উৎসবে পারিবারিক বন্ধন

বাংলাদেশের ইতিহাসে খুব সম্ভবত এবারই প্রথম উৎসবপ্রিয় বাঙালিকে পুরোপুরি ঘরের সদস্যদের নিয়ে বরণ করতে হবে ‘বাংলা ১৪২৭’ সন। তাই পহেলা বৈশাখের ভোর থেকেই পরিবারের সবাই মিলে উৎসবের আনন্দ নিয়ে আসুন ঘরে। সেই সঙ্গে প্রার্থনা করুন পৃথিবীর মানুষের ওপর ভাইরাসের এই হানা যেন দ্রুত নিঃশেষ হয়। আবারো পৃথিবী তার স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য ফিরে পায়।

বাংলা নববর্ষের আগের দিনই ঘরদোর গুছিয়ে রাখতে পারেন। পর্দা, কুশন কভার তোলা থাকলে সেগুলো বের করতে পারেন। অথবা ব্যবহার করাগুলোই ধুঁয়ে নিতে পারেন। একান্তই নতুনত্ব চাইলে তুলে রাখা তাঁত, জামদানি শাড়িও পর্দা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

খাবারের জন্য মাটির পাত্রগুলোও বের করতে পারেন। একটা সুন্দর ভোরকে স্বাগত জানাতে রাতেই ড্রয়িং-ডাইনিং রুম সাজিয়ে রাখুন। এই বছর ফুলের ব্যবস্থা করা গেল না ভেবে মন খারাপ করার কিছু নাই। ফ্লাওয়ার ভাসগুলোই বরং টেবিলে সাজিয়ে রাখুন। আর বারান্দায় বা ছাদে গাছ থাকলে সেখান থেকেও পছন্দসই গাছ এনে সাময়িকভাবে ঘর সাজাতে পারেন। যা আপনার ঘরকে অরণ্যের ভাব এনে দেবে। 

ইউটিউব দেখে কাগজ, প্লাস্টিক বোতল ও রঙ দিয়ে সন্তানদেরকে নিয়ে ঘর সাজানোর নানা উপকরণ তৈরি করতে পারেন। এতে আপনার সন্তানদেরও সময় দেয়া হবে, ওরা নতুন কিছুতে মেতে থাকতে পারবে আবার নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আপনার ঘরও নতুনভাবে হেসে উঠবে। একের ভেতর কতগুলো সুবিধা পেয়ে গেলেন, দেখুন! 

এবার খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে আসা যাক। পরিবারের সকলে মিলে আলাপ করে ঠিক করে নিন কী কী পদ রান্না করা যায়। তবে রান্নার বিষয়ে অবশ্যই সাশ্রয়ী হবেন। যতটা পারা যায় ঘরের বাইরে বের না হয়ে থাকতে হচ্ছে বলে ঘরে যা আছে তাই দিয়েই সকালের নাস্তা থেকে রাতের রান্নাটা পর্যন্ত সেরে ফেলুন। 

পহেলা বৈশাখে, দিনের শুরুতে এবার ইলিশ-পান্তা না থাকলে মন যেন ভার না হয়। পান্তা দিয়ে শাক-সবজি ভাজি এমনকি মুরগির মাংসও বেশ সুস্বাদু। এবার প্রথম ইলিশ ছাড়া ভিন্ন কিছু দিয়ে পান্তা খেয়ে দেখতে পারেন। স্বাদটা, মন্দ লাগবে না। 

মুড়ি-মুড়কির পরিবর্তে সাধারণ মুড়িই এবার নাস্তার টেবিলে রাখতে পারেন। আবার অনলাইনে খাবার কেনার সুবিধা থাকলে নারিকেল-গুড় অর্ডার করে নিজেই ঘরে নাড়– বানিয়ে নিতে পারেন। এসব তৈরির সময় ছেলেমেয়েদেরও সঙ্গে রাখুন। এভাবে সকলে মিলে কাজ করলে পারিবারিক হৃদ্যতা যেমন বাড়বে তেমনি রান্নার কাজটাও সন্তানদের শিখে নেওয়া হবে। যা ভবিষ্যতে তাদের কাজে লাগবে। 

খেয়াল রাখবেন, এরইমধ্যে কিন্তু চৈত্রের সূর্য বেশ তেঁতে উঠেছে। বছরের প্রথম দিনও তাই তাপমাত্রা বেশি থাকার আশাঙ্কা। এ জন্য গুরুপাক খাবার তৈরি না করাই ভালো। সাদা ভাত, নানা রকম ভর্তা, করোলা, ছোট মাছের চর্চড়ি, আলু দিয়ে মুরগির মাংস এবং টমেটো ডাল করতে পারেন। সঙ্গে টমেটোর টক, তেঁতুলের টক, জিরা পানি অথবা রায়তা বানাতে পারেন।

ওহ্ আরো আছে! সেই যে ‘চোর-ডাকাত-পুলিশ’ বা ‘নাম-দেশ-ফুল-ফল’! ভুলতে বসেছেন তো এই খেলাগুলো! ঘরবন্দির এই কালে এবার না হয় নিজের সন্তানদের পরিচিত করান আপনাদের নিজেদের শৈশবের সঙ্গে। ওদের সঙ্গে গল্প করুন আপনার শৈশবের পহেলা বৈশাখ কেমন ছিল! অথবা ছোটবেলায় কত কি দুষ্টুমি করে মায়ের বকুনি, বাবার হাতে মার খেয়েছেন! নিজেরাও ছোট হয়ে ছোটদের সঙ্গে মিলে গেলে দোষ তো নেই কোনো! আরেকটা বিষয়। বাড়ির বয়স্করাও যেন আপনাদের এই খেলায় যোগ দেন। তাদের রাখতে পারেন রেফারি হিসেবে।

(লেখাটি ৯ এপ্রিলের  সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল থেকে নেয়া)

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //