জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে এমপিও দিতে একদফা দাবি

দেশের উচ্চশিক্ষা গ্রাম অঞ্চলের গরীব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বেসরকারি কলেজ গুলোতে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বিগত বিএনপি সরকারের ভ্রান্ত জনবল কাঠামো নীতিমালা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরদর্শিতার কারণে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই কোর্স চালু করা হয় তা বাস্তবায়ন না হয়ে এখন কলেজগুলোতে ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এর মূল কারণ হলো অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জনবল কাঠামো/সরকারি নীতিমালাতে অন্তর্ভুক্ত না করা।

দীর্ঘ আটাশ বছর ধরে শিক্ষকেরা বেতন বঞ্চনার শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শুধু মাত্র জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণে শিক্ষকেরা বছরের পর বছর ধরে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। জনবল কাঠামো সংশোধন কমিটির প্রথম মিটিংয়ে সকল সদস্য বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনীহা ও কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে বিষয়টি উপেক্ষিত হতে যাচ্ছে। বর্তমান করোনা মহামারির তাণ্ডবে উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত শিক্ষকগণ জীবন জীবিকা আজ কঠিন সমীকরণে।

উল্লেখ্য যে, ১৯৯৫, ২০১০, ২০১৩ এবং ২০১৮ তে জনবল কাঠামো সংশোধন করা হলেও এসব শিক্ষকদের দাবি সব সময় উপেক্ষা করা হয়েছে। তারপরেও দীর্ঘ আটাশ বৎসর হলো শিক্ষকেরা প্রতিষ্ঠান থেকে নামমাত্র বেতনে কিংবা বেতনহীন অবস্থায় লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদান করে আসছেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি বিধি মোতাবেক এই সকল শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। বিধি মোতাবেক একজন শিক্ষকের নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় এবং নিয়োগ ও মৌখিক পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ও ডিজি মহোদয়ের প্রতিনিধির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত হয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালা ও সরকারি নীতিমালা মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের শতভাগ বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধা প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও সারাদেশে মোট বেসরকারি কলেজের ৯০% কলেজ কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিতে চায় না। 

জানা গেছে, শিক্ষকদের বেতনের নাম করে গরীব ছাত্রছাত্রীদের নিকট হতে মাসে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা করে বেতন নেয়া হলেও শিক্ষকদের বেতন বাবদ ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে দিয়ে থাকে যা একজন শিক্ষকের বর্তমান বাজার দরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করা অসম্ভব। শুধু তাই নয় অধিকাংশ কলেজেই মাসের পর মাস সামান্য টাকা টাও ফান্ডে অর্থ না থাকার অজুহাতে বন্ধ রাখা হয়।

শুরুতে কলেজের সংখ্যা গুটি কয়েক হলেও ২০১৮ সাল পর্যন্ত তা ৫০০ ছাড়িয়ে যায়। ২০১৮ সালে বেসরকারি কলেজগুলো জাতীয়করণ করার পর বর্তমানে অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানরত কলেজের সংখ্যা ৩১৫টি। দীর্ঘ আটাশ বৎসরের বঞ্চনার এই দাবি আদায়ে শিক্ষকেরা বিভিন্ন সময় সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করে।

আমরা চাই ২৮ বছরের বঞ্চনার অবসান হোক, বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের ন্যায্য এমপিও দাবি মেনে নিন, মানতে হবে। বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকেরা যে যে কারণে এমপিও পাওয়ার দাবি রাখে-

১. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য তিনটি নির্দেশনা রয়েছে, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো বাস্তবায়ন করেনি।
২. একই বিধি ও নিয়মে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে জাতীয়করণকৃত ৪৫টি কলেজের অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকেরা ক্যাডার ভুক্ত হয়েছেন, এছাড়া আরো ২৯৩টি কলেজের অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকেরা নন-ক্যাডার হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে তাই বেসরকারি কলেজের শিক্ষকেরা এমপিওভুক্তির দাবি রাখে। 
৩. মাদ্রাসা পর্যায়ে কামিল ও ফাজিল শিক্ষকেরা এমপিওভুক্ত হতে পারে তাহলে বেসরকারি কলেজের অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকেরা অবশ্যই এমপিওভুক্তির দাবি রাখে। 
৪. উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর রয়েছে অথচ উচ্চশিক্ষা স্তরে নিয়োজিত বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের কোন জনবল কাঠামো বা সরকারি নীতিমালা নেই, তাই বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের জনবল কাঠামো প্রণয়ন অপরিহার্য।
৫. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একই এমপিওভুক্ত কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ও ডিগ্রি শিক্ষকেরা এমপিওভুক্ত হতে পারলে অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদেরও অবশ্যই এমপিওভুক্ত করতে হবে।
৬. জাতীয় শিক্ষানীতি- ২০১০ এর উচ্চশিক্ষা অধ্যায়ে তিন বছরের ডিগ্রি কোর্স পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করে চার বছরের সম্মান কোর্স শিক্ষা সমাপনী ডিগ্রি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছিল, কারণ সরকারি সকল চাকরি ক্ষেত্রে এখন চার বছরের সম্মান কোর্স চাওয়া হয় কিন্তু এখন পর্যন্ত এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হয় নি। তাই অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের জনবল কাঠামো ও এমপিওভুক্ত আবশ্যক।
৭. জাতীয় সংসদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দুটি সুপারিশে বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে এমপিওভুক্তির সুপারিশ করা হয় যা এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয় নি, তাই অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের জনবল কাঠামো ও এমপিওভুক্তি করা অত্যন্ত জরুরি। 
৮. শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক দুজন মহাপরিচালক অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দুটি সুপারিশ করে যা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয় নি। তাই বঞ্চিত অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের জনবল কাঠামো ও এমপিওভুক্তি করা অত্যন্ত জরুরি।

বঞ্চনার এই কারণ সমূহ বিশ্লেষণ করে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত অতীব জরুরি। এছাড়া চলমান করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষকেরা অত্যন্ত কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে। তাই উচ্চ শিক্ষাদানে নিয়োজিত এই সকল শিক্ষকের হৃদয়ের বোবা কান্না উপলব্ধি করে তাদের কে অনতিবিলম্বে সংশোনাধীন জনবল কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করে এমপিও প্রদান এখন সময়ের দাবি। প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবসহ সরকারের নীতি নির্ধারকগণের নিকট আমাদের আকুল আবেদন বঞ্চনার এই দাবি দীর্ঘায়িত না করে অসহায় শিক্ষকদের কথা চিন্তা করে সংশোনাধীন জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে অতি দ্রুত এমপিও ঘোষণা দিবেন।

শাহ মো. রকিবুল ইসলাম 
প্রভাষক ও যুগ্ম-সদস্য সচিব
বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //