ঘরের কাজে পুরুষ!

নারী যতই উচ্চপদস্থ আসনে বসুক না কেন ঘরের কাজটি তার জন্যই বরাদ্দ। অন্যদিকে পুরুষ কিছু না করলেও রান্নাঘরমুখো হবে না। আমাদের এখানে এখনো অধিকাংশ পরিবারে এটি প্রচলিত। ফলে কর্মজীবী নারীর জন্য বাইরে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে এসেও দুদণ্ড জিরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবা অসম্ভব। পোশাক ছেড়েই কোমরে কাপড় বেঁধে ঢুকে যেতে হয় হেঁশেল ঘরে। 

অন্যদিকে পুরুষ সঙ্গীটি অফিস শেষে আড্ডা মেরে চা-কফিতে ক্লান্তি দূর করে ঘরে ফিরে টিভি দেখে চা খেয়ে আয়েশ করেন। দৃশ্যটি যে বড়ই অমানবিক-সবাই না পারলেও পুরুষের একটি অংশ আজকাল উপলব্ধি করতে পারেন বিষয়টি। ঘরের কাজে নারীর সহকর্মী হচ্ছেন তারা। তা দেখে আবার কারও কারও মানসিক পরিবর্তন ঘটছে। 

রান্না ঘরের কাজে পুরুষ কাঁধ মেলালে নারীর শুধু শারীরিক কষ্টই লাঘব হয় না, সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক উন্নয়নেও প্রভাব ফেলে বিষয়টি। পারিবারিকভাবে সবার আগে দূর হয় লিঙ্গ বৈষম্য। সঙ্গীর কাজের ভাগ নিলে একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা যেমন বাড়ে তেমনই সম্পর্কের উন্নয়ন হয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠা প্রয়োজন সেটি গড়ে ওঠে। এতে দাম্পত্যের ভারসাম্য যেমন রক্ষা হয়, তেমনি কাজের সুষম বণ্টনও হয়। পরিবারে ছোট সদস্যরাও বিষয়গুলো দেখতে দেখতে বড় হয়। ফলে তাদের মননে লিঙ্গ বৈষম্যের দিকটা দখল নিতে পারে না। যার প্রভাব পড়ে সমাজের ওপর। সামগ্রিকভাবে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। 

সে কারণে প্রথমেই প্রয়োজন কাজের ক্ষেত্রে লিঙ্গভেদের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা। পুরুষের কাজ, নারীর কাজ বলে আলাদা করার মানসিকতা বদলানো খুবই জরুরি। 

শুরুতেই যে কথাটি মাথায় নেওয়া প্রয়োজন তা হলো, ঘরের কাজ নারীর এবং সে কাজে হাত লাগিয়ে পুরুষ মহাভারত উদ্ধারে নেমেছে এমনটা ভাবার সুযোগ নেই। বরং দুজনের সমান অংশগ্রহণ প্রয়োজন মেনে নিয়ে কাঁধে কাঁধ মেলাতে হবে। পরিবারের কিংবা পরিচিতজনদের বিদ্রুপে ভয় পেলে চলবে না। মনে রাখতে হবে যারা ব্যঙ্গ করছেন সমস্যা তাদের। কেননা এটি মোটেও হাসি-ঠাট্টার মতো কিছু নয়। 

ঘরের কাজকে কর্মক্ষেত্রের প্রতিদিনের কাজগুলোর মতোই নৈমিত্তিক বিষয় বলে মনে করতে হবে পুরুষকে। মাথায় রাখতে হবে অংশ নিয়েই ফলাও করে প্রচারের কিছু নেই। তবে অতি উৎসাহে একহাতে সব করার ঝোঁক থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিকভাবে অংশ নিতে। আর মাথায় রাখতে হবে শুধু আজ নয় প্রতিদিনই কাজগুলো করতে হবে। 

যেহেতু পারিবারিক ও সামাজিক কারণে এতকাল নারীকেই সামলাতে হয়েছে রসুই ঘর সেহেতু তার অভিজ্ঞতা স্বাভাবিকভাবেই বেশি। তাই অভিজ্ঞতার মাপকাঠিতে তার থেকে শেখার আছে। অতএব নারী সঙ্গীর সঙ্গে পরামর্শ করেই কাজে হাত দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে ঝাক্কি ঝামেলা কমাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করুন। 

কখনো কর্মস্থলের কাজের চাপের অজুহাত দিয়ে ঘরের কাজ এড়িয়ে যাবেন না। বরং বাইরের কাজে যতটা মনোযোগ দিচ্ছেন ঘরেও ততটাই দিন। পরিবারের শিশুকেও উৎসাহ দিন ঘরের কাজে অংশ নিতে। এতে তাদের ভেতরেও এক রত্তি বয়স থেকেই কাজে সুষম বণ্টনের বিষয়টি গড়ে উঠবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //