষেপ একজন লেখকের চিন্তার সঙ্গে তার লেখনীর স্বাধীনতার প্রসঙ্গকেও করতে পারে আঘাত। আর এমন নীতি এ মুহুর্তেই আরোপ করাও অতটা সহজ নয় বলেও ধারণা অনেক লেখকের। 

একসময় সালমান রুশদির সাহিত্য চর্চার ভাষা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। তারপরেও সেসব শব্দ সেন্সরের প্রয়োজনীয়তার কথা কেউ বলেনি। অনুরুপ ১৯৩৯ সালে প্রথম প্রকাশিত ক্রিস্টির লেখা- ‘ এন্ড দেন দেয়ার ওয়্যার নান ‘ গ্রন্থেও তৎকালীন বর্ণবাদের নানা আপত্তিকর বিষয় লেখা হয়েছিল। এমনকি বইটি ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনে সংরক্ষিত ছিল। অথচ যেটির কোনো মার্কিন সংস্করণ নেই আজও। 

সম্প্রতি কে লি গুইন তার ক্যাট উইং সিরিজ থেকে ‘ ডাম্ব’, ‘ লেইম ’ ‘ অপদার্থ ’, ‘কুইরের’ মত বেশ কিছু আপত্তিজনক শব্দ বাদ দেওয়ার জন্য প্রকাশককে অনুমতি দিয়েছেন।   

তবে প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমন শব্দগুলো ক্ষতিকর? একজন লেখক তার ব্যক্তিগত ধারণা থেকে তার সাহিত্যে নিজস্ব ভাষাগত কিছু শব্দ চয়ন ঘটিয়ে থাকে পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে। যেখানে একান্তই তার নিজের ভাবনাকে প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। 

ক্রিস্টির ‘ ডেথ ও নাইল (১৯৩৭)’ গ্রন্থের নতুন সংস্করণে ‘ ন্যাটিভ ’ এর বদলে ‘ লোকাল ‘ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। 

এটি যারা পড়েছেন তারা দেখেছেন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা কীভাবে বিশ্বব্যাপী বর্ণবাদী আচরণ ছড়িয়ে দিয়েছিল।  

অন্যদিকে ২০২১ সালে নেটফ্লিক্সে প্রচারিত এস্টেট অব দাল এ বর্ণবাদ, লিঙ্গ বৈষম্য ও আবেদন সংক্রান্ত শব্দগুলো ব্যবহারে করেছে সতর্কতার সঙ্গে। এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমাও চেয়েছে ভুলে এরকম শব্দ ব্যবহার হয়ে থাকলে। 

বর্তমান সময়ে সম্পাদকবৃন্দ তাদের লেখায় লিঙ্গ সমতার বিষয়টি মাথায় নিয়েই লিখে থাকেন। কিন্ত এ পরিবর্তনটি এখনও যেন পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে অনেক সাহিত্যিকের মত। 

জেমস বন্ডের উপন্যাসটি আবারও নতুন করে কিছু পরিবর্তননের মধ্যদিয়ে মুদ্রণের ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে সুধীমহল হতে। এ উপন্যাসের ‘ লাইভ এন্ড লেট ডাই ‘ এর এক দৃশ্যে একটি নাইট ক্লাবের হারেম খানার দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় বেশ কিছু নর্তকীর খোলামেলা দৃশ্য দেখানো হয়েছিল। আর এর পরের সংষ্করণে লেখা ছিল, বন্ড একটি কক্ষে উত্তেজিত ছিল যেটিকে বৈদ্যুতিক শকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আর এটিকেই বলা হচ্ছে সংশোধনী। 

পরিশেষে, লেখকদের একাট্টা বক্তব্য হলো- সমাজের মানুষের জন্য অসংগতিপুর্ণ , অসংলগ্ন, রুচির সঙ্গে যায় না এমন শব্দ চয়নে সতর্ক থাকা জরুরি। তবে পুনমুদ্রণের বিষয়ে খুব আপত্তিকর কোনো ভাষা বা দৃশ্য গল্প, উপন্যাসে না থাকলে সেটি লেখকের অনুমতির বাইরে কখনই করা যাবে না বলেও অভিমত লেখক সমাজের। 

সূত্র:ওয়াশিংটন পোস্ট   

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //