কেন এই নিঃসঙ্গতা, কেন এই মৌনতা, আমাকে ঘিরে, তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে...কিন্তু আসলেই কি একাকী জীবন তার নিয়মে কাটে? মোটেও না। বরং জীবনের তখন অস্বাভাবিক ও অসুস্থতার সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। সবার জীবনেই বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে একাকিত্ব আনোগোনা করে। এটা প্রকৃতিরই নিয়ম। ফলে এই সাময়িক নিঃসঙ্গতা বা একাকিত্ব খুব একটা ক্ষতি করতে পারে না। কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদি হলে এর ফল হতে পারে ভয়াবহ।
অনেক সময় দেখা যায় এ পরিস্থিতিতে থাকা মানুষ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে চিকিৎসা শাস্ত্র ও আধুনিক বিজ্ঞান বলে, একাকিত্ব শুধু মনের ওপর প্রভাব ফেলে না, নানাবিধ শারীরিক অসুস্থতারও কারণ হয়ে থাকে।
একলা মানুষকে ঘরে-বাইরে সব কাজই নিজ হাতে সামলাতে হয়। ফলে স্ট্রেস পড়ে যায় মাত্রাতিরিক্ত। তাছাড়া দৈনন্দিন জীবনের আরও কত চিন্তা তো থাকেই। যার ফলে উচ্চরক্তচাপ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত স্ট্রেস থেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ারও সমূহ ঝুঁকি থেকে যায়। এছাড়া নিঃসঙ্গতায় ভোগা লোকের থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কেননা থাইরয়েড সমস্যার অন্যতম কারণ এই স্ট্রেস। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোলের (সিডিসি) বক্তব্য অনুযায়ী, আধুনিক বিজ্ঞানের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে তথ্য প্রমাণাদি রয়েছে যে নিঃসঙ্গতা বা একাকিত্ব বিভিন্ন ধরনের অসুখের দিকে ঠেলে দেয় মানুষকে।
দীর্ঘদিন একা থাকার প্রভাব পড়তে পারে মস্তিষ্কের ওপর। ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। নিঃসঙ্গ ব্যক্তিদের ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়। এ ছাড়া সিডিসির জরিপ অনুযায়ী, নিঃসঙ্গতায় ভোগা মানুষের হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা ২৯ শতাংশ বেড়ে যায় আর স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে ৩২ শতাংশ। এখানেই শেষ নয়। একলা জীবনযাপন করা মানুষদের বিষাদ, বৈকল্য উদ্বেগ ভর করাটা খুব স্বাভাবিক। যার ভয়াবহ পরিণাম হতে পারে আত্মহত্যা। শুধু তাই নয়। দীর্ঘদিন বিষাদ ও বৈকল্যে ভোগা মানুষদের প্রাণশক্তিও ফুরোয় দ্রুত। ফলে তাদের মাঝে অল্পবয়সে মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এছাড়া দীর্ঘদিন একলা যাপন মানুষের মেজাজের ওপর প্রভাব ফেলে। তার স্বভাব খিটখিটে হয়, রাগ বেড়ে যায়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন একাকিত্বের ফলে শারীরিক অসুস্থতার কারণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অনেক মানুষের একা থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তাদের কাছে এই জীবনযাপনকে কারাগারের মতো ভয়ঙ্কর মনে হয়। যারা একাকিত্বে ভোগে তাদের মনে সবসময় অজানা উদ্বেগ কাজ করে। এটি মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে। ফলে স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। এই হরমোন নিঃসরণের ফলে মানুষের উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়, হৃদয়ের ওপর চাপ বৃদ্ধি করে, ডায়াবেটিস বাড়াতে সাহায্য করে। আর এই উচ্চ রক্তচাপ কিডনির অসুখও বাড়িয়ে দেয়।’
তাই কাউকে এসব রোগ থেকে দূরে থাকতে হলে করতে হবে একাকিত্ব দূূর। এ চেষ্টা নিজেকেই করতে হবে। পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব থাকলে ঘুচিয়ে তাদের সময় কাটাতে হবে। এছাড়া সে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে যুক্ত করতে পারে। পাশাপাশি সঙ্গী বা বন্ধুবান্ধব খুুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh