নিয়মিত শরীরচর্চায় কমে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি

প্রতি বছর সারা বিশ্বে ফুসফুসের গুরুতর সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ায় মারা যান অসংখ্য মানুষ। নিউমোনিয়া হলো ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ। সংক্রমণ ও এর পরবর্তী প্রদাহ থেকে এ রোগ হয়। সংক্রমণ হতে পারে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত্যাদি দিয়ে। 

তবে সব সর্দি-কাশিই নিউমোনিয়া নয়। যখন জ্বর ও এর সঙ্গে থাকে কফ ও শ্বাসকষ্ট, তখনই কেবল শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ হয়েছে বলে ধরা হয়। নিউমোনিয়া মৃদু বা হালকা থেকে জীবন হানিকরও হতে পারে। শীতে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ এই নিউমোনিয়া। তবে এ অসুখ বছরব্যাপী হতে পারে।

কিন্তু নিয়মিত শরীরচর্চা অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে এই রোগের ঝুঁকি। প্রায় ১০ লাখ মানুষের উপর করা একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য।

বিজ্ঞানবিষয়ক জেরোসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেহের অতিরিক্ত ওজন, রক্তচাপের সমস্যা, স্নেহ পদার্থের ভারসাম্যের অভাব, যৌন হরমোনের অস্বাভাবিক ক্ষরণ প্রভৃতি বিষয় নিউমোনিয়াকে অনেক বেশি গুরুতর করে তোলে। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে এই সব বিষয় স্বাভাবিক থাকে, পাশাপাশি কমে প্রদাহের ঝুঁকিও। ফলে অসুখের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণে থাকে অনেকটাই।

মানুষের ফুসফুস অসংখ্য ক্ষুদ্রাকৃতি থলির মতো প্রকোষ্ঠ নিয়ে গঠিত, যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘অ্যালভিওলাই’। একজন সুস্থ মানুষ যখন শ্বাস নেন, তখন এই অ্যালভিওলাই-তে বায়ু প্রবেশ করে। কিন্তু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে এগুলোতে তরল ও শ্লেষ্মা জাতীয় পদার্থ জমে যায়। ফলে অক্সিজেনের প্রবেশ কঠিন হয়ে ওঠে ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকের আক্রমণে এই ঘটনা ঘটতে পারে।

সমীক্ষকদের দাবি, কী ধরনের শরীরচর্চা নিউমোনিয়া কমাতে পারে তা নির্দিষ্ট করে বোঝা না গেলেও, প্রাত্যহিক অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করলে যে এর প্রাবল্য কমে তা এক প্রকার নিশ্চিত।

তবে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে শরীরচর্চার ভূমিকা নিয়ে নিশ্চিত নন গবেষকরা। পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কোভিড রোগীর অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক হয়ে পড়ছে। আপাতভাবে সুস্থ শরীরের অধিকারী ব্যক্তিরাও তার ব্যতিক্রম নন। 

এ কথা ঠিক যে, নিয়মিত শরীর চর্চায় ফুসফুস ভাল থাকে, বাড়ে অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা, কিন্তু তাতে কোভিড সংক্রান্ত নিউমোনিয়া আটকায় কতটা, তা জানতে প্রয়োজন আরও গবেষণার।

যাদের নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে

১. ছোট্ট শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা

২. বহুদিন ধরে ভুগছে এমন কোনও রোগ থাকলে। যেমন: ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, ফুসফুসের অন্য কোনো রোগ, এইডস ইত্যাদি থাকলে

৩. যাদের অন্য কোনো কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে যেমন: ক্যানসারের চিকিৎসা নিলে, স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ সেবন করলে

৪. যারা ধূমপান করেন

চিকিৎসা

সাধারণ নিউমোনিয়ার চিকিৎসা বাড়িতেই সম্ভব। এজন্য সঠিক ওষুধের পাশাপাশি এ সময় প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে ও পুরোপুরি বিশ্রাম নিতে হবে। নিউমোনিয়া ভালো হতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। এ সময় কুসুম গরম পানি, লবণ-পানি বা লাল চা দেওয়া যেতে পারে। 

নাকে নরমাল স্যালাইন, নরসল ড্রপ দেওয়া যেতে পারে। অন্য কোনো ওষুধ-জাতীয় ড্রপ দেওয়া যাবে না। দুই বছরের নিচের শিশুদের বুকের দুধ বন্ধ করা যাবে না। বুকে তেল, কোনো বাম ব্যবহার করাও উচিত নয়। শিশুদের সামান্য কাশিতে অহেতুক সাকশন যন্ত্র দিয়ে কফ পরিষ্কার বা নেবুলাইজার যন্ত্র ব্যবহারও ঠিক নয়।

অবস্থা সংকটাপন্ন হলে অর্থাৎ খুব বেশি শ্বাসকষ্ট, সবকিছুই বমি করে দিলে, শিশু অজ্ঞান হয়ে গেলে বা খিঁচুনি হলে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //