ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা করা প্রয়োজন

কদম ফুলের সঙ্গে এখন এডিস মশাও নিয়ে আসে বর্ষা ঋতু। আর এডিস মানেই তা ডেঙ্গু ছড়ানোর অস্ত্র। বাংলা পঞ্জিকা বলছে এখন বর্ষাকাল। আর রাজধানীতে শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর আধিপত্য। হাসপাতালগুলোতেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর আধিক্য। পাশাপাশি মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। তাই এ সময়টায় সাবধানতা অবলম্বনের বিকল্প নেই। জেনে নেই ডেঙ্গু হলে কী করণীয় আর ডেঙ্গুকে দূরে রাখতে কী করতে হবে। 

এ প্রসঙ্গে ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. সি. এম. শামীম কবীর বলেন, সংক্রমণের প্রথম চার থেকে ছয় দিনে শরীরে স্পষ্ট হয় ডেঙ্গুর লক্ষণ। আক্রান্ত ব্যক্তির মাথাব্যথা, চোখব্যথা, উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর, মাংসপেশিতে ব্যথা ও বমি ভাব দেখা দেয়। এ রোগের আরও একটি দিক হলো, রোগীর শরীরের প্লাটিলেট ক্রমশ নিম্নমুখী হয়। এতে করে মাড়ি ও পায়ুপথে রক্তক্ষরণ দেখা দেয়। সেই সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দেয় এবং শরীরে ভর করে ক্লান্তি ও অবসাদ। 

এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এমন বিশেষ কোনো ওষুধ নেই যা সেবনে নিমেষেই এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত হওয়া যায়। এ অবস্থার প্রতিকারে বিশেষ কিছু নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। ফলের রস, স্টু জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে পারেন। নিয়মিত রক্তচাপ মাপতে হবে। তবে ভুলেও নিজে নিজে অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেনের মতো ওষুধ সেবন করতে যাবেন না। 

ডেঙ্গু আক্রান্তদের বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হলেও কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই হাসপাতালে যাওয়া উচিত। বিশেষ করে ডায়রিয়া। এ ছাড়া জ্বরে শরীর ঠান্ডা হলে মোটেও ঘরে বসে থাকা ঠিক হবে না। অনেকে আছেন একাধিকবার কোনো রোগে আক্রান্ত হলে পূর্ব অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে মামুলিভাবে নেন। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ভুলেও এমনটা করতে যাবেন না। কেননা দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে ফল ভয়াবহ হতে পারে। তাই পুনরায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত। রোগটি মারাত্মক পর্যায়ে গেলে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হতে পারে। তাই কোনো অবস্থাতেই ডেঙ্গুকে মামুলি জ্বর হিসেবে নেওয়ার সুযোগ নেই। 

ডেঙ্গু প্রতিরোধ প্রসঙ্গে ডা. শামীম বলেন, আমরা সবাই জানি ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে এডিস মশা। তাই এ রোগকে দূরে রাখতে হলে মশা (এডিস) থেকে দূরে থাকতে হবে। এডিসের বংশ বিস্তার রোধ করতে হবে। বাড়ির আশেপাশে কোথাও বিন্দু পরিমাণ পানি জমতে দেওয়া যাবে না। কেননা কয়েক দিনের জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা বেড়ে ওঠে। পোষা প্রাণীর পানি নিয়মিত বদলে দিতে হবে। নিজেদের ব্যবহারযোগ্য পানিও ঢেকে রাখতে হবে। 

সবশেষে বলে রাখা ভালো, ডেঙ্গু হলে কিছু বিষয়ে মানুষ অহেতুক চিন্তা বাড়ায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে প্লাটিলেট। প্লাটিলেট কমতে থাকলেই অনেকে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। কেউ কেউ আবার মনে করেন প্লাটিলেট কমলেই বুঝি রক্ত দিতে হবে। এসব একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা। এ রোগে প্লাটিলেট মূল বিষয় নয়। তাই এটি নিয়ে এত উদ্বেগের কিছু নেই। প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলে এবং রক্ত ক্ষরণ হতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত দিতে হবে। প্লাটিলেট বৃদ্ধিতে অনেকে আবার পেঁপে পাতার জুস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মূলত এসবের কোনো ভূমিকাই নেই। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে পদক্ষেপ নিন। নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আর চারপাশ যেন মশামুক্ত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //