ভয় পান, ভালো থাকুন

ধরুন, একটি ভৌতিক সিনেমা দেখছেন। খুব মনোযোগ দিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন। বুকটা দুরুদুরু কাঁপছে। কখন কী হয়, তা নিয়ে ভয় পাচ্ছেন ভীষণ। শেষমেশ হয়তো সিনেমাটি আর না দেখারই সিদ্ধান্ত নিলেন। যদি কাল্পনিক এমন ঘটনা আপনার সঙ্গে মিলে যায়; তা হলে বলব, থামুন! কারণ জানেন কি ভৌতিক সিনেমা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু উপকারী? জানলে হয়তো ভবিষ্যতে আর কোনো ভৌতিক সিনেমা রেখে উঠে যেতে চাইবেন না।

ভৌতিক সিনেমা দেখার অনেকগুলো ইতিবাচক দিক আছে। সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হলো, এতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়, পাশাপাশি ওজনও কমে। এছাড়া মানসিক শক্তি বাড়াতে চাইলে ভৌতিক সিনেমার মতো সহজ বিকল্প খুবই কম আছে। 

এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইমিউনোলজিস্ট নাতালি রিডেল বলছেন, ভৌতিক সিনেমা দেখলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অ্যাড্রেনালিন হরমোন নিঃসরণ হয়। এই অধিক নিঃসরণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, ভৌতিক সিনেমা দেখলে হৃদস্পন্দন ও বেসিক মেটাবলিক রেট বেড়ে যায়। যার ফলে যে এনার্জি শরীরে উৎপন্ন হয় তা ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে। একটি ভৌতিক সিনেমা প্রায় ১১৩ ক্যালরি করে ঝরাতে সাহায্য করে, যা ৩০ মিনিট দ্রুতবেগে হাঁটার সমান! 

গবেষণায় দেখা গেছে, ভৌতিক সিনেমা দেখলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, সাদা রক্তকণিকা তৈরি হয় ও ইনফেকশন থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়। এ ছাড়া শরীরে বিপাক ক্রিয়ার বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

এ তো গেল শারীরিক স্বাস্থ্যের কথা; মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতির ক্ষেত্রে ভৌতিক সিনেমার জুড়ি মেলা ভার। সম্প্রতি একদল গবেষক দাবি করেছেন, টেনশন আর ভয় থেকে মুক্তি পেতে চাইলে ভৌতিক সিনেমা দেখা জরুরি। মানুষ যখন ভয় পায় বা কোনোকিছু নিয়ে প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায় ভোগে; তখন শরীরের ভেতর বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। যেমন হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে যাওয়া, শরীরের তাপমাত্রা কমে আসা ইত্যাদি। অনেকেরই আবার শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করে।

ওই গবেষকরা মনে করেন, একজন মানুষ যত বেশি ভৌতিক সিনেমা দেখবে, তার দেহে এসব প্রতিক্রিয়ার হার কমে আসবে। গবেষকদের ভাষায় এই প্রক্রিয়াটি হলো ‘স্ক্রিম থেরাপি’। একদল মানুষের ওপর দীর্ঘ গবেষণা করে দেখা যায়, এই স্ক্রিম থেরাপিতে যকৃৎ ও শ্বাসযন্ত্রের ভালো ব্যায়াম হয়। এছাড়া ভৌতিক সিনেমা দেখার সময় মুখ থেকে বেরিয়ে আসা অস্ফুট আর্তনাদে শরীরে এন্ডোরফিনস হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মুড ভালো রাখতে সহায়তা করে।

এছাড়া ভৌতিক সিনেমাগুলোর কাহিনিতে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও মানুষের টিকে থাকার চেষ্টাটাকে বেশি ফোকাস করা হয়। যা দর্শকের মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভয়ের অভিজ্ঞতা, ভয়ঙ্কর পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের দৃশ্য ভবিষ্যতের অবসাদগ্রস্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এমনটাই মনে করেন গবেষকরা। পরিশেষে এটাই বলব, এখন থেকে নিশ্চিন্তে ভৌতিক সিনেমা দেখুন। ভয় পান, ভালো থাকুন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //