বার্ধক্যে ভালো থাকুক মা-বাবা

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মা-বাবার মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয়। ফলে সন্তানের কাছ থেকে তাদের প্রত্যাশা বাড়তে থাকে। সংসার, ক্যারিয়ার সামলেও মা-বাবার যত্ন নিতে হবে।

মা-বাবাকে জানুন: সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো মা-বাবাকে সঙ্গ দেওয়া। তাদের পাশে থাকা, সমস্যাগুলো জানা। একটু খেয়াল করলে হয়তো তাদের কিছু সমস্যা চোখে পড়বে। এই সমস্যাগুলো কম-বেশি বয়স্কদের মাঝে থাকে। যেমন- বাড়িতে ছোটখাটো পরিবর্তন থেকে শুরু করে রোদে ছাতা নিয়ে বের হওয়া- সবকিছুতেই প্রথমে তারা না বলেন। ধীরে ধীরে তাদের বোঝান। আবার অবসরের পর বাড়িতে বসে থাকতে থাকতে একাকিত্ব, কিছু করতে না পারার বোধ মন খারাপ করে দেয়। তাই ছোটখাটো বাড়ির কাজ, যেমন- হালকা বাজার করা, ব্যাংক থেকে টাকা তোলা ইত্যাদি কাজে তাদের সহায়তা নিতে পারেন।

মা-বাবা কী চান তা ভাবতে হবে: মা-বাবা কী চাইছেন সেটা ভেবে দেখুন। তাদের কীসে স্বাচ্ছন্দ্য হবে তা নিজের সুবিধা অনুযায়ী ঠিক করবেন না। বরং আগে তাদের কাছ থেকে জেনে নিন তারা কোথায়, কীভাবে থাকলে খুশি হবেন। তারপর সামর্থ্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখুন। যেমন- মা-বাবার ইচ্ছা-অনিচ্ছার কথা মন দিয়ে শুনুন। এতে তাদের হতাশাবোধ কেটে যাবে। নিজের মতো করে থাকতে পারলে মানসিক ও শারীরিক দুভাবেই সুস্থ থাকা যায়। তাই তাদের নিজেদের মতো করে থাকতে দিন।

কোয়ালিটি সম্পর্ক বজায় রাখুন: মা-বাবার সঙ্গে কোয়ালিটি সময় কাটান। একে অপরের সঙ্গে সময় কাটালে সম্পর্ক যেমন সহজ হয় তেমনি নির্ভরতাও বাড়ে। এতে পরিবারে শক্ত বন্ধন তৈরি হয়। যেমন- মা-বাবাকে ছোটখাটো কাজে উৎসাহ দিন। তাদের কাজকে ছোট করে দেখবেন না। অযথা উপদেশ দিয়ে তাদের বিব্রত করবেন না। মা-বাবার সঙ্গে কোনো বিষয়ে মতামত, দৃষ্টিভঙ্গির অমিল হতেই পারে। এরকম জেনারেশন গ্যাপ প্রায়ই হয়। এক্ষেত্রে তাদের মতামতকে সম্মান করুন। অফিসের চাপ শেষে বাড়িতে ফিরে কিছুটা সময় তাদের সঙ্গে গল্প-গুজব করুন। হাসি-ঠাট্টা-মজায় অনেক টেনশন মুহূর্তে সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এতে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে।

মা-বাবার শখ ও অবসর সময়: বয়স হয়ে গেছে বলে তাদের বন্ধু-বান্ধব থাকবে না এমন কিন্তু নয়। মাঝে মাঝে মা-বাবার বন্ধুদের সকালের নাশতায় বা রাতের ডিনারে নিমন্ত্রণ করুন। তাদের পছন্দের খাবার রান্না করুন। একসঙ্গে বসে পুরনো দিনের কথা নিয়ে গল্প করতে পারেন। তবে ফোকাসটা যেন তাদের দিকে থাকে। গান শোনা, বই পড়া, বাগান করার মতো শখকে উৎসাহিত করুন। বছরে একবার হলেও মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করুন। তাদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যকর কোনো জায়গায় বেড়াতে যেতে পারেন। এতে তাদের একঘেয়েমি দূর হয়ে ভালোই লাগবে। এজন্য বছরের শুরুতেই বাজেট করে রাখুন।

অন ইমার্জেন্সি: মা-বাবার সব মেডিক্যাল টেস্টের পেপার এক জায়গায় ফাইল করে রাখুন। যেন দরকারের সময় জানা যায় আগে কোনো বড় অপারেশন হয়েছে কিনা বা কোন ওষুধে এলার্জি আছে ইত্যাদি। নিজের, প্রতিবেশীর, অ্যাম্বুলেন্স, পারিবারিক চিকিৎসক, হাসপাতালসহ বিভিন্ন দরকারি নম্বর মা-বাবার ডায়েরিতে লিখে রাখুন। ওষুধ হাতের নাগালে রাখুন।

সঞ্চয়: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে চাকরির পুরো অর্থই শেষ হয়ে যায় ছেলেমেয়ের শিক্ষায়। ফলে চাকরি জীবন শেষে অনেকেরই কোনো সঞ্চয় থাকে না। আবার অবসরের টাকার বেশিরভাগ ছেলেমেয়ের চাকরি বা বিয়ে দিতেই শেষ হয়ে যায়। তাই পরিকল্পনা করে কিছু সঞ্চয়ী প্রকল্পে যাওয়া উচিত। নির্দিষ্ট সঞ্চয়ের পাশাপাশি মা-বাবার জন্যও সঞ্চয়ের কথা ভাবুন।

মনে রাখুন কিছু বিষয়: মা-বাবা এবং আপনি দুজনেই মনে রাখুন বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া মানে একেবারে অথর্ব বা অসুস্থ হয়ে পড়া নয়। ঠিকমতো লাইফস্টাইল মেনে চললে মা-বাবাও অ্যাক্টিভ থাকতে পারেন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন হয়। এগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। স্বাভাবিকভাবেই অনেকের কর্মক্ষমতা কমে যায়, বই পড়ার জন্য বেশি আলোর প্রয়োজন হয়, খোলামেলা জায়গায় থাকতে পছন্দ করেন, জোরে কথা না বললে শুনতে পান না। এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে চলার চেষ্টা করুন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //