মাথার চর্মরোগ এবং চুল নিয়ে কিছু কথা

চুল একটি সৌন্দর্যের প্রতীক। কিন্তু বিভিন্ন চর্মরোগের জন্য সে সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। মাথার ত্বক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক ধরনের চর্মরোগের কারণে। মাথার স্ক্যাল্প বা ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণ হলে চুলকানি, ফুঁসকুড়ি, ব্যথা ও জ্বলুনির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এ থেকে খুশকিও হতে পারে। অনেক ধরনের ছত্রাক মাথার ত্বকে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। মাথার চর্মরোগ এবং চুলের সমস্যা ও এর সমাধান নিয়ে জেনে নিন কিছু কথা-

উকুন
মাথায় চর্মরোগের উৎস হিসেবে সবার প্রথমেই আসে উঁকুন এর কথা। উকুন মাথার চামড়া থেকে রক্ত শুষে নেওয়ার ফলে চুলকায় এবং ছোট ছোট ক্ষতের সৃষ্টি হয়।

এই রোগ হওয়ার কারণ : আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকা, একই বিছানা বা পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করা, একই চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো, মাথা পরিষ্কার না রাখা ইত্যাদি কারণে শরীরে উকুনের বিচরণ শুরু হয়।

খুশকি
মাথার চর্মরোগে অত্যাধিক খুশকি খুবই পরিচিত। এটি ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা। তবে, খুশকি সাধারণত তেমন ক্ষতিকর নয়। খুশকির কারণে মাথার চামড়ায় সাদা রংয়ের পরত পড়ে, যা শুষ্ক হয়ে তালু থেকে উঠে আসে। সাদা হওয়ায় চুলে বিশেষ করে কালো চুলে খুশকি বেশি দেখা যায়।

খুশকি যে কারণে হয়:

  • মাথার চুল বেড়ে গেলে
  • চুল ভেজা থাকা অবস্থায় আঁচড়ালে
  • মাথায় ময়লা জমলে
  • তেল বেশি বেশি ব্যবহার করলে
  • মাথায় ছত্রাকের আক্রমণ ঘটলে রোগের উপসর্গ বেড়ে যায়।

খুশকি প্রতিরোধে করনীয়:

  • প্রতিদিন চুলে পরিমিত শ্যাম্পু ব্যবহার করে মাথার ত্বককে পরিষ্কার রাখুন।
  • বাইরে বের হলে ধুলাবালি রোধে মাথায় স্কার্ফ-ওড়না বা টুপি ব্যবহার করতে পারেন।
  • গোসলের পর ভেজা অবস্থায় চুল বেধে না রেখে  চুল ভালো করে মুছে শুকিয়ে নিন।
  • ভেজা চুল আচড়ানো যাবে না।
  • একই চিরুনি বহু জনের ব্যবহার কোনভাবেই করা যাবে না।
  • মাথায় খুশকি হলে তেল ব্যবহার কমিয়ে দিতে বা বন্ধ করে দিতে হবে।

খুশকির জটিলতা :

  • খুশকির প্রভাবে মাথায় প্রচণ্ড চুলকানি হয়।
  • তাছাড়াও চুল পড়ার অন্যতম কারণ এই খুশকি।
  • দৈনন্দিন মেলামেশা, অফিস-আদালতে কাজকর্ম, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান, সব ক্ষেত্রেই এই বিব্রতকর অঅবস্থায় ফেলে।
  • খুশকি যখন মাথা থেকে ঝরে কাপড়ে জমে, তখন প্রত্যেকেই একধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।

খুশকির চিকিৎসা কেনো প্রয়োজন :
খুশকি হলে  চিকিৎসকের পরামর্শ মতন কোনো চিকিৎসা গ্রহন না করলে  বিভিন্ন প্রকার সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল কিংবা ছত্রাকজনিত সংক্রমণ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। যেমন-

  • সেবোরিক ডার্মাটাইটিস
  • টিনিয়া ক্যাপাইটিস

খুশকি নিয়ন্ত্রণে না রাখলে চুল পড়ে যেতে পারে। তাই একে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরিঅ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

দাদ:
দাদ শুধু শরীরেই হয় না। মাথায়ও হয়।
মাথায় দাদ হওয়ার কারণ :  মাথার ত্বকের প্রদাহে, মরা চামড়া ওঠা, চুলকানি এবং মাথার চুলপড়া ছত্রাকের আক্রমণে ঘটে থাকা দাদের লক্ষণ। রোগটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের মাথায় হতে দেখা যায়।

প্রতিরোধে করনীয়: অন্যের ব্যবহার করা সামগ্রী এড়িয়ে চলুন।
এটি সম্পূর্ণ নিরাময় যোগ্য চর্মরোগ, একটু সময় সাপেক্ষ তাই ধৈর্য ধরে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়.সঠিক চিকিৎসায় এই রোগ ভাল হয়ে যায় পুরোপুরি ভাবে।

মাথার ত্বকে ব্রণ:
চুলে ঢাকা থাকে বলে দেখা না গেলেও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ব্রণ ক্ষতিকর। বিশেষ করে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে চুল পড়া স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাথায় টাক দেখা দিতে পারে।

মাথার ত্বকে ব্রণ হওয়ার কারণ :

  • ময়লা, ধুলাবালি, মাথার শুষ্ক মরা কোষ বা খুশকি জমে তালুর লোমকূপগুলো বন্ধ হওয়ার কারণে মাথার ত্বকে ব্রণ হতে পারে।
  • ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থযুক্ত প্রসাধনীর ব্যবহার, তেল চিটচিটে ভাব।
  • মাথা নিয়মিত পরিষ্কার না করাও এই ব্রণের অন্যতম কারণ।
  • দিনের বেশির ভাগ সময় মাথা স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা থাকলে মাথায় ঘাম জমেও চুলের ফলিকলগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে যত্ন ও পরিষ্কারের অভাবে ব্রণ দেখা দেয়।

প্রতিরোধে করনীয়: কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে খুব সহজেই মাথার ত্বকে ব্রণ হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

  • মাথাকে ধুলাবালি মুক্ত রাখতে হবে। এজন্য সঠিক নিয়মে মাথার ত্বক পরিষ্কার করতে হবে।
  • বড় দাঁতওয়ালা চিরুনি ব্যবহার করুন।
  • দিনে কয়েকবার চুল আঁচড়ালে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে। এতে মাথার ত্বকের সমস্যা কম হয়।
  • ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ যুক্ত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
  • শ্যাম্পু সরাসরি চুলে না দিয়ে পানিতে গুলিয়ে ব্যবহার করুন।
  • নিয়মিত  কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। খেয়াল রাখবেন কন্ডিশনার যেন মাথার তালুর অংশে ব্যবহৃত না হয়।
  • চুল পরিষ্কারের জন্য সবসময় ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন।
  • আপনার মাথার ত্বক ও চুলের ধরন বুঝে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ও তেল ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে একজন স্কিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।


চুলের যত্নে প্রতিদিন কি করবেন:

  • নিয়মিত চুল পরিষ্কার করুন।
  • প্রোটিনযুক্ত খাবার খান।
  • ব্যালেন্স ডায়েট করুন।
  • প্রচুর পানি পান করুন।
  • অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে মাথা ধোয়া থেকে বিরত থাকুন।

চুল পড়া বন্ধ করার উপায়:

  • যদি পুস্টির অভাবে চুল পড়া শুরু হয় তবে আপনার খাদ্য তালিকার দিকে নজর দিন।
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশী করে খাবেন।
  • খাবারের সাথে কিছু ভিটামিন এবং মিনারেলস গ্রহণ করুন।
  • পরিমিত পরিমাণে আয়রন এবং জিঙ্ক চুল গজানোর জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মটরশুঁটি, বাদাম, কলিজা, মাংস, দুধে আপনার প্রয়োজনীয় জিংক আর আয়রন পাবেন। তাই এগুলো খাদ্য তালিকায় রাখুন।
  • প্রচুর পানি পান করুন।


ছোটখাটো সমস্যাই পরবর্তীতে বড় রোগের সূত্রপাত ঘটাতে পারে। তাই মাথার ত্বক কিংবা চুলের সমস্যা দেখা দিলে একজন স্কিনরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে চিকিৎসা নিন।

লেখক : ডা. সৈয়দা সামিনা মাহজাবিন
এস্থেটিক কন্সাল্টেন্ট এন্ড লেজার স্পেসিয়ালিস্ট
স্কিনলজিক লেজার এন্ড এস্থেটিক সেন্টার।
কেন্দ্রিয় পুলিশ হাসপাতাল।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //