বোতলজাত সয়াবিন তেলে ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট: গবেষণা

দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ বোতলজাত ও চার ভাগের একভাগ খোলা সয়াবিন তেলে মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট রয়েছে।

সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সায়েন্টিফিক ও মেডিকেল পাবলিকেশন সায়েন্সডিরেক্ট–এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণা।

সায়েন্সডিরেক্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়, বোতলজাত তিনভাগের দুইভাগ ও খোলা চারভাগের একভাগ সয়াবিন তেলের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড (টিএফএ) পাওয়া গেছে। তবে পাম ওয়েলে এই ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা ঠিকঠাক ছিল।  ১০৬টি নমুনা গবেষণার পর এই তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬৭টি সয়াবিন তেলের ও বাকি ৩৯টি পাম তেলের। 

ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশে নীতিমালা করা হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, এর মাত্রা ২ শতাংশের বেশি হলে সেটি ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত হবে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, এই মাত্রা ১ শতাংশের বেশি যেন না হয়। 

তবে সায়েন্সডিরেক্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা মতে, বোতলজাত ৬৬.৭ শতাংশ ও খোলা ২৪.৫ শতাংশ সয়াবিন তেলের নমুনায় মাত্রাতিরিক্ত টিএফএ রয়েছে। যদিও পাম তেলে টিএফএর মাত্রা ক্ষতিকর ছিল না বলে জানানো হয় গবেষণায়। 

গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভ নিউট্রিশনের (গাইন) অংশ হিসেবে এই গবেষণা করা হয়েছে। বিল ও মেলিন্ডা গেটসের ফাউন্ডেশন এতে অর্থায়ন করেছে। সংগ্রহ করা নমুনার মধ্যে সয়াবিন তেলে গড়ে ২.২৯ শতাংশ (বোতলজাত) ও ১.৭০ শতাংশ (খোলা) ট্রান্সফ্যাট শনাক্ত হয়েছে।

সয়াবিন তেলের মাধ্যমে দেশের মানুষের দেহে প্রতিদিন কী পরিমাণ ট্রান্সফ্যাট প্রবেশ করছে, তার কিছুটা ধারণাও দেওয়া হয়েছে এই গবেষণায়। গবেষণা মতে, প্রতিদিন ২৭ গ্রাম সয়াবিন তেল খাওয়ার হিসাবে বাংলাদেশের মানুষের দেহে দৈনিক ০.৭৫ গ্রাম টিএফএ  ও পাম তেল খেলে ০.৪৬ গ্রাম টিএফএ প্রবেশ করছে। 

ট্রান্সফ্যাটের এই মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিৎ বলেও গবেষণায় জানানো হয়। 

বাজারের যেসব সয়াবিন ও পাম তেল নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর নাম এ গবেষণায় উল্লেখ করা হয়নি। গবেষক দলের সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন, লেকচারার স্নেহা সারওয়ার, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব লাইফ সায়েন্সের মো. মোশাররফ আশরাফ, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভ নিউট্রিশনের (গাইন) রুবাবা খন্দকার। এ ছাড়া  ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও গাইনের আরও কয়েকজন গবেষক এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। 

গবেষণার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন জানান, ঠিকঠাকমতো পরিশোধন না হওয়ায় এসব তেলে মাত্রার বেশি ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে। চীনসহ অন্যান্য দেশে এসব তেল উৎপাদনের সময় দামি মেশিন ব্যবহার করা হয়। এ কারণে রিফাইনিংটা ঠিকঠাকমতো হয়। সেখানে ট্রান্সফ্যাট এত বেশি মাত্রায় থাকে না।  

ট্রান্সফ্যাট হলো এক ধরনের অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি সরাসরি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না। কিন্তু যখন শিল্প–কারখানায় প্রস্তুত করা হয়, তখন স্লো পয়জনিংয়ের মতো কাজ করে। ভেজিটেবল অয়েলে হাইড্রোজেন যুক্ত করে কারখানায় যে তেল বানানো হয়, তাতে এর মাত্রা বেশি হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, ট্রান্সফ্যাট মানবদেহের রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। এর সঙ্গে সঙ্গে এটি ভালো কোলেস্টেরলও কমিয়ে দেয়। এতে রক্তের স্বাভাবিক কোলেস্টেরলের মাত্রায় অস্বাস্থ্যকর প্রভাব পড়ে। ফলে হার্ট অ্যাটাক, মস্তিষ্কের স্ট্রোক, রক্তনালীর অসুখ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //