কার্টুনিস্ট কিশোরকে নির্যাতনের প্রমাণ পায়নি পিবিআই

কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে কারা ধরে নিয়ে নির্যাতন চালিয়েছিল, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ পায়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত কোনও আসামিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। 

গ্রেফতারের পর কিশোরকে পুলিশ হেফাজতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই। তবে ওই বছরের ৫ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কিশোরকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে বিষয়ে তথ্য পেয়েছে পিবিআই। 

আজ বুধবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার রাসেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, গত ১৭ অক্টোবর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনের বিষয়ে আগামী ২৪ নভেম্বর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। 

বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গ্রেফতার দেখানোর আগে ‘অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন’ চালানোর অভিযোগে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে গত ১৪ মার্চ মামলা করেন কার্টুনিস্ট কিশোর।

প্রতিবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, সাদা পোশাকে অজ্ঞাতনামা ১৬-১৭ জনের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। 

গত ২০ মার্চ কিশোরের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। তারা কিশোরের শরীরে নির্যাতনের প্রমাণ পায়নি। 

কিশোর তার মামলায় অভিযোগ করেছেন, “গত বছরের ২ মে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কলিংবেলের শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। দরজা খুললেই অপরিচিত একজন আমাকে বলে, দরজা খোলেন না কেন? পরনের লুঙ্গি খুলে প্যান্ট পরে আসেন। সঙ্গে একটি ভালো শার্ট পরেন। আমি তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা আমাকে পরিচয় দেয়নি। তাদের আলাপ-আলোচনায় একজনকে জসিম বলে ডাকতে শুনি। সবাই ঘরে ঢুকে তল্লাশি শুরু করেন। তারা আমাকে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে পারেননি। বাসা থেকে আমার মোবাইল, সিপিইউ ও যত ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ছিল তা অবৈধভাবে নিয়ে যায়।

আমাকে যখন হাতকড়া পরিয়ে বাসার নিচে নামানো হয়, তখন বাসার সামনে ৬/৭টি গাড়ি অপেক্ষা করছিল। আমার বাসার সামনে অনেক লোকজন জড়ো হয় এবং একটি গাড়িতে আমাকে ওঠানো হয়। আমি তখন জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকি। কিন্তু গাড়িতে তারা অনেক জোরে শব্দ করে গান বাজাচ্ছিল। হয়তো এজন্য আমার চিৎকার বাইরে শোনা যাচ্ছিল না।

পরে বুঝতে পারলাম আমাকে পুরনো একটি স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে নিয়ে আসা হয়েছে। এরপর প্রজেক্টরের মাধ্যমে একটির পর একটি কার্টুন দেখানো হচ্ছিল। সেগুলোর মর্মার্থ জানতে চাওয়া হয়। করোনা নিয়ে আমার কিছু কার্টুন দেখিয়ে সেগুলো আঁকার কারণ জানতে চাওয়া হয়। একপর্যায়ে আমার কানে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করা হয়। এরপর আমি বোধশক্তি হারিয়ে ফেলি। বুঝতে পারছিলাম আমার কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তারপর স্টিলের পাতের লাঠি দিয়ে আমার হাঁটুতে আঘাত করা হয়। যন্ত্রণা ও ব্যথায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি আমি। এভাবে ২ মে থেকে ৪ মে পর্যন্ত আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়।”

তিনি বলেন, ৫ মে তিনি নিজেকে র‍্যাব কার্যালয়ে দেখতে পান। সেখানে লেখক মুশতাক আহমেদকে দেখতে পান কিশোর।

রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে র‍্যাবের করা মামলায় কিশোরের সঙ্গে মুশতাককেও আসামি করা হয়। এই মামলায় মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়। মুশতাক আহমেদ কারাবন্দি অবস্থায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। প্রায় ১০ মাস কারাভোগের পর ৩ মার্চ উচ্চ আদালত থেকে ছয় মাসের জামিন পান কিশোর। ৪ মার্চ তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

কার্টুনিস্ট কিশোরের বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি এখন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //