মনের অসুখ ‘মন খারাপ’

ঋতুপর্ণ ঘোষের লেখা একটি জনপ্রিয় গান আছে- ‘মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা/মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়, ব্যাকুল হলে তিস্তা।’ তেমনই আমাদের জীবনেও এমন কিছু মুহূর্ত আসে যখন মনের কোণে মেঘ জমে, অকারণেই ভীষণ খারাপ হয় মন, কিছুই ভালো লাগে না। আবার এমন অনুভূতির সুনির্দিষ্ট কোনো কারণও খুঁজে পাওয়া যায় না তখন। আমরা অনেকেই জানি না যে, মন খারাপ বা কিছু ভালো না লাগাকে বলে মনের অসুখ। শারীরিক যে কোনো সমস্যার সমাধান আমরা যত দ্রুত করতে চাই, মনের অসুখের ক্ষেত্রে যেন ততটাই বিপরীত। মনের অসুখকে গুরুত্ব দেওয়ার মানুষ নেহাত কমই আছে।

মনে রাখতে হবে, মন আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। মনকে যে কোনো ধরনের উদ্বেগ থেকে মুক্ত রাখা মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরি। উৎপাদনশীল সম্পর্কের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের যোগ রয়েছে। আশার কথা, গত কয়েক বছরে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা ও সামাজিক গুরুত্ব- দুইই বেড়েছে। মন ভালো রাখার বা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কাজগুলো খুব বেশি কঠিন নয়। ভালো না লাগার যে সমস্যা, তার কিছু সমাধান জেনে নেওয়া যাক...

নিজের প্রয়োজন বুঝুন: মন সুস্থ রাখতে প্রথমে নিজের প্রয়োজন বুঝতে হবে। এজন্য নিজেকে নিজে সময় দিন। নিজের সঙ্গ উপভোগ করুন। নিজেকে সময় দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মন ভালো রাখতে নিজের ভালো লাগার কাজগুলো করুন এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করুন। কারণ সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নিজেকে জানা জরুরি। 

ভালো বন্ধুর সঙ্গ: অনেক সময় মন খারাপ হলে সঙ্গে সঙ্গে অন্য কিছু করে মনকে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করি। এতে হয়তো সাময়িকভাবে ভালো থাকি। তবে খারাপ লাগা কিন্তু মনের মধ্যেই জমে থাকে। আর এভাবে জমতে জমতে একসময় তা পাহাড় আকার ধারণ করে। এ সময় প্রয়োজন এমন একজন বন্ধু খুঁজে বের করা যার সঙ্গে মন খুলে কথা বলা যায়, তাতে মনের চাপটা অনেকাংশেই কমে যায়। একজন ভালো বন্ধুর ক্ষমতা আছে মনকে প্রভাবিত করার। তবে এটাও বোঝা প্রয়োজন যাদের প্রভাব পড়ছে, তারা যেন হোন ইতিবাচক, সহানুভূতিশীল ও সাহায্যপ্রবণ।

রাতে আট ঘণ্টা ঘুমান: রাতে পরিপূর্ণ ঘুম একজন মানুষের জন্য খুবই জরুরি। গবেষকরা বলছেন, আট ঘণ্টার গভীর ঘুম মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। প্রয়োজনীয় ঘুম শেখার আগ্রহ বাড়ায়। এ জন্য দিনের এক-তৃতীয়াংশ সময় শরীরকে বিশ্রাম দিতেই হবে।

ব্যায়াম করুন: কিছু ভালো লাগছে না- এমন অনুভূতি হলে ব্যায়াম করতে পারেন। একটু হেঁটে আসতে পারেন। শারীরিক পরিশ্রম করলে ‘হ্যাপি হরমোন’ নিঃসৃত হয়। তা তাৎক্ষণিকভাবে ভালো অনুভব করায়। সাইকোলজি টুডে বলে, ব্যায়ামে শরীরে এন্ডোরফিন নামের হরমোন নিঃসৃত হয়; যা মানসিক চাপ কমায় ও মানসিক অবস্থার উন্নতি করে। তাই বলা হয়, ব্যায়াম নেতিবাচক আবেগ, যেমন উদ্বেগ, চাপ ও কষ্ট কমাতে সাহায্য করে।

নতুন অভ্যাস গড়ে তুলুন: গঠনমূলকভাবে নিজের মন ভালো রাখতে হবে। মনের চর্চা করতে হবে। নিজের সুন্দর অভ্যাস ও শখকে গুরুত্ব দিন। অন্য কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা যাবে না। কেননা প্রত্যেক মানুষ আলাদা। কারও সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। নিজের চিন্তাকে সুন্দর রাখতে নতুন কাজের সঙ্গে যুক্ত হোন।

ভালো লাগার জিনিস খুঁজুন: অনেক সময় ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হতে খুব বেশি কিছু লাগে না। প্রকৃতির সংস্পর্শ, প্রিয় কোনো গান বা এক কাপ চা মন ভালো করে দেয়। সে রকম কিছু মুহূর্ত খোঁজার চেষ্টা করুন। মন খারাপের অনুভূতি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা বন্ধ করুন। মনে রাখবেন, আবহাওয়ার মতোই মনের অবস্থার পরিবর্তন হয়। এই ভালো না লাগার অনুভূতি যতই অপ্রীতিকর হোক না কেন, আস্তে আস্তে তা কেটেই যাবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //