বেসরকারি শিক্ষকদের বোবা কান্না কেউ শুনে না

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় বলেছিলেন- বেসরকারি শিক্ষকদের দাবি আদায়ে রাজপথে নামতে হবে না।সত্যিই পাঁচ লাখেরও অধিক বেসরকারি শিক্ষক বড্ড আশা করে বসেছিল, বেসরকারি শিক্ষকদের সব দুঃখ-কষ্ট ঘুচবে মনে হয়; কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে এই পর্যন্ত তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরেও বেসরকারি শিক্ষকদের উল্লেখযোগ্য কোনো দাবি পূরণ হয়নি। এখনো বিএনপি আমলে দেয়া সিকি বোনাস, একহাজার টাকা বাড়ি ভাড়া আর পাঁচশত টাকা মেডিকেল ভাতা দিয়ে চলে আসছে বেসরকারি শিক্ষকদের জীবন।

শিক্ষকদের দূর-দূরান্ত থেকে কর্মস্থলে আসা সম্ভব হয় না। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশেই ভাড়া বাসায় থাকতে হয়। আর বেতনের পুরো অংশ কিংবা বড় অংশ যদি বাড়ি ভাড়াতেই চলে যায় তাহলে অবশিষ্ট টাকা দিয়ে কিভাবে সংসার চলে আপনারাই বলুন।

শতভাগ ঈদ বোনাস বেসরকারি শিক্ষকদের প্রাণের দাবি ছিল। মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে সরকার অন্তত শতভাগ ঈদ বোনাস ঘোষণা করবেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। পুরনো নিয়মে মুজিববর্ষে সিকি বোনাসেই ঈদ পার করলো বেসরকারি শিক্ষকরা। পাঁচশত টাকা মেডিকেল ভাতা দিয়ে পুরো পরিবারের মেডিকেল খরচ তো দূরের কথা নিজের চিকিৎসা খরচ করাও সম্ভব না।

প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছু নন্এমপিও শিক্ষক রয়েছেন। স্কুলপর্যায়ে অতিরিক্ত শাখা শিক্ষক আর কলেজপর্যায়ে ডিগ্রি অনার্স পর্যায়ের শিক্ষক রয়েছেন, যারা প্রতিষ্ঠানের নামকাওয়াস্তে বেতন নিয়ে সরকারি এমপিওর আশায় দিন পার করছেন। এসব শিক্ষকদের অনেকের চাকরির বয়স ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে; কিন্তু এদের বোবা কান্না কেউ শুনে না। অভিভাবকহীন বেসরকারি শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা দেয়ার মতো সঠিক কোনো নেতৃত্বও নেই। যার ফলে আন্দোলনের মাঠে বেসরকারি শিক্ষকরা হতাশ হয়ে ফিরে এসেছেন বহুবার। বেসরকারি শিক্ষকগণ বিশ্বাস করে- তাদের চাকরি জাতীয়রকরণ হলে সব সমস্যার সমাধান হবে; কিন্তু কে বাধঁবে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা। সবাই নিজ নিজ সুবিধা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। 

আমি মনে করি, বেসরকারি শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে নেতৃত্বের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চাকরি হতে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নেতারা নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। আমরা আঁতাতকারী কিংবা নতজানু নেতৃত্ব চাই না। আমরা চাই- সাধারণ শিক্ষকদের স্বার্থে শিক্ষক নেতারা সরকারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আলোচনারভিত্তিতে শিক্ষকদের সমস্যার সমাধানের পথ বের করবে। আমরা সুবিধাভোগী অবসর শিক্ষক নেতৃত্ব চাই না। সাধারণ শিক্ষকদের নির্বাচিত শিক্ষক নেতা চাই যারা শিক্ষকদের দাবি আদায়ে আন্তরিক হবেন।

অপরদিকে, শিক্ষকগণও ঘরকুনো হয়ে বসে না থেকে নিজেদের অধিকার আদায়ে রাজপথে আসতে হবে তার কোনো বিকল্প দেখছি না। আমরা সব সময় বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবির বিষয়ে আন্তরিক; কিন্তু সমস্যা জর্জরিত বেসরকারি শিক্ষকদের বোবা কান্না মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কানে দেওয়ার কোনো শিক্ষক নেতৃত্বও আমাদের নেই। আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবিগুলো সদয় বিবেচনা করবেন।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //