সন্তানের মানসিক বিকাশ

সন্তানের শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে মা-বাবা যতটা চিন্তিত থাকেন মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ নিয়ে ততটা গুরুত্ব দেন না। বর্তমান সময়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সন্তানের মনের যত্ন নিতে হবে। এ বিষয়ে শিশু মনোবিদ ও গবেষক আফসানা ইয়াসমিন অর্থী বলেন, শিশুরা ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতা নিয়ে জন্ম নেয়। চারপাশের পরিবেশ তার মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে শিশুরা ছোট থেকেই মায়ের আদরের মধ্যে বড় হয় সে শিশুরা মানসিকভাবে কোমল ও শান্ত স্বভাবের হয়। এমনকি মায়ের পেটে থাকা অবস্থায়ও আশপাশের পরিবেশ তার ওপর প্রভাব ফেলে।

অনেক সময় মনে করি সন্তান ছোট, কিছু বুঝবে না। এটা ভুল ধারণা, সে তার মতো করে বুঝবে। সন্তানের মানসিক বিকাশে পরিবারই মুখ্য। তাই শিশুর মধ্যে যাতে কোনোভাবেই সমস্যামূলক আচরণ দেখা দিতে না পারে, সে ব্যাপারে পিতা-মাতা ও পরামর্শদাতার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। শিশু মনোবিদ অর্থী কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছেন।

শিশুর প্রাথমিক চাহিদা পূরণ : শিশুর শারীরিক বিকাশের জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনি সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন মানসিক চাহিদাগুলো পূরণ করা। একদিকে স্নেহ-ভালোবাসায় পূর্ণ করতে হবে, অন্যদিকে শিশুর যেসব প্রয়োজনীয় সামগ্রীর চাহিদা থাকে সেগুলো ন্যূনতম হলেও পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

পিতা-মাতার সম্পর্ক : ভালো সম্পর্ক শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। মা-বাবা ও বাড়ির অন্য সদস্যদের মধ্যে বিবাদ লেগে থাকলে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য বিঘিœত হয়, শিশু আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।

শিশুর মনস্তত্ত্ব বিষয়ে জ্ঞান : শিশুর মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে সাধারণ কিছু জ্ঞান থাকলে মা-বাবা তার সন্তানের সমস্যাগুলো বুঝতে এবং তা প্রতিকার করতে সক্ষম হবেন। শৈশবে শিশুর কী কী চাহিদা থাকে, সেগুলো কীভাবে পূরণ করা যায়, শিশুর আচরণ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্থাৎ বিভিন্ন সমস্যামূলক আচরণ কীভাবে শিশুর ওপর প্রভাব বিস্তার করে ইত্যাদি বিষয়ে জানতে হবে। 

স্বাধীন পরিবেশ : শৈশবে শিশুরা খুব সক্রিয় থাকে। তাকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। কোনো কাজ করতে গেলে তাকে বাধা দেওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত স্বাধীনতা যেন শিশুকে বিশৃঙ্খল করে না তোলে, সে ব্যাপারেও পিতা-মাতার সতর্ক হওয়া উচিত। শিশুর অনিচ্ছায় চাপ দিয়ে কাজ করালে, সে বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে।

নৈতিক চরিত্রগঠনে পিতা-মাতার ভূমিকা : শিশুরা প্রথমত মা-বাবাকে দেখেই শেখে। তাদের আচরণ আদর্শস্থানীয় হতে হবে। সন্তানের সামনে তারা এমন কাজ করবেন না, যাতে শিশুর নৈতিক মানের অবনতি ঘটে। সন্তানের কাছ থেকে মা-বাবা যেমন আচরণ প্রত্যাশা করবেন, তাদের আচরণ সেরকম হওয়া উচিত। শিশু কোনো অন্যায় কাজ করলে তাকে শাসন করবে, বুঝিয়ে বলেন। আবার ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করবেন। 

বয়ঃসন্ধিক্ষণে মা-বাবার ভূমিকা : বয়ঃসন্ধিকালে সন্তানের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক পরিবর্তন হয়। দেহ-মনের হঠাৎ পরিবর্তনের ফলে শিশুর অভিযোজনে সমস্যা হয়। মা-বাবার দায়িত্ব বয়ঃসন্ধিক্ষণের পরিবর্তন সম্পর্কে অবহিত করা। এই পরিবর্তন যে স্বাভাবিক ঘটনা, সবার জীবনেই ঘটে সে সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া। শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে বয়ঃসন্ধিক্ষণের সঠিক বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই মা-বাবাকে বিশেষ সচেতন হতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //