কর্মজীবী নারীর চ্যালেঞ্জ

‘ভোর হলো দোর খোলো... খুকুমণি ওঠো রে...।’ খুকুমণিদের যেমন ঘুম থেকে ডাকতে হয়, তেমনি ডাকার জন্য আরও আগে খুকুমণির মাকে ঘুম থেকে উঠতে হয়। অন্ধকার থাকতেই মাকে বিছানা ছাড়তে হয়। তারপর রান্নাঘর। 

সন্তানদের পছন্দমতো নাশতা তৈরি করা। তাদের সারা দিনের খাবার গুছিয়ে রাখা। স্কুলে দিয়ে আসা। আবার নিজের কর্মস্থলের জন্য তৈরি হওয়া। সারা দিন কর্মক্ষেত্রে নানা ব্যস্ততা। মিটিং। এরই মধ্যে খবর নিতে হয় সন্তানদেও, বাসার। রাতে বাসায় ফিরে আবার সন্তানদের পছন্দের খাবার তৈরি করা। তাদের পড়তে বসানো। সন্তান-সংসারের সব দায়িত্ব পালন করে একজন কর্মজীবী মা হাঁপিয়ে ওঠেন নিত্য। সংসারের অন্য সদস্যরা যদি কিছুটা ঘরের কাজ-রান্নাঘরের কাজ গুছিয়ে দিত তাঁকে, তাহলে কর্মজীবী নারীর এত হাঁপিয়ে উঠতে হতো না প্রতিদিন।

দিন বদলের পালে হাওয়া লেগেছে। কেউ কেউ হয়তো বদলেছেন। ইতিবাচকভাবে দেখছেন সব কিছু; কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের মানুষ ঘরের কাজ-রান্নাঘরের কাজ বলতেই নারীর কাজ বোঝান। প্রচলিত এই ধারণা যে সত্য, সেটি উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপেও। জরিপ অনুযায়ী, কর্মজীবী পুরুষের তুলনায় কর্মজীবী নারী কাজ করেন তিন গুণ। তবে কর্মজীবী নারীর গৃহস্থালি কর্মকাণ্ডের আর্থিক মূল্যায়ন করা হয় না, এর গুরুত্ব দৃশ্যমান হয় না। সম্প্রতি বিবিএস পরিচালিত শ্রমশক্তি জরিপে কর্মজীবী নারীর ঘরের কাজকে ‘ডাবল বারডেন’ (বোঝা) বলা হয়েছে।

ঘরের কাজ কে কতটুকু করে? জরিপ অনুযায়ী, পুরুষ ও নারী উভয়ই কর্মজীবী এমন পারিবারিক পরিবেশে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই রান্নার কাজটি করতে হয় ওই নারীকেই। আর কর্মজীবী পুরুষের রান্না করতে হয় মাত্র আড়াই শতাংশকে। কর্মজীবী ১০০ নারীর মধ্যে ৮৯ জনই কাপড় ধোয়ার কাজ নিজেই করেন। আর ১০০ কর্মজীবী পুরুষের ক্ষেত্রে এই কাজ করেন মাত্র ১২ জন। অন্য পুরুষদের কাপড় ধোয়ার এই কাজ করেন গৃহকর্মী (বেশির ভাগ নারী), পরিবারের অন্য নারী সদস্য অথবা লন্ড্রিতে করানো হয়। কর্মজীবী নারীদের ৮৮ শতাংশ ঘর পরিষ্কারসহ বাসার বিভিন্ন জিনিস সাফসুতরো রাখার কাজ করে থাকেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ৭ শতাংশ।

যিনি কর্মজীবী নারী, পরিবারের সদস্যদের তাঁকেই বোঝাতে হবে, কীভাবে সবাই মিলে ঘরের কাজটি গুছিয়ে ফেলা যায়। পরিবারের সবাইকে ঘরের কাজ, নিজেদের জিনিস গুছিয়ে রাখার কাজটুকু এবং পারিবারিকভাবে মিলেমিশে কাজ করার বিষয়টি চর্চা করতে হবে। তাহলে একজনের ওপর এত চাপ পড়বে না।

কর্মজীবী নারী কীভাবে নিজেকে একটু সময় দিতে পারবেন তার দিকে কাজ অনুযায়ী, গুরুত্ব বুঝে তালিকা তৈরি করুন। একটা ডায়েরি মেইনটেন করুন অফিসে। প্রতিদিনের কাজ, অ্যাসাইনমেন্ট বা বিশেষ অ্যাপয়েন্টমেন্ট তাতে লিখে রাখুন। বাড়িতেও নোটবুক মেইনটেন করুন। কাজগুলো দৈনিক, সাপ্তাহিক আর মাসিক হিসেবে ভাগ করে নিন। অবশ্যই কাজের মধ্যে কিছুটা অবসর যেন থাকে। দিনের শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে ফেলুন। কারণ বিকেলের দিকে এনার্জি লেভেল কম থাকে। আনন্দ নিয়ে কাজ করুন। কাজকে বোঝা ভাববেন না।

সন্তানদের পোশাক, টিফিন আর রান্নার মেন্যুটা আগের দিনই ঠিক করে রাখুন। ছুটির দিন এক সপ্তাহের বাজার একসঙ্গে করুন। আজকাল বাজারে নানা রকম কিচেন গেজেট পাওয়া যায়। এসব ব্যবহারে সময় বাঁচবে। পড়ার টেবিল, বিছানা ও ঘর গোছানোর মতো ছোট কাজগুলো সন্তানকেই শিখিয়ে দিন। সকালের নাশতা কিংবা রাতের খাবারটা পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে করুন। এতে পারিবারিক বন্ধন অটুট থাকবে।

কর্মজীবী নারীর প্রতিদিন রান্নাঘরে যাওয়া একটা নিত্য হ্যাপা। তাই গুছিয়ে রাখতে পারেন কিছু খাবারদাবার। রান্না করে ফ্রিজে রেখে দিলে প্রতিদিনের রান্নার ঝামেলাটা থাকে না। কিছু খাবার হাফ ডান মানে অর্ধেক তৈরি করে রাখতে পারেন। যেমন- শাকসবজি প্রতিদিন কাটা-বাছার ঝামেলা এড়াতে একদিন বেশি করে কেটে অর্ধেক সিদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। খাবার আগে শুধু ভেজে নিলেই হলো। ঠিক তেমনি কাবাব-সসেস-পুরি-সমুচা ধরনের জিনিসগুলো বেশি করে বানিয়ে ফ্রিজে রাখতে পারেন। বিকেলের নাশতায় খুব সহজেই পরিবেশন করতে পারবেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //