বর্তমান শিল্পীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই সময় দিচ্ছে বেশি: ডেভোরা

তিন বছর আগে, নাইলিয়া ডেভোরা হলিউডের আলো-ঝলমলে মঞ্চে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিজ শহর টেক্সাসের এল প্যাসো ছেড়ে আসেন। ২১ বছর বয়সী ডেভোরা এজেন্টের সহায়তা না নিয়ে ও অডিশনের মাধ্যমে নিজের মেধা যাচাইয়ের সুযোগ না করে দিয়ে তিনি যা করেছিলেন, তা ছিল তার প্রজন্মের জন্য বেশ বিস্ময়কর। তিনি তার ইউটিউব অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিদিনের নানা মজার কিছু বিষয় নিয়ে ভিডিও পোস্ট করা শুরু করেন। একইসঙ্গে সরল স্বীকারোক্তির মাধ্যমে নিজের সম্পর্কে জানাতে শুরু করেন ভিডিওগুলোর মাধ্যমে। আর তা থেকেই তার অ্যাকাউন্টে ভিড় জমাতে থাকেন লক্ষ লক্ষ অনুসারী। এটিই তাকে সবার কাছে প্রিয় করে তোলে। অবশেষে শিল্পী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা সারাহ বাহবাহের নজরে আসেন তিনি। পর থেকেই শুরু শোবিজ জগতে তার পথচলা। ডেভোরাহকে তিনি তার ‘I ____ YOU’ and ‘Untangled’  এ অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। ডেভোরা ইতোমধ্যে পডকাস্ট ‘Bit My Tongue’ এর সঞ্চালকের ভূমিকায় সবার প্রশংসা কেড়েছেন।  নাইলিয়া ডেভোরা তার তারকা বন্ধু মেইডলিন ক্লাইনের সঙ্গে এক খোলামেলা সাক্ষাৎকারে শোবিজে তার বর্তমান অবস্থান ও আগামী দিনের নানা স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেন। সাক্ষাৎকারের উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ তুলে ধরা হলো। 

ক্লাইন: তোমার রাশি কী?
ডেভোরা: আমি কুম্ভ জাতিকা।

ক্লাইন: এ রাশির তাৎপর্য রয়েছে।
ডেভোরা: আপনি কী এ রাশির বিষয়ে জানেন? 

ক্লাইন: জানি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ রাশির মানুষদের খুব ভালবাসি। 
ডেভোরা: আমার মতে কুম্ভ রাশির মানুষের ভাগ্য খুব একটা ভাল হয় না। আমি আবার ধনুর প্রতি আকৃষ্ট। জীবনের অনেকসময় এ রাশির মানুষদের সাথে কাটিয়েছি। কুম্ভ রাশির মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে। 

ক্লাইন: তাহলে  সাক্ষাৎকারে তোমাকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কী জবাব পাওয়া যাবে? 
ডেভোরা: অবশ্যই। অন্তর্নিহিত প্রশ্ন হলে আমাকে অবশ্যই ভাবাবে।

ক্লাইন:  আমি হলে কিছুটা উদ্বিগ্ন থাকতাম।
ডেভোরা: আমি এমনটা মনে করি না, কারণ বন্ধু হিসেবে তোমায় জানি। তুমি অনেক ভাল। 

ক্লাইন: তোমার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। তোমায় যদি বলি-‘উইকি ফিড’ বিষয়ে বলো…
ডেভোরা: উইকি ফিড দিয়ে কী বুঝাতে চাচ্ছো? 

ক্লাইন: জন স্টামোস কী তোমার খুব ভাল বন্ধু?
ডেভোরা: না। আমি আসলে তার অভিনীত ‘Full House’ দেখার পর মুগ্ধ হয়ে গেছি। একসময় আমি ইন্টারনেটে প্রচণ্ড সময় দিতাম। আমার ভিডিওগুলো এত বেশি শেয়ার করেছি যে একসময় তা ভয়াবহ আকারে রূপ নেয়। কিন্ত ইউটিউবের একটি ভিডিও করার সময় আমার মনে হচ্ছিল আমি আত্মবিশ্বাস হারাতে চলেছি। স্বপ্ন দেখতাম যদি জন স্টামোসের মতো হতে পারতাম। কারণ তিনি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। এরপর থেকেই তার প্রতি আমার মুগ্ধতা বাড়তে থাকে। 

ক্লাইন: ঠিক আছে, বুঝতে পারলাম তুমি মিথ্যা বলছো না। আমার তৃতীয় প্রশ্ন -তুমি কি প্যারিসে এসে আনন্দিত?
ডেভোরা: আমি এখানে এসে অনেক আনন্দিত। আমার মনে আছে শেষবার যখন গিয়েছিলাম অনেক ছারপোকা দেখেছিলাম। তুমিও সঙ্গে ছিলে। 

ক্লাইন: আমি অবশ্য অল্প সময় ছিলাম। যদিও বেশিদিন থাকার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু ভয়ে থাকিনি।
ডেভোরা: ছারপোকা দেখে!

ক্লাইন: হ্যাঁ। একইসঙ্গে ধর্মঘট ছিল, সেটাও একটা কারণ।
ডেভোরা: তা ঠিক। যাই হোক ধর্মঘটের বিষয়ে তোমার কী মতামত? 

ক্লাইন: সেসময় আমি গ্রীসে চলে যাই। চমৎকার সময় উপভোগ করেছি।
ডেভোরা: তা তোমার ফ্যাশন সপ্তাহ কেমন কেটেছে, সেখানে বেশ আনন্দের মধ্যেই ছিলে আশা করছি। 

ক্লাইন: ফ্যাশন সপ্তাহের আইডিয়াটা চমৎকার ছিল। যদিও আমি খুব ভাল করিনি।
ডেভোরা: একদম ঠিক। পুরো অনুষ্ঠান বেশি গ্ল্যামারাস ছিল। শারীরিকভাবে অসুস্থবোধ করছিলাম। আমি নিশ্চিত অতিরিক্ত জাংক ফুড খাওয়ায় এমনটা হয়েছিল। ম্যাকডোনাল্ডে সকালের নাস্তা আমার বেশি প্রিয় ছিল। কিন্তু যখন প্যারিসে যাই, সেখানে খুব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও ফল খাওয়া শুরু করি। এ কারণেই শো শুরুর আগে সব গুলিয়ে আসছিলো। 

ক্লাইন: শো’র একটা ভাল দিক ছিল। ৩০ মিনিটেই পুরো অনুষ্ঠান শেষ হয়েছিল। আমি মনে করি সারা বিশ্বেই এমন হওয়া উচিত যেনো অনুষ্ঠান শেষে সবাই হোটেলে ফিরে বিশ্রাম নিতে পারেন। তোমার কি মনে হয়? 
ডেভোরা: এটাই হওয়া উচিত। তুমি এমন কিছু নিয়েই কথা বলছো যা তুমি পছন্দ করো। 

ক্লাইন: বর্তমানের শিল্পদের বিষয়ে তোমার অভিমত কী?
ডেভোরা: আমার মনে হচ্ছে সবাই কেমন যেনো অস্থিরতায় দিন কাটাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বেশি সময় ব্যয় করছেন। অথচ দুই বছর আগেও দৃশ্যটা এমন ছিল না। 

ক্লাইন: ইদানিং খুব অদৃশ্য হয়ে যেতে ইচ্ছা করে। যদিও এমন ভাবনায় হাস্যকর লাগে নিজের কাছে। তোমার কাছে অনুভূতি কেমন? তুমি কোথায় বড় হয়েছো?
ডেভোরা: আমার বেড়ে ওঠা এল প্যাসোতে। 

ক্লাইন: এটা কী আই-৪০? 
ডেভোরা: তুমি কি ফ্রিওয়ের কথা বলছো? 

ক্লাইন: হ্যাঁ।
ডেভোরা: ওহ, হ্যাঁ এটা তাই ছিল। 

ক্লাইন: আমার মনে আছে যখন লস অ্যাঞ্জেলস ছিলাম গাড়ি চালিয়ে ফ্রিওয়ের কাছকাছি যেতাম।
ডেভোরা: হ্যাঁ, এটা খুব শান্তিপূর্ণ শহর। মেক্সিকোর জুরেজের সীমান্তবর্তী স্থানে অবস্থিত। আমার মা এল প্যাসোতে জন্ম নিলেও বেড়ে ওঠেছেন মেক্সিকোতে। আমার মা, দাদি ও খালার সাথে মেক্সিকোতে বাস করা শুরু করেন। আমার কাছে খুব ভাল লাগতো। সেখানকার সমাজ ব্যবস্থা অত্যন্ত শিক্ষণীয় ছিল। সবার সেন্স খুব ভাল ছিল। সেখান থেকেই আমি পারিবারিক সংস্কৃতি ও শিক্ষা গ্রহণ করেছি। মেক্সিকোর মানুষদের জন্য পরিবারই সব। সবাইকে ছেড়ে লস অ্যাঞ্জেলস ফিরে আসা আমার জন্য অত্যন্ত কষ্টের ছিল। 

ক্লাইন: সাউথ ক্যারোলিনায় কেমন অভিজ্ঞতা হয়েছে?
ডেভোরা: খুব সুন্দর একটা শহর এটি। আমি সেখানকার সমুদ্র সৈকত খুব মিস করে থাকি। 

ক্লাইন: গত বছর তুমি সারাহ বাহবাহ’র ‘I ____ YOU’ and ‘Untangled’  নামক দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছো। সেখানে তোমার অভিনয় অসাধারণ ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাই।
ডেভোরা: প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই এমন মন্তব্যের জন্য। মোটের ওপর আমার সবকিছুর পরিবর্তন হয়েছিল ছবি দুটোয় অভিনয়ের মাধ্যমে। আমি শান্ত থাকতে পারতাম। আমি কখনই ভাবিনি অভিনয়ে খাতায় নাম লিখাবো। প্রথমদিকে খুব লজ্জা পেতাম। একজন শিল্পী যেমন করে থাকেন সেভাবেই আগাতে চাচ্ছিলাম। অনেকটা ধীরস্থিরভাবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে।  সারাহা আমাকে জানিয়েছিলেন, ‘আমি নিজেই গল্পটি লিখেছি। আমি চাই আমার চরিত্রের ছোট বেলার ক্যারেকটারে তুমি অভিনয় করো। আমার কাছে তুমি এই ভালবাসার গল্পে অভিনয়ের জন্য সঠিক।‘ আমি মনে মনে ভাবছিলাম কীভাবে ঘটনাটা আমার সঙ্গে হচ্ছে! এরপর থেকেই চরিত্রের ভেতরে ঢুকে যাই আমি।  

ক্লাইন: তুমি বেশ ভয় পাচ্ছিলে?
ডেভোরা: খুব। কিন্তু যখন করে ফেললাম, মনে হচ্ছিলো একটা ভার থেকে নিজে মুক্ত হয়েছি। ইউটিউব আর সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকা নিজের গোলকধাঁধা থেকে বের হয়েছি। মনে আছে, নিজের ভিডিও রেকর্ড  করে, নিজেই এডিট করে ইউটিউবে প্রকাশ করাটা অনেক মজার ছিল। কিন্তু এত বড় প্রজেক্টে কাজ করার অভিজ্ঞতা আরও বেশি তাৎপর্যবাহী ও আনন্দের ছিল। 

ক্লাইন: আসলেই তোমার এ অভিজ্ঞতা খুবই অন্যরকম ছিল। কাজের সময় তোমার ব্যক্তি জীবনের আবেগ ও অভিজ্ঞতাকে কী আলাদা রাখতে পারো?  
ডেভোরা: কাজের সময় অবশ্যই নিজেকে সকল সম্পর্ক থেকে আলাদা রাখি। 

ক্লাইন: আচ্ছা।
ডেভোরা: বছর দুয়েক আগেও আমি জানতাম না ভালবাসার রঙ দেখতে কেমন? এখন আমার ২১ বছর। হাইস্কুলে পড়ার সময় আমার বয়ফ্রেন্ড ছিল। লস অ্যাঞ্জেলস আসার পর একজনের সঙ্গে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। প্রথম দেখাতেই তার প্রেমে পড়ে যাই। আমার মনে হচ্ছিলো জীবনে সত্যিকারের একজন বন্ধু দরকার। আমার কাছে ভালবাসা অত্যন্ত সুন্দর একটা বিষয়। আমি খুব রোমান্টিক একটা মেয়ে। 

ক্লাইন: আমিও খুব প্রেমিক স্বভাবের।
ডেভোরা: যদিও মাঝে মাঝে বিব্রতকর হই কিন্তু ভাল লাগে। আমি কাউকে ভালবাসলে তার প্রতি আবেগী হয়ে যাই।  

ক্লাইন: তুমি কী ‘হার্ট ব্রোকেন’ দেখেছো?
ডেভোরা: হ্যাঁ দেখেছি। 

ক্লাইন: ‘লাভ’ ও ‘হার্ট ব্রোকেন’ থেকে তোমাকে কি শিখিয়েছে?
ডেভোরা: আমি এটির গভীরে প্রবেশ করেছিলাম। আমি অনেকটাই ভালবাসা প্রিয় একজন মানুষ। অভিনয়ের আগে ছবিগুলো নিয়ে আমার ভাবনা ছিল, আসলেই বাস্তবে এমনটা সম্ভব কী না। এমনকি অভিনয়ের আগেও বুঝিনি এটা বাস্তব না চিত্রনাট্য? এরপর একজনের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন-‘ বাহ! সত্যি তুমি অসাধারণ করেছো।‘ এটি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।  

ক্লাইন: তাই বুঝি!
ডেভোরা: তুমি তাদের সাথে অংশ নিয়েছো, যাদের ভালবাসো। আমি এটা অনুভব করি যে, প্রতিনিয়ত আমি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষে পরিণত হচ্ছি।  আমি বেশি পরিশ্রম দিতে চাই। আমি নিজেই নিজের একটা প্রতিবিম্ব তৈরি করব যেখান থেকে নিজেকে গড়তে পারার সঙ্গে দিয়ে অন্যের জন্যও কিছু করতে পারি। 

ক্লাইন: আমি প্রশ্নের কিছুটা গভীরে যেতে চাই। তুমি যদি তোমার সেই ছেলেবেলার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পাও তবে তাকে কী পরামর্শ দিবে?
ডেভোরা: খুব বড় একটা প্রশ্ন করলে! হয়তোবা বলব- ‘খুব বেশি উদ্বেলিত না হতে। তোমার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে যেমন-সামনে কী করব, পরবর্তী পরিকল্পনা কী ইত্যাদি বিষয়ে অতিমাত্রায় চিন্তা না করতে।‘ মাঝে মাঝে মনে হয় বর্তমান সময়টাও ভাল লাগছে না। আমার জীবন নিয়ে পাঁচ (৫) বছরের একটা পরিকল্পনা দরকার।     

ক্লাইন: জীবন নিয়ে তোমার অনুভূতি জানতে চাই…
ডেভোরা: আমার কাছে জীবন অনেক সুন্দর। আর এই ভাবনাই একজন মানুষকে বেঁচে থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যুগিয়ে থাকে।  

ক্লাইন: আমার প্রশ্নের একেবারে শেষের দিকে চলে এসেছি। তুমি কোন ধরণের পোষাক পরিধানে স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করো?
ডেভোরা: যখন আমি অনস্ক্রীনে যাই তখন হল্টার টপ ড্রেস ভালোবাসি। ইউজিজি বুটের সঙ্গে শীতকালীন সময়ে জিন্স পড়তে ভাললাগে। 

ক্লাইন: তোমার বদভ্যাস কী?
ডেভোরা: আমি প্রচুর ক্যাফেইন পান করে থাকি। আমার সকাল শুরু হয় কফি দিয়ে। 

ক্লাইন: তবে আমার কিন্তু একেবারেই কফি সহ্য হয় না। মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে সময় দিয়ে সাক্ষাৎকার দেয়ায়।
ডেভোরা: তোমাকেও ধন্যবাদ। অনেক ভালবাসা রইলো তোমার জন্য। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //