করোনাকালে সবচেয়ে বড় ক্ষতি শিক্ষায়

করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বড় ক্ষতি শিক্ষাখাতে হয়েছে- একথা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবে। দেশে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে মাত্র ৩%। বাকি সব প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষায় কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তা কেবল সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী ছাড়া অন্যরা জানার কথা না।

কারণ, করোনার এই মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যে ৩% সরকারি আছে কেবল সেসব স্কুল-কলেজ শিক্ষকরাই ঠিকই বেতন পাচ্ছেন। এমপিও শিক্ষকদের জন্যও বেতন ভাতার অনুদানের চেক ছাড়া হচ্ছে। কিন্ত যে সকল প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে তাদের জীবন কিভাবে চলছে? প্রত্যেক স্কুল কলেজে কিছু ননএমপিও শিক্ষক রয়েছেন যাদের বেতন প্রতিষ্ঠানের আয়ের উপর চলে। তাদের জীবন এখন নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো। 

শিক্ষার দায়িত্ব সরকার যেহেতু নেইনি তাহলে পাবলিক সেক্টরে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় নির্দেশে বন্ধ রাখারও যৌক্তিকতা নাই। সারা দেশে অনলাইন ক্লাস চলছে ভালো কথা কিন্তু কতোজন শিক্ষার্থী এতে যুক্ত হতে পেরেছে?

কে বা কারা এই অনলাইন ক্লাস দেখছে জানি না। গত মাসে গুগল মিটের মাধ্যমে ক্লাস নিতে তৎপর ছিলাম। সেখানে ১০% ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করেনি। সবার একই অবস্থা। অনেকে তা প্রকাশ করছে না। পঞ্চম থেকে একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীর কোন ছাত্রছাত্রী কাছে এন্ড্রয়েড ফোন আছে যারা নিয়মিত ডাটা খরচ করে স্যারদের আপলোডকৃত ভিডিও দেখবে কিংবা গুগল মিটে ক্লাস করবে? যে বাচ্চাদের হাতে মোবাইল দেয়াটা ক্ষতির কারণ মনে করতাম- আজ সে সকল বাচ্চাদের হাতে মোবাইল তুলে দিয়ে আমরা নাকে তেল দিয়ে বসে আছি। বাচ্চারা ক্লাসের চাইতেও ভিডিও গেমস আর মোবাইল আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হবে কেউ চিন্তা করে দেখেছেন কি? যাদের ছেলেমেয়ে বিদেশে পড়ালেখা করে তারা কিভাবে এদের শিক্ষার দায়িত্ব নিবে?

প্রায় ছয়মাস ধরে স্কুল কলেজ বন্ধ রয়েছে। সব বাচ্চারা কি ডিজিটাল ক্লাসের আওতায় আসতে পেরেছে? মোটেও না। কতগুলো লোক দেখানো ভিডিও আপলোড করে পড়ানোর দায়িত্ব শেষ করা কি ঠিক? এসব প্রশ্নের উত্তর সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের কাছেই রয়েছে।

আমার এই লেখাটি পড়লে অনেকে বিরুপ মন্তব্য করবেন, আমি জানি। কিন্তু তারা করবেন না যারা এই করোনাকালে খুব কষ্টে জীবন পার করছেন। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খুলে দেয়ার পর অনেকে মন্তব্য করেছিলো সব করোনা রোগী যেনো বাংলাদেশেই আক্রান্ত হবে কিন্তু সরকারি হিসেবে সেরকম কিছু দেখা যাচ্ছে না। করোনা যদি পাঁচ বছর গড়ায় তাহলে পাঁচ বছর শিক্ষা কার্যক্রম পিছিয়ে যাবে? কিন্তু কেনো? সব কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে পারলে তাহলে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকবে কেনো?

সৈয়দ শাহাদাত হোসাইন
সহকারি অধ্যাপক
বাকলিয়া শহিদ এন এম এম জে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //