হলিউডে নারী-পুরুষের বৈষম্য

হলিউড সারাবিশ্বের ছবির দুনিয়ায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। হলিউড নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। এখানে রয়েছে নারী ও পুরুষসহ শিল্পীদের মধ্যে বৈষম্যের দেয়াল। নারী অভিনেত্রীরা প্রায় সময়ই পুরুষ সহকর্মী, পরিচালক, প্রযোজকদের বিরুদ্ধে নানারকম অভিযোগ তুলে বিনোদন দুনিয়ায় ঝড় ফেলে দেয়। বিশ্ব কাঁপিয়ে দিয়েছিল যৌন হয়রানির কয়েকটি অভিযোগ। হলিউডের প্রভাবশালী প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুড়েছিল এক অভিনেত্রী। তা নিয়ে গড়ে উঠেছিল পৃথিবীজুড়ে মি টু আন্দোলন; কিন্তু সেই আন্দোলনের পরও কতটা বদলেছে হলিউডের পুরুষতান্ত্রিক প্রভাব বিস্তার? 

হার্ভি ওয়াইনস্টিনকে দোষী সাব্যস্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত রায় দিয়েছেন। সেই হিসেবে অনেকেই বলছেন, এতে মি টু আন্দোলনের সার্থকতা কিছুটা হলেও পাওয়া গেছে। তবে তা তখনই পুরোপুরি সফল হবে, যখন হলিউডের চলচ্চিত্র শিল্পে সামগ্রিকভাবে নারীদের প্রাধান্য বাড়বে। যদিও তার লক্ষণ এখনো খুব একটা নেই। 

অস্কার, বাফটা বা গোল্ডেন গ্লোবের কথা যদি আসে, দেখা যাবে গত ১২ বছরের মধ্যে অস্কারে সেরা পরিচালক শাখায় কোনো নারী মনোনয়ন পাননি। যদিও সমালোচকরা বলছেন, লিটল উইমেনখ্যাত গ্রেটা গারউইগ যোগ্য ছিলেন; কিন্তু একমাত্র নারী বলেই সেই সম্মান তার কপালে জোটেনি। শুধু পরিচালক নন, হলিউডি চলচ্চিত্রের অন্যান্য ভূমিকাতেও নারীরা পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে আছেন অনেক। যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব উইমেন ইন টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হলিউডের অ্যাকশননির্ভর ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের ক্ষেত্রে এখনো পুরুষরা এগিয়ে আছেন। নারীদের মূলত হরর ছবি ও নাটকে মুখ্য চরিত্রে নেওয়া হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি বা সায়েন্স ফিকশন ছবির ক্ষেত্রে নারীরা আরও অবহেলিত। এ জাতীয় চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রগুলোর মাত্র ৮ শতাংশে নারীদের দেখা গেছে।

গত দু’বছরে যতগুলো চলচ্চিত্র হলিউডে মুক্তি পেয়েছে, সেগুলোর দুই-তৃতীয়াংশের প্রধান চরিত্রে ছিলেন নারীরা। সেগুলো ব্যাপক ব্যবসাসফলও হয়েছে, কিন্তু এরপরও পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় নারীরা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন কম। রুপালি পর্দায় দেখানো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বয়স প্রদর্শনেও রয়েছে বৈষম্য। 

গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ ছবিতেই নারী চরিত্রের বয়স পুরুষের তুলনায় প্রায় অর্ধেক থাকে। প্রায় ৬০ শতাংশ পুরুষ চরিত্রের বয়স দেখানো হয় ৩০ বা ৪০-এর কোঠায়; কিন্তু এর বিপরীতে নারী চরিত্রের বয়স দেখানো হয় ঠিক অর্ধেক। অর্থাৎ, পুরুষের বয়স বেশি হলে ক্ষতি নেই, নারীদের হলেই যত সমস্যা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনো হলিউডে নারী ও পুরুষদের মধ্যকার আয়বৈষম্য ব্যাপক। একই ধরনের কাজ করেও পারিশ্রমিক বেশি পাচ্ছেন পুরুষরা। এমনকি বিশেষ বিশেষ চরিত্রেও নারীদের খুব একটা সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, হলিউডে যদি এত স্বল্প হারে উন্নতি হয়, তবে নারী-পুরুষের পারিশ্রমিক বৈষম্য মিটতে ১০০ বছর সময় লেগে যেতে পারে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : হলিউড

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //