রোজা ভাঙা নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা

আপাতদৃষ্টিতে রোজা সহজ এবং সাধারণ একটি ধর্মীয় আচরণের বিষয় হলেও এটি নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত। নির্দিষ্ট কয়েকটি কারণের বাইরে আরও কিছু বিষয়কে রোজা ভাঙার কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। কিন্তু সেগুলো আদতে রোজা ভাঙার মতো কোনো কারণই নয়। কিন্তু সমাজে প্রচলিত থাকার কারণে রোজাদাররা সেগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম বলেন, ‘মানুষ এগুলো জানাশোনা বা পড়াশোনার অভাবে বলে।’ রোজা ভাঙা নিয়ে প্রচলিত তেমনই কিছু ভুল ধারণা হলো...

লালা গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যায় : অধ্যাপক শামছুল এ বিষয়ে বলেন, ‘মুখের লালা গিলে ফেললে কিছু হয় না রোজার। এ বিষয়ে ধর্মে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। অর্থাৎ ইন্টার্নাল কিছু পেটে ঢুকলে রোজা ভেঙে যাবে না।’ তবে অন্য কারও মুখের লালা যদি নিজের মুখে যায়, তাহলে রোজা থাকবে না। রোজা পালন করা অবস্থায় সঙ্গীকে চুমু খাওয়া যাবে না।

ব্রাশ করা যাবে না : রোজা রাখা অবস্থায় দাঁত ব্রাশ করা যাবে না। তবে দীর্ঘ সময় দাঁত ব্রাশ না করলে মুখে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। কিন্তু এই গন্ধ বিষয়ে বলতে শোনা যায়, রোজাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধও ভালো বা এতে বিরক্ত হওয়া যাবে না। এ বিষয়ে অধ্যাপক শামছুল বলেন, ‘দাঁত ব্রাশ করলে রোজার কিছু হবে না। তবে পেস্ট ভুলে গলায় চলেও যেতে পারে। পেস্ট গলায় গেলে রোজা মাকরুহ হবে। সেজন্য সেহরি করার আগে ব্রাশ করাই ভালো।’

নখ-চুল কাটা যাবে না : অধ্যাপক শামছুল বলেন, ‘নখ, চুল কাটা যাবে না; এটা একদম ভুল কথা। কারণ এগুলোতে তো রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে না। আর এগুলো সাধারণত দিনের বেলাতেই মানুষ করে এবং রোজাও দিনের বেলাতেই রাখতে হয়। তবে দাড়ি কামানোর সময় লক্ষ রাখতে হবে যে ‘গাল কেটে গিয়ে রক্ত না গড়ায়’।

যৌন সম্পর্ক করা যাবে না : কেউ কেউ মনে করেন, পুরো রমজান মাসে সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু বিধিনিষেধ শুধু রোজা থাকা অবস্থায়। আর মানুষ রোজা রাখে দিনের বেলায়।

সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না : অধ্যাপক শামছুল বলেন, ‘মানুষের মনে গেঁথে থাকা এই ধারণা ভিত্তিহীন। সুগন্ধি বলতে আতর ব্যবহার করা যাবে, এটা তো নবীর সুন্নত। যুগে যুগে নবী রাসুলরা আতর ব্যবহার করে গেছেন। এটা ব্যবহারে কোনো নিষেধ নেই।’ তবে পারফিউম ব্যবহারের বিষয়ে এক ধরনের ‘সতর্কতা’ আছে এবং ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকলেই বেশি ভালো হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

‘ভুল করে’ পানাহার করলে রোজা ভাঙে : অধ্যাপক শামছুল বলেন, ‘মনের ভুলে ভরপেট খাবার খেলেও রোজা ভেঙে যাওয়ার কথা ইসলামে বলা হয়নি। এতে রোজা মাকরুহ হতে পারে। রোজা ভেঙে যাবে, যদি ব্যক্তি ইচ্ছা করে পানাহার করে। মুখে খাবার নেওয়ার পর যখনই মনে আসবে, তখন ফেলে দিতে হবে। আর গিলে ফেলা যাবে না।’

ওষুধ সেবন করা যাবে না : যে ওষুধ পেটে যায় সেগুলো নিষেধ। কিন্তু নাকে বা চোখে ড্রপ দিলে কোনো সমস্যা নেই উল্লেখ করে অধ্যাপক শামছুল বলেন, যেসব ওষুধ গিলে খেতে হবে, সেগুলো ইফতারের পরে বা সেহরির আগে খেতে হবে। তবে পেনিসিলিন, ইনজেকশন, ইনসুলিন অথবা টিকা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইনসুলিন ইফতারের আগ মুহূর্তে নিতে হবে। তবে ইমার্জেন্সি হলে সব বৈধ।’

রোজা রেখে ধূমপান করা যাবে : অনেকে মনে করেন, সিগারেট কোনো খাবার বা মাদক না, তাই রোজা রেখে ধূমপান করলে রোজা ভেঙে যাবে না। এ বিষয়ে অধ্যাপক আলমের বলেন, ‘ধূমপান শুধু রোজা থাকা অবস্থায় না, রোজা ছাড়াও হারাম। আর যে ধূমপান করছে, সে তো এটা খেয়ে তৃপ্তি পাচ্ছে। তাই সিগারেট খেলে রোজা ভেঙে যাবে।’

রান্নার সময় খাবারের স্বাদ গ্রহণ করা যাবে না : অনেকে বলেন যে রোজা রেখে খাবারের স্বাদ গ্রহণ করলে রোজা মাকরুহ হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলম বলেন, ‘খাবারের স্বাদ নেওয়া যাবে। লবণ, ঝাল বা স্বাদ বোঝার জন্য জিহ্বায় লাগানো যায়, এরপর ফেলে দিতে হবে।’ সূত্র : বিবিসি




সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //