আত্মবিশ্বাসহীনতা যখন অন্তরায়

বিখ্যাত মোটর ভেহিকেল কোম্পানি ‘ফোর্ড’-এর প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ড একবার বলেছিলেন, ‘তুমি যদি মনে করো যে পারবে, তাহলে সেটাই সত্যি। আবার তুমি যদি মনে করো পারবে না, তাহলে সেটাও সত্যি। এখন সিদ্ধান্তটা তোমারই।’ জীবনে কোনো কিছু পারা বা না পারার মাঝে প্রধানতম অন্তরায় আত্মবিশ্বাসহীনতা। জীবনে কিছুই করা সম্ভব নয় যদি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস না থাকে। নিজের ওপর বিশ্বাসের ঘাটতি দেখা গেলে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস অর্জন বা বৃদ্ধি করা সম্ভব। কিন্তু তার আগে কোন বৈশিষ্ট্যগুলো একজন আত্মবিশ্বাসহীন মানুষের পরিচায়ক তা শনাক্ত করা জরুরি।

জেনে নিই কী সেসব বৈশিষ্ট্য...

সবার মন জুগিয়ে চলা : নিজের প্রতি বিশ্বাস কম-এমন ব্যক্তি সব সময় সবার মন জুগিয়ে চলতে চায়। দুঃখজনক হলেও এটা সত্য যে ‘পিপল প্লিজিং’ মানুষদের যুগে যুগে সমাজে কদর পেতে দেখা গেছে। তবে এটা কোনো ভালো গুণ না। প্রকৃতপক্ষে এটা ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা। পক্ষান্তরে, আত্মবিশ্বাসী মানুষ কখনোই তোষামুদে হয় না। কে কী বলবে তা ভেবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। 

অন্যকে ছোট করা : আত্মবিশ্বাসহীন ব্যক্তিরা অন্যকে নিয়ে ক্রমাগত মজা করতে থাকে। তারা হীনম্মন্যতায় ভোগে বলেই এমন কাজটি করে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, অন্যকে ছোট করার মাঝে কোনো সার্থকতা নেই। কাজেই কারও মধ্যে যদি এই বৈশিষ্ট্য থাকে, শুধরে নেওয়ার এখনই সময়। 

জ্ঞান ফলাতে সদা ব্যস্ত : এটা ধ্রুব সত্য-যে কম জানে, সে নিজের জ্ঞান ফলাতে সদা ব্যস্ত থাকে। আত্মবিশ্বাসহীন মানুষরাও এমনই হয়। নিজের জানার বাইরেও যে আরও কিছু আছে, এই সত্যটা সহজে মেনে নিতে পারে না। অন্যদিকে অন্যদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা আত্মবিশ্বাসী মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তারা সব সময়ই ভালো পরামর্শ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকে।

‘ভিকটিম গেম’ সাজানো : আত্মবিশ্বাসহীন মানুষেরা যে কোনো দায়িত্বই নিজের কাঁধে নিতে ভয় পায়। তারা নিজের দোষ স্বীকার করতে চায় না, বরং নিজেদের ভিকটিম হিসেবে দেখিয়ে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করে। সব দোষ পরিবেশ-পরিস্থিতি বা অন্য কারোর ওপর চাপিয়ে দেয়। তবে আত্মবিশ্বাসী মানুষ কখনো এমনটা করে না। প্রয়োজনের সময় তারা যে কোনো কাজের দায়িত্ব ও নেতৃত্ব নিতে পারে। 

অন্যের সফলতা মানতে না পারা : আত্মবিশ্বাসহীনতা যে শুধু নিজের সফল হওয়ার পথের কাঁটা, তা নয়। বরং এসব ব্যক্তি নিজের কাছের মানুষের সফলতাও সহ্য করতে পারে না। ক্রমাগত অন্যদের সঙ্গে নিজের তুলনা করতে থাকে। অন্যদিকে আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি কারও প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায় না। তাদের প্রতিযোগিতা কেবল নিজের সঙ্গেই হয়। 

অতীত রোমন্থন : অতীতের কোনো স্মৃতি, কষ্ট বা ব্যথা বয়ে বেড়ানোর একমাত্র অর্থ হলো, নিজের বর্তমান সত্তাকে অপমান ও উপেক্ষা করা। যেটা একটা মানুষকে আত্মবিশ্বাসহীন করে দেয়। পক্ষান্তরে একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ অতীত থেকে শিক্ষা নেন, কিন্তু নিজেকে অতীতে আটকে রেখে নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে না।

সারাক্ষণ কাজ দেখানো : যে মানুষটি আত্মবিশ্বাসী নয় সে দেখা যায় তার পুরো জীবনটাই কাজের পেছনে ব্যয় করে ফেলে। তারা যেমন পরিবারকে সময় দিতে জানে না, তেমনই নিজেকেও সময় দিতে পারে না। অন্যদিকে আত্মবিশ্বাসী মানুষ কাজে খুব স্মার্ট ও দক্ষ হয়ে থাকে। তারা কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনকে সুন্দর ও সুষমভাবে আলাদা করতে পারে। 

মোদ্দাকথাটি হচ্ছে, আত্মবিশ্বাস না থাকলে জীবনে কোনো কিছুই সম্ভব নয়। এ কারণেই এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী এডমন্ড হিলারি বলেছিলেন, পর্বত নয়, নিজেকে জয় করা জরুরি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //