অবসট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় মৃত্যু বাপ্পি লাহিড়ীর, কী এই রোগ

অবসট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভারতের বিখ্যাত সুরকার ও গায়ক বাপ্পি লাহিড়ী। কি এই অবসট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া?

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হলো ঘুম সম্পর্কিত শ্বাস-প্রশ্বাসের একটি ব্যাধি। এই রোগে ঘুমানোর সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাস অনিয়মিত হয়ে যায়। অর্থাৎ শ্বাস কখনও শুরু হয়, কখনও আচমকা বন্ধ হয়ে আসে। 

বিভিন্ন ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে, তবে সবচেয়ে বেশি যা দেখা যায়, তাহলো অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া। এই রোগে আক্রান্তের গলার পেশি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি শিথিল হয়ে আসে। এই পেশি মুখগহ্বরের টাকরা, আল জিভ, জিহ্বা ও টনসিলের মতো অংশগুলোকে ধরে রাখে। ফলে এই পেশির শিথিলতায় শ্বাস নেওয়ার পথটি রুদ্ধ হয়ে আসে ও ঘুমের সময় আচমকা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়।

এই রোগের একটি লক্ষণীয় উপসর্গ হলো সশব্দে নাক ডাকা। এছাড়াও ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসা, আচমকা ঘুম ভেঙে যাওয়া, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ঘুম থেকে ওঠার পর মাথাব্যথা, দিনের বেলায় ঘুমের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া বা ঘন ঘন মেজাজ বদল এ সমস্যার সাধারণ উপসর্গ।

অতিরিক্ত ওজন, বার্ধক্য, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাসনালীর সমস্যা এ রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আবার শ্বাসকষ্ট, ধূমপানের অভ্যাস এবং পরিবারে কারও অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলেও এ রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।  

বিশেষজ্ঞদের মতে ১০ সেকেন্ডের বেশি এমন অবস্থা থাকলে দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশ কমে যেতে পারে। 

একটি গবেষণা বলছে, অবসট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা সাধারণ মানুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এই রোগের ফলে ঘুমের মধ্যে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘদিন ধরে স্লিপ অ্যাপিনিয়া চলতে থাকলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ ব্যাহত হয়। মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র ও পাকস্থলির কাজে এর প্রভাব পড়ে।

পলিসমনোগ্রাফি নামের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করা যায়। এ পরীক্ষায় ঘুমের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গের সক্রিয়তা এবং রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করা হয়।

গবেষণা বলছে, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। পুরুষদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার প্রজননক্ষম বয়সের নারীদের দ্বিগুণ, তবে ঋতুস্রাবের বয়স পেরিয়ে গেলে নারীদের মধ্যে এ হার বাড়ে। 

তবে এ সব সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায় জীবনধারায় সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ফুসফুসের রোগের চিকিৎসক সুস্মিতা রায়চৌধুরী বলেন, এটি একেবারেই একটি ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’। অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা যেমন এই রোগ বাড়িয়ে দিতে পারে, তেমন জীবনযাপনের ভঙ্গিতে কিছু সাধারণ বদল তা নিয়ন্ত্রণও করতে পারে। 

তিনি বলেন, স্থূলতার সমস্যা যেহেতু এই রোগ বাড়িয়ে দেয়, তাই জোর দিতে হবে শরীরের ওজন কমানোর দিকে। সে কারণে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। কী খাচ্ছেন আর কী খাবেন না, সে বিষয়ে নজর রাখতেও হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ, কম কার্বোহাইড্রেট আর কম ফ্যাটযুক্ত খাবার সাহায্য করতে পারে স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে। তারই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে যেন ডায়াবিটিস কিংবা হাইপারটেনশনে না ভোগেন রোগী। কারণ স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলে এই দু’টি রোগ তাড়াতাড়ি ধরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে সতর্ক করলেন চিকিৎসক।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //