সারাক্ষণই ক্লান্ত লাগে, ডায়েটে রাখতে পারেন এসব খাবার

অনেকের ঘুম থেকে ওঠার পরও ক্লান্ত লাগে। কিংবা সারাদিনই অন্য কাজের মাঝে ক্লান্ত লাগে। ঘুম না পেলেও শরীরে চলতে চায় না। সামান্য গায়ে-হাত-পায়ে ব্যথা হয়। এর পেছনে অনেক রকম কারণ থাকতে পারে। 

শরীরের উপর একটানা ধকল গেলে সেই ক্লান্তি কাটানোর জন্য খানিক বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে ক্লান্তি জমে জমে শরীর একটুতেই কাহিল হয়ে পড়বে। অন্য কোনো শারীরিক জটিলতারও উপসর্গ হতে পারে ক্লান্তি। উচ্চ রক্তচাপ যাদের রয়েছে, তারা একটুতেই হাঁপিয়ে যান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন এর শিকার হন। কিন্তু এর পেছনেও কিছু কারণ রয়েছে। জেনে নেয়া যাক ক্লান্তিবোধের পিছনে ঠিক কী কী কারণ থাকতে পারে- 

রক্তস্বল্পতা

ক্লান্তি বা অবসাদগ্রস্ততার অন্যতম কারণ রক্তস্বল্পতা। যদি আপনি রক্তস্বল্পতায় ভোগেন, তাহলে রক্তে লোহিত কণিকার অভাব দেখা দেবে, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করে। যদি আপনার সারাক্ষণ মাথাব্যথা করে, বুক ধড়ফড় করে, ঘুমের ঘাটতি ইত্যাদি দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অ্যাড্রিনালিন ফেটিগ

অ্যাড্রিনালিন গ্রন্থি যথেষ্ট পরিমাণে হরমোন নিঃসরণ না করলে সারাদিন ক্লান্তি বোধ হয়। খুব বেশি স্ট্রেস নিলে বা মিষ্টি ও নোনতা খাবার অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে এই সমস্যা হতে পারে। এমন হতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ভিটামিন বি১২ এর অভাব 

ভিটামিন বি১২ মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এর অভাব হলে সারাদিন শরীর দুর্বল ও ক্লান্ত লাগে।

ডিপ্রেশন

সারাদিন ক্লান্তি বোধের অন্যতম কারণ হল ডিপ্রেশন। এর জেরে সারাদিন খিদের অভাব, ঘুম কম হওয়া ইত্যাদি হয়। মানুষ এই সময়ে আত্নহত্যা প্রবণও হয়ে উঠতে পারে। ডিপ্রেশনের শিকার হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

আয়রনের অভাব 

শরীরে আয়রনের অভাব হলেও সারাদিন ক্লান্তি বোধ হয়। এর ফলে হিমোগ্লোবিনের অভাব, দুর্বলতা, প্রায়ই চোখে অন্ধকার দেখা এই সমস্যাগুলো হতে থাকে।   

ঘুমের অভাব

পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মতোই পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। আর এর জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন দরকার। বাজে জীবনযাত্রা, খাওয়ায় অনিয়ম ও ব্যায়ামের অভাবে নানা রোগ হতে পারে। অপর্যাপ্ত ঘুম ক্লান্তির কারণ হতে পারে। শরীর ও মনের স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন অন্তত ছয় ঘণ্টা ঘুম জরুরি।

আর্দ্রতার অভাব

শরীরকে আর্দ্র রাখা সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। শরীরে পানির অভাবে ডিহাইড্রেশন হয়। পানির অপর্যাপ্ততা শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতায় প্রভাব পড়ে। ফলে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করে শরীরকে হাইড্রেট রাখুন।

একটু খাওয়াদাওয়ার দিকে নজর দিলেই এই ক্লান্তির সমস্যা কমতে পারে। রোজকার ডায়েটে এমন খাবার রাখতে হবে যা থেকে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন ও অন্যান্য উপাদান পায়। জেনে নেয়া যাক সেগুলো কি-

মাছ

কাঁকড়া, চিংড়ির মতো সামুদ্রিক খাবার ছাড়াও যেকোনো মাছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। তাই মাছ রাখতে রোজকার খাদ্যতালিকায়।

বীজ

খিদে পেলে মুখ চালানোর জন্য ফ্ল্যাক্স সিড, কুমড়োর বীজ, সূর্যমুখীর বীজ দারুণ উপকারী। আবার শুধু মুখে খেতে ভাল না লাগলে কোনো সালাদ বা ডাল-তরকারিতেও দিয়ে দিতে পারেন।

মুরগি, ডিম

লিন প্রোটিন বা চিকেনে ‘হেম আয়রন’ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। যা সাধারণ আয়রনের চেয়ে অনেক দ্রুত হজম করতে পারে আমাদের শরীর। ডিমে কিন্তু প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। যারা ডায়াবেটিক, তাদেরও ডিম খেতে কোনো বাধা নেই। এনার্জি বাড়াতেও ডিমের জুরি নেই।

সবুজ শাক-সবজি

পালং শাক, কলমির শাক, লেটুস, ব্রকোলির মতো সবুজ সবজি খান। তবে বর্ষাকালে এই ধরনের শাক-সবজি খেতে চাইলে ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। বেশ কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। কিংবা হাল্কা ভাপিয়ে নিয়ে সালাদে দিতে পারেন। কাঁচা সবজি খাবেন না।

ড্রাই ফ্রুট

শরীরে স্ফূর্তি আনতে এক মুঠো ড্রাই ফ্রুট দারুণ কাজে দেয়। বিকেলের দিকে চায়ের সঙ্গে কাঠবাদাম, কিশমিশ, আখরোট, পেস্তা, খেজুরের মতো ড্রাই ফ্রুট খেতে পারেন।

পানি পান

সারাদিন সুস্থ থাকতে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। শরীরের ক্লান্ত কোষগুলোকে সজীব রাখতে পান করুন বিশুদ্ধ পানি। দিনে অন্তত আট থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে ভুলবেন না। শুধু পানি ভালো না লাগলে লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। তবে এতে চিনি মেশাবেন না।

ওটস-কলা

অনেকেই দই দিয়ে ওটস খান। অনেকে দুধ দিয়ে। যদি দুধ ওটস আর কলা খান তাহলে শরীর সুস্থ থাকবে। এছাড়াও দূর হবে ক্লান্তি। এমনিই কলা শরীরকে খুব এনার্জি দেয়। এছাড়াও দুধ কর্নফ্লেক্সের সঙ্গে কলা খেতে পারেন। সকালে একটা কলা খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তাতে কিন্তু শরীরের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং উপকারেই আসবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //