নিজের যত্ন নিন

প্রতিদিনের জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটে কাজের ব্যস্ততা, দৌড়ে চলা, হিসেবের সঙ্গে তাল মেলানোর ছন্দে। তিক্ত হলেও এ কথা সত্য যে কর্মব্যস্ততার খাতিরে ও পারিবারিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকেই আমরা নিজেকে সময় দেওয়া বা নিজের যত্ন নিতে ভুলে যাই। ব্যতিক্রম খুব কমই হয়। পড়ালেখা, চাকরি, সংসার- সব ক্ষেত্রে দায়িত্ব থাকে, থাকে কাজের চাপ। সবকিছু সামলে নিজের জন্য সময় পাওয়া সোনার হরিণের মতো হয়ে যায়। আপাতদৃষ্টিতে এত ব্যস্ততাকে খুব ইতিবাচক বলে মনে হলেও ভেতরে ভেতরে ধ্বংসের খোরাক বয়ে নিয়ে যায় এই ‘অতি প্রোডাকটিভ’ জীবনযাত্রা। নিজের শরীর ও মনের সমান্তরাল যত্ন না নিলে একদিন ভেঙে পড়তে পারে সবকিছুই। তাই সময় থাকতেই আমাদের উচিত নিজের যত্ন নেওয়া।

নিজের যত্ন বা সেলফ কেয়ার 
সেলফ কেয়ার মানেই স্পা সেলুনে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করা কিংবা মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে রেস্টুরেন্টে সময় কাটানো নয়। সেলফ কেয়ার সেটাই- যেভাবে সময় কাটাতে ভালো লাগে, যে কাজে মনে প্রশান্তি আসে। এই সেলফ কেয়ার একেকজনের জন্য একেক রকম হতে পারে। পুরো সপ্তাহের ব্যস্ততা শেষে কেউ হয়তো একা কিছুটা সময় কাটাতে ভালোবাসে, কেউ হয়তো বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্লোড় করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজেকে যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে দীর্ঘস্থায়ী রোগের থেরাপি পর্যন্ত বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা সারানো সম্ভব। তাদের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে ৭ ধরনের পদ্ধতিতে নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া যায়। সেগুলো হলো- শারীরিক, মানসিক,আবেগীয়, আত্মিক, বিনোদনমূলক, সামাজিক, এবং পরিবেশগত। 

শারীরিক: সুন্দর মানসিক স্বাস্থ্য ও জীবনযাপনের জন্য শরীরচর্চা, হাঁটাহাঁটি ইত্যাদি যত্নের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ শরীর ভালো না থাকলে অন্য আর কিছুই ভালো লাগে না।

মানসিক: মনোযোগ ও কৌতূহলচর্চা নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সারাদিনের কিছুটা সময়ের জন্য হলেও টিভি, ফোন ও কম্পিউটারকে দূরে সরিয়ে সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। 

আবেগীয়: আবেগের অবদমন দিন দিন মানুষকে অসুস্থ করে তোলে। হাসি, আনন্দ, সহমর্মিতা, ভালোবাসা ইত্যাদি সব ইতিবাচক আবেগের চর্চাও তাই হতে পারে নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার অন্যতম পদ্ধতি।

আত্মিক: জীবনের ইঁদুর-দৌড়ে এক মুহূর্ত বসে জীবন নিয়ে ভাবতে বসাই হয় না কত মানুষের। তাই সব ভাবনা সরিয়ে রেখে কিছুক্ষণ শুধু শিশিরের শব্দ খুঁজে বেড়ানোর মতো আত্মিক অনুভূতিগুলোর চর্চাও নিজেকে ভালো রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপাতদৃষ্টিতে ভীষণ অর্থহীন মনে হওয়া এই বিষয়গুলোই মূলত মানুষের জীবনকে অর্থ দেয়।

বিনোদনমূলক: একঘেয়ে জীবনযাপন এড়াতে বিনোদনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিনোদন মনকে সতেজ করে তোলে। বিনোদনের বিভিন্ন রূপ হতে পারে, যেমন সিনেমা, নাটক, গান, খেলাধুলা ইত্যাদি। ব্যক্তির পছন্দমতো বিনোদনের জন্যও একটি বরাদ্দকৃত সময় থাকা দরকার।

সামাজিক: দিনশেষে মানুষ সামাজিক জীব। নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হলে অবশ্যই নিজেকে একটি সুন্দর সামাজিক জীবন দিতে হবে। তাই সময় বের করে পছন্দের মানুষদের সঙ্গে দেখা করা বা কথা বলার চেষ্টা করাও নিজের যতেœরই একটি অংশ। 

পরিবেশগত: যে ঘরে থাকেন, সেটি যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হয়, তবে নিজে ভালো থাকাও কঠিন হয়ে পড়ে। নিজের ঘর, কাজের জায়গা, ছাদের বাগান ইত্যাদি পছন্দের জায়গাগুলোর খেয়াল রাখলেও তাই পরোক্ষভাবে নিজেরই খেয়াল রাখা হয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //