মাইগ্রেনের সাতকাহন: জেনে নিন বাঁচার উপায়

মাথাব্যথা করা খুবই সাধারণ উপসর্গ। কিন্তু কোন মাথাব্যথা মাইগ্রেনের তা অনেকের ক্ষেত্রে বুঝতে কষ্ট হয়তবে ‘মাইগ্রেন’-এর যন্ত্রণা যারা ভোগ করেন, তারাই জানেন এটা সহ্য করা কতটা কঠিন। তবে অভ্যাস বদলে ওষুধ ছাড়াও এই ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

তাই মাইগ্রেনের ব্যথার সময় কী করবেন? কী করবেন না? এসব জানা থাকলে সহজেই নিরাময় করা যায়। 

মাইগ্রেনের প্রাথমিক উপসর্গ ও লক্ষণ
• রোগী চোখ ঝাপসা দেখতে থাকে। অনেক সময় বিভিন্ন রঙ অথবা আঁকাবাঁকা রেখা দেখে। হ্যালোসুলেশন হতে পারে।
• মাইগ্রেনের ব্যথায় বমি-বমি ভাব থাকে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত বমি হয় না। 
• আলো সহ্য করতে পারেন না।
• আক্রমণের শুরুতেই চিনচিনে ব্যথা যেটা সাধারণত মাথার একপাশে বা কোনো একটা চোখ থেকে শুরু হয়। সাধারণত সকালে এটা ওঠে, তবে দিনে-রাতে যেকোনো সময়ে এটা শুরু হতে পারে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথাটি মাথার দুপাশে মাথার উপরিভাগে ও ঘাড়ের পিছনে ছড়িয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে সমগ্র মাথায় ব্যথা অনুভূত হয়। প্রথমে অল্প ব্যথা শুরু হয়, পরে ব্যথার তীব্রতা বৃদ্ধি পায় এবং অনেক ক্ষেত্রে বিকেলের দিকে আস্তে আস্তে ব্যথা কমতে শুরু করে। ব্যথার তীব্রতা খুব বেশি হলে অনেক সময় বমি হয়ে যায় এবং এরপরে ব্যথা কমতে শুরু করে।
• প্রাথমিক অবস্থায় মাসে দু-তিন বার আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে কিন্তু পরবর্তীকালে প্রতিদিনই মাথাব্যথা হতে পারে।
• একবার আক্রান্ত হলে ব্যথা ৩৬-৭২ ঘণ্টা স্থায়ী হতে পারে। সাধারণত দুই/তিন ঘণ্টার মধ্যেই রোগী আরোগ্য লাভ করে।
• মাইগ্রেনে আক্রান্ত রোগীরা অন্ধকারে শব্দহীন ঘরে থাকতে পছন্দ করে। কারণ আলো, শব্দ প্রভৃতি মাইগ্রেন উত্তেজক হিসেবে কাজ করে।
• অনেক সময় ভ্রমণ করলে বা অনেকক্ষণ অভুক্ত থাকলে মাইগ্রেন শুরু হয়।

মাইগ্রেন কাদের বেশি হয়?
• মাইগ্রেন মাথা ব্যথা শুরু হয় সাধারণত মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্থ হলে অথবা মেরুদণ্ডের স্নায়ু উত্তেজিত হলে। স্নায়ুর এই উত্তেজনা স্বয়ংক্রিয় স্নায়ু পদ্ধতিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, যা রক্তনালীর প্রসারণ ও সংকোচনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখে।
• মাইগ্রেন জিনঘটিত রোগ। পরিবারের কারো যেমন মা-বাবা-বোন অথবা নিকট আত্মীয়ের মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে এটি হতে পারে।
• যাদের চকলেট, পনির, অ্যালকোহল এ জাতীয় খাদ্যভাস আছে তাদের হতে পারে।
• মহিলারা যারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খান, তাদের মাইগ্রেন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
• দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত টেনশন যারা করেন, তাদের মধ্যে মাইগ্রেনের আক্রমণটা বেশি হয়।
• ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়স থেকে মধ্য বয়স পর্যন্ত মাইগ্রেন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকের ৪০ বছর বয়সের পরে ভালো হয়ে যায়।

চিকিৎসা
সাধারণত মাইগ্রেনের ব্যথায় পেইনকিলার দেওয়া হয়। তবে দীর্ঘ দিন ধরে তা খেলে অন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। রোগী নিজে থেকে যদি কোনও পেইনকিলার খেতে শুরু করেন, তার পরিণাম আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ সর্বাগ্রে প্রয়োজন।
• খাদ্যাভ্যাস বদলে মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যাদের মাইগ্রেন রয়েছে, অতিরিক্ত কফি তাদের জন্য ক্ষতিকর। তবে মাইগ্রেনের অনেক ওষুধে কফির উপাদান থাকে। তাই পরিমিত কফি মাইগ্রেনের ব্যথায় উপশম দেয়। চকলেট, রেড ওয়াইন‌, ড্রাই ফ্রুটস, চিজ জাতীয় খাবারও এড়িয়ে চললে ভাল।
• এমন অনেক সুগন্ধী আছে, যা রোগীর যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেয়। এগুলো সব সময়ে ব্যক্তিভিত্তিক। তাই রোগীকে বুঝতে হবে, কোন খাবারে সমস্যা হচ্ছে, কোন গন্ধে ব্যথা বাড়ছে। তবেই চিকিৎসক সাহায্য করতে পারবেন।
• কাজুবাদাম, ওয়ালনাট ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ হয় বলে খেতে পারেন। আদা কুচি চিবোলে উপকার পাওয়া যায়। সানফ্লাওয়ার অয়েলে রান্না করলেও রোগীর জন্য ভাল।
• মাইগ্রেনের রোগীরা অনেক সময়ে আলো সহ্য করতে পারেন না। চোখ যেন ঠাণ্ডা থাকে, সেই জন্য টিন্টেড গ্লাসের চশমা তাদের দেওয়া হয়। এতে রোগীর চোখ অনেক আরাম পায়।
• স্ট্রেস মাইগ্রেন অ্যাটাক বাড়িয়ে তোলে।  সুতরাং যোগ ব্যায়াম, ধ্যান ইত্যাদি অভ্যাস করতে পারলে মাইগ্রেন থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া যেতে পারে। 
• পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে। যতই ব্যস্ত থাকুন সময় মেনে অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমোনোর চেষ্টা করতে হবে।
• সঠিক সময়ে খাবার এবং পানি পান করতে হবে। তাই অযথা অনেকটা সময় গ্যাপ দিয়ে দিয়ে খাবার না খাওয়াই ভালো।

--ডা. শৌমিক সরকার। বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //