কৃত্রিম দাঁতের যত্ন ও করণীয়

দাঁত হারালেই কেবল দাঁতের গুরুত্ব বোঝা যায়। মানুষের প্রাকৃতিক দাঁত যখন পড়ে যায় তখন কৃত্রিম দাঁত লাগানো হয়। কৃত্রিম দাঁতের মাধ্যমে মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও খাবার চিবানোর ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম দাঁত ব্যবহার করা হয়। কৃত্রিম দাঁতের যত্ন ও করণীয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন খুলনা ডেন্টাল কলেজ এর অধ্যক্ষ ডা. অনুপম পোদ্দার।

কৃত্রিম দাঁতের মাধ্যমে মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও খাবার চিবানোর ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম দাঁত ব্যবহার করা হয়। কৃত্রিম দাঁতের মধ্যে দুটি ভাগ রয়েছে-

১. স্থির

২. অপসারণযোগ্য।

ক্রাউন বা ক্যাপ এবং ব্রিজ বা ফিক্সড  দাঁত বাধাই সাধারণত স্থায়ীভাবে স্থির করা হয়। বিভিন্ন ধরনের অপসারণযোগ্য দাঁত যা শক্ত বা নরম (ফ্লেক্সিবল) হয়ে থাকে তা ব্যবহার করা হয়।
বর্তমানে সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ডেন্টাল ইমপ্ল্যান্টের সঙ্গে কৃত্রিম দাঁত সংযুক্ত করা যেতে পারে। ডেন্টাল ইমপ্ল্যান্ট হল কৃত্রিম শিকর চোয়ালে নোঙ্গর করা। কৃত্রিম দাঁতগুলোর মধ্যে ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে যে দাঁতগুলো প্রতিস্থাপন করা হয় সেগুলো তুলনামূলক ভালো কারণ

  • দাঁতটি অন্তত প্রতিস্থাপিত হয়।
  • অন্য কোন দাঁতের সাহায্য ছাড়াই প্রতিস্থাপিত হয়। বাড়তি কোনও অংশ থাকে না।
  • এটা স্বাভাবিক দাঁতের মতোই দেখায় এবং কাজ করে।
  • স্থায়িত্ব অনেক বেশি হয়।

তবে অনেক সুবিধা থাকলেও এটি ব্যবহারের কিছু অসুবিধাও আছে। যেমন-
১. এতে তুলনামূলকভাবে বেশি খরচ পড়ে।
২. সাধারণত এটা সবার ক্ষেত্রে কাজে দেয় না। কারণ এ ক্ষেত্রে রোগীর বয়স, শারীরিক অবস্থা, পুরানো দাঁতের অবস্থান, চোয়ালে হাড়ের অবস্থা, মাড়ির অবস্থা, অন্যান্য জরুরি অঙ্গের সঙ্গে সম্পর্ক, মুখ পরিস্কার রাখার নিশ্চয়তা এবং চিকিৎসকের দক্ষতা ইত্যাদি প্রভাব ফেলে।

কৃত্রিম দাঁতের যত্ন
আপনার প্রাকৃতিক দাঁতের মতো নকল দাঁতগুলোরও সঠিক যত্ন দরকার। যেমন-

  • এই দাঁতগুলোকে নিয়মিত ব্রাশ করতে হবে। ব্রাশ করার জন্য নরম শলাকার টুথ ব্রাশ ব্যবহার করুন।
  • টুথ পেস্টের চেয়ে এগুলো তরল সাবান বা ডিস ওয়াশিং লিকুইড দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা যায়।
  • প্রতিদিন রাতে ব্রাশ করা ছাড়াও প্রতিবার খাবারের পর দাঁত খুলে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
  • অপসারণযোগ্য দাঁতগুলো সাধারণত প্লাস্টিকের হয়। অল্প আঘাতেই ভেঙে যেতে পারে বলে সাবধানে ধরতে হবে।
  • নিজে নিজে জোর করে বাঁকানো বা সোজা করার চেষ্টা করা যাবেন না। সব সময় রাতে ঘুমানোর আগে দাঁত খুলে পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। বাজারে দাঁত রাখার দ্রবণও কিনতে পাওয়া যায়। রাতে এগুলো খুলে ঘুমানো ভালো এতে শরীরের কোষগুলো সুস্থ থাকে।
  • কোন সময়ই গরম পানিতে রাখা যাবে না। এগুলো পড়া অবস্থায় বেশি গরম খাবার না খাওয়াই ভালো।

দাঁত হারিয়ে কৃত্রিম দাঁত সংযোজনের জন্য তিনটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে-
ডেনচার :
এটি অনেক সময় ধরে হয়ে আসছে। এটি তৈরিতে সময় কম আর খরচ অনেক কম বলে অনেকে এটা পছন্দ করে। সমস্যা হলো এর সঙ্গে বাড়তি প্লেট বা অংশ থাকে, ফলে কিছুটা অস্বস্তি অনুভূত হয়। রাতে খুলে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়, জিহ্বা নাড়াতে অসুবিধা, খাবারের স্বাদ কমে যাওয়া, কথা বলতে সমস্যা ইত্যাদির কারণে এটা আরামদায়ক না।

ব্রীজ : পাশের সুস্থ দাঁতকে কাজে লাগিয়ে হারানো দাঁতকে ফিক্সড করে লাগানো হয়। এতে অনেকে মনে করেন ভালো দাঁতটি নষ্ট হয়ে যায়। এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক ও নিরাপদ এবং আরামদায়ক পদ্ধতি।

ইমপ্ল্যান্ট : বিশেষ ধাতব স্তম্ভ দেয়ালে ড্রিল করে অনেকটা স্ক্র লাগানোর মতো দাঁত না থাকা চোয়ালের হাড়ের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা হয়, এর ওপর দাঁত লাগানো হয়, যেটা পুরোপুরি প্রকৃত দাঁতের মত হয়।

লেখক : ডা. অনুপম পোদ্দার, অধ্যক্ষ, খুলনা ডেন্টাল কলেজ

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //