করোনা ভালো হলেও থাকতে পারে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

করোনাভাইরাসের কারণে পরবর্তী সময়ে শরীরে বহু রকম সমস্যা হতে পারে বলে আগেই জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি এর পাশাপাশি উঠে আসছে আরো একটি তথ্য। কভিডের কারণে শরীরে তৈরি হতে পারে এমন অ্যান্টিবডি, যা রোগীর নিজের শরীরকেই আক্রমণ করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি কিছু সংখ্যক রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ধরন নিয়ে গবেষণার সময় বিষয়টি নজরে আসে চিকিৎসকদের। দেখা যায়, তাদের শরীরে এমন কিছু অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদিভাবে শরীরেই থেকে যাচ্ছে। কভিড সেরে যাওয়ার পরে সেই সব অ্যান্টিবডি শরীরের অন্য কোষ বা অঙ্গকে আক্রমণ করছে। 

বিজ্ঞানীরা এই সব অ্যান্টিবডি সম্পর্কে বলছেন, এরা শরীরের পথভ্রষ্ট যোদ্ধা। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও এরা লড়াই থামায় না। উল্টে শরীরকেই আক্রমণ করে।

কভিডের কারণে এমন সমস্যা হবেই, তেমন কারো প্রমাণ এখনো না থাকলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, যাদের ইতিমধ্যেই অটোইমিউন ডিসঅর্ডারের মতো সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে করোনা অতিরিক্ত বিপদ ডেকে আনতে পারে। তার মতে, রোগপ্রতিরোধের জন্য শরীর এক ধরনের রাসায়নিক তৈরি করে। যার নাম সাইটোকাইন। কোনো কোনো মানুষের ক্ষেত্রে রোগপ্রতিরোধ প্রক্রিয়া প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে যায়। তাদের শরীরে বিপুল মাত্রায় সাইটোকাইন তৈরি হতে থাকে। যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’ বা ‘সাইটোকাইন ঝড়’ বলা হয়।

কী হয় সাইটোকাইনের মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকখানি বেড়ে গেলে? চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলছেন, যাদের অটোইমিউন ডিসঅর্ডার থাকে, তাদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা বুঝতে পারে না, কোনটা শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন, আর কোনটা বাইরে থেকে আসা ক্ষতিকারক প্রোটিন। ফলে এই বিপুল সাইটোকাইন তখন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের প্রোটিনকে আক্রমণ শুরু করে। অঙ্গগুলোর স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। ক্ষতিও হতে থাকে।

কভিড কীভাবে এই পরিস্থিতিকে আরো বিগড়ে দেয়? ডা. সুকুমার বলেন, করোনাভাইরাস যখন শরীরে ঢোকে, তার প্রোটিনকে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা চিহ্নিত করে আক্রমণ করে। কিন্তু অটোইমিউন ডিসঅর্ডার থাকলে শরীরের বিপথে চালিত সাইটোকাইনগুলো বুঝতে পারে না কোনটা প্রয়োজনীয় প্রোটিন, কোনটা ক্ষতিকারক। ফলে নতুন প্রোটিনের মুখোমুখি হয়ে তারা আরো নিয়মবিরুদ্ধ আচরণ শুরু করে।

টিকা এ ক্ষেত্রে কতটা কাজে লাগতে পারে? ডা. সুবর্ণ বলেন, যখন করোনার টিকা দেয়া হবে, তখনো বাইরে থেকে নতুন প্রোটিন শরীরে ঢোকানো হবে। তখন অটোইমিউন ডিসঅর্ডার আছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে শরীর সেই নতুন প্রোটিনকে কী ভাবে গ্রহণ করবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। তাই তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়তি সতর্কতা নিয়ে টিকা গ্রহণ করতে হবে।

তবে চিকিৎসকদের কথা থেকে পরিষ্কার, কভিড তেমন কোনো অসুখ নয়, যা সেরে যাওয়ার পর তার আর কোনো প্রভাব থাকবে না। বরং উল্টোটাই। একবার কভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকের ক্ষেত্রেই তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব থেকে যাওয়ার আশঙ্কা শরীরে। চিকিৎসকরা ইতিমধ্যেই একে ‘লং কভিড’ বলতে শুরু করেছেন। কারও ক্ষেত্রে তা টের পাওয়া যাবে প্রকটভাবে, কারও বা প্রচ্ছন্ন। -আনন্দবাজার পত্রিকা

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //