ব্যালটের ভোট গণনা নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হলে দুই ঘণ্টা পরপর নির্ভুলভাবে ভোটের হার জানানো সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ইভিএমে ভোট হলে কেবল তখনই নির্দিষ্ট সময় পরপর ভোটের হার নির্ভুলভাবে দেওয়া সম্ভব ছিল।

আজ মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়ে ভোটের হার নিয়ে নিজের ধারণার কথা বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান।

বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর বর্জনের মধ্যে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থ বার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। গত সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ নতুন মন্ত্রিসভায় পেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব।

নির্বাচনের আগে আগে নির্বাচন কমিশন ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট’ অ্যাপ চালু করে, যা দিয়ে ভোটারররা দুই ঘণ্টা পরপর ভোটের হার জানতে পারবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তবে ভোটের দিন তা হয়নি।

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম ভোটের দিন দুপুরে ব্রিফিংয়ে এসে বেলা ১২টা পর্যন্ত ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পরে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পড়ার হিসাব দেন। ভোট শেষে জানানো হয় ভোটের হার ৪০ শতাংশের আশপাশে হতে পারে। আর ভোটের পরদিন জানানো হয়, এবার ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ।

দুই ঘণ্টার ব্যবধানে ভোটের হার এতটা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন মহল থেকে নানা প্রশ্ন তোলা হয়েছিল।

সেই প্রসঙ্গ ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ম্যানুয়ালি ভোটে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর আসলে কত শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে, সেটি নির্ভুলভাবে দেওয়া সম্ভবপর নয়। ইভিএমএ ভোট হলে সেটা সাথে সাথে রেজিস্টার্ড হত। যেহেতু ইভিএমএ ভোট হয়নি, ম্যানুয়াল ভোটে প্রতি দুই ঘণ্টার তথ্য কোনো সময় সঠিকভাবে দেওয়া সম্ভবপর নয়। সেজন্য সঠিক তথ্যটা এসেছে নির্বাচনের শেষে।”

হাছান মাহমুদ দাবি করেন, এবারের নির্বাচন যে আন্তর্জাতিকভাবে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে তা গ্রহণ করেছে, বহু নির্বাচন পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে আসাই তার প্রমাণ।

“যুক্তরাষ্ট্রের এনডিআই, আইআরআই, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত, সার্কভুক্ত, ওআইসিভুক্ত ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশে এসেছে। তারা সবাই একযোগে মত প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এই নির্বাচনে অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম সহিংসতা হয়েছে। এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেশিরভাগ নিবন্ধিত দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। আপনারা জানেন, যেদিন নির্বাচন হয়, সেদিন প্রচন্ড শীত ও কুয়াশা ছিল। সেই কারণে ভোটের পার্সেন্টেজ প্রায় ৪২ শতাংশ। যদি কুয়াশা এবং শীত না থাকত, তাহলে আরো বেশি ভোট কাস্ট হত।

“বিএনপি নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত ও প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। এরপরও মানুষ ভয় পায়নি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে গেছে।”

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। একই আসন থেকে আগের তিনটি নির্বাচনেও জয়ী হয়েছিলেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে মঙ্গলবারই নিজের জেলায় হাছান মাহমুদের প্রথম সফর। তাই সকালে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা শুভেচ্ছা জানাতে বিমানবন্দরে হাজির হন। ট্রাকের ওপর বানানো অস্থায়ী মঞ্চে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন হাছান মাহমুদ।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সালাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, উত্তর জেলা সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, দক্ষিণ জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান, সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজা, কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ নেতা শফর আলী, সাবেক সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //