ড্রিও ব্যারিমোর: রক্তে যার মিশে আছে অভিনয়

অভিনয়টা যেন ড্রিও ব্যারিমোরের জন্মগত অধিকার। কেননা মা, বাবা, দাদাসহ ক্যালিফোর্নিয়ার ব্যারিমোর পরিবারের সদস্যরা কয়েক পুরুষ ধরেই অভিনয়ের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। অতএব তাদের উত্তরসূরি হিসেবে ড্রিও ব্যারিমোর অভিনেত্রী হবেন এটাইতো স্বাভাবিক!

শিশু অবস্থায় মায়ের কোলে চড়ে ড্রিও প্রথম টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হন। আর পাঁচ বছর বয়সে এলটারড স্টেটস নামক একটি চলচ্চিত্রের অভিনয়ের মাধ্যমে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন তিনি।

তবে তার জন্য লাকি সেভেন ছিল সাত বছর বয়স। সাত বছর বয়সে তিনি ই টি দ্য এক্সট্রা টেরিস্ট্রিয়াল নামক একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যা তাকে এনে দেয় এক অভূতপূর্ব সাফল্য। ফলস্বরূপ রাতারাতি তারকা বনে যান ড্রিও।

কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না ড্রিও ব্যারিমোরের। যেখান থেকে তার আর পেছনে তাকানোর কথা ছিল না, ঠিক সেখানেই হোঁচট খেতে হয় তাকে। আর এর মূলে ছিল নৈশ ক্লাবের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন, মাদক সেবন, মা-বাবার বিচ্ছেদ, মায়ের সাথে তিক্ততা ইত্যাদি, যা লণ্ডভণ্ড করে দেয় তার ক্যারিয়ার, কৈশোর সব। সবকিছু মিলিয়ে একদমই থেমে যেতে হয় তাকে। পরপর দুইবার মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয় ড্রিও ব্যারিমোরকে। সেখান থেকে ফিরে এসেও খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না ড্রিও। 


কেননা উচ্ছৃঙ্খলতা, বিতর্ক ও মাদক সেবন ইত্যাদি বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল তার ক্যারিয়ারে। যার ফলে ধীরে ধীরে হাতে কাজের সংখ্যাও কমে আসছিল। হাতের মুঠোয় বসে থাকা অভাবনীয় সাফল্য যখন এভাবে হতাশায় পরিণত হলো তখন কেউ ভাবেনি কিশোরী ড্রিও আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন! 

কিন্তু অভিনয় যে ড্রিওর রক্তে! সব কানাকানি মিথ্যে করে দিয়ে অবশেষে তিনি ফিরে আসেন ১৯৯০ সালে। ১৯৯০-৯৩ সালে পর্যন্ত তিনি বেশকিছু সিরিজ মুভিতে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রগুলো তাকে বেশি কিছু না দিলেও তার ক্যারিয়ারের জন্য বেশ সহায়ক ছিল। কেননা চলচ্চিত্রগুলো ব্যারিমোরের ব্যাড গার্ল ইমেজ মুছে দিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছিল; কিন্তু বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছিল না ব্যারিমোরের। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, প্লে-বয় ম্যাগাজিনে নগ্ন হয়ে ফটোস্যুট ও মাত্র তিন মাসের মাথায় বিবাহ বিচ্ছেদ ড্রিওকে আবার বিতর্কিত করে তোলে। সে সময় সংবাদপত্রগুলো এই খবরগুলো বেশ ফলাও করে প্রচার করে।

তবে ১৯৯৫ সালটি ছিল ড্রিও ব্যারিমোরের ভাগ্য ফেরার বছর। এ বছরই সব বিতর্ক ঝেড়ে ফেলে ঘুরে দাঁড়ান ড্রিও। প্রতিষ্ঠা করেন ফ্লাওয়ার ফিল্মস নামক একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। একই বছর তিনি অভিনয় করেন বয়েজ অন দ্য সাইড নামক একটি চলচ্চিত্রে। বয়েজ অন দ্য সাইড চলচ্চিত্রে দুর্দান্ত অভিনয়ের কারণে ভীষণভাবে প্রশংসিত হন তিনি। এরপরপরই ড্রিও ব্যারিমোর অভিনয় করেন স্ক্রিম নামক চলচ্চিত্রে। মুক্তির পরপরই ব্লকবাস্টার হিট করে স্ক্রিম। স্ক্রিমের মাধ্যমে ড্রিও যেন জানান দেন তার হোঁচট খাওয়ার দিন শেষ। এবার তিনি এসেছেন পাকাপোক্তভাবে রাজত্ব করতে। স্ক্রিমের সাফল্যের পর ড্রিও অভিনীত ‘এভরিবডি সেস আই লাভ ইউ’র সাফল্য যেন সেটাই প্রমাণ করে। 


এরপর ১৯৯৮ সাল। এ বছরটি ছিল ড্রিওর নিজেকে ভেঙে নতুন ছাচে তৈরি করার বছর। এবার অভিনয় করেন জনপ্রিয় কমেডি দ্য ওয়েডিং সিঙ্গার নামক একটি চলচ্চিত্রে। দ্য ওয়েডিং সিঙ্গারে নিপুণ অভিনয়শৈলী দ্বারা তিনি নিজেকে পর্দায় প্রতিষ্ঠিত করেন একজন রোমান্টিক নারী হিসেবে। ধারাবাহিকভাবে পরের বছরটি ড্রিওর জন্য ছিল আরো মসৃণ ও সাফল্যমণ্ডিত। আর পেছনে তাকাননি ড্রিও। সাত বছর বয়সে পাওয়া যে সাফল্য কৈশোরের অন্ধকারে ফিকে হয়ে গিয়েছিল সে সাফল্য এবার আর ফিকে হতে দেননি। বরং একের পর এক চরিত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন একের পর এক চলচ্চিত্রে। 

মিউজিক অ্যান্ড লিরিক্স, গ্রেগার্ডেনস, হুইপ ইট, মিস ইউ অলরেডি, সান্টা ক্লারিটা ডায়েট, গোয়িং দ্য ডিস্টেন্স, বিগ মিরাকল প্রভৃতি যেগুলো তার ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে উজ্জ্বল ও তাকে করেছে সমৃদ্ধ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //