দুঃসময়ের বন্ধুদের ভুলি না: প্রধানমন্ত্রী

মহান মুক্তিযুদ্ধে সোচ্চার সমর্থন জানানোর জন্য জাপানিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা কখনও আমাদের দুঃসময়ের বন্ধুদের ভুলে যাই না।

তিনি আরও বলেন, আমি আত্মবিশ্বাসী যে জাপানের জনগণ অতীতের মতোই আমাদের প্রয়োজনে সরকারের পাশাপাশি সবসময় আমাদের পাশে থাকবে। গত পঞ্চাশ বছর ধরে বিদ্যমান আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং ঈর্ষণীয় অংশীদারিত্বকে আগামী বছরগুলোতে আমাদের নতুন প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আজ বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) টোকিওর আকাসাকা প্যালেস গেস্ট হাউসে চার জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এই মহৎ অনুষ্ঠানে আমাদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই, যেখানে আমরা শুধুমাত্র আমাদের বন্ধুদের সম্মান করছি না, বরং জাপানের সাথে বন্ধুত্বের বন্ধনও উদযাপন করছি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতার স্বার্থে সোচ্চার হয়েছিলেন এবং প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন সেইসব মহান ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আয়োজিত এই মহৎ অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, তাদের মধ্যে যেসব জাপানি নাগরিকরা ছিলেন তারাও আজ আমাদের সাথে আছেন। এটি বাংলাদেশ এবং এর জনগণের জন্য একটি শুভ উপলক্ষ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানের জনগণ তখন বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশের তালিকায় আটজন সম্মানিত ব্যক্তির রয়েছেন যাদেরকে ২০১২ সালের ২৭ মার্চ এবং ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর  'ফ্রেন্ড অফ লিবারেশন ওয়ার অনার' দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আজ সন্ধ্যায় আমরা টোকিওতে বাংলাদেশের আরো চারজন মহান বন্ধুকে সম্মান জানাতে এসেছি যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, নৈতিক ও বস্তুগত সহায়তার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং সহায়তা নিশ্চিত করেছিলেন। তারা নৃশংসতার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এবং আমাদের অসহায় মানুষদের জন্য মানবিক ত্রাণ, চিকিৎসা সুবিধা পাঠিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, এটি ছিল একটি কষ্টের সময় যা কথায় প্রকাশ করা যায় না। তখন বাংলাদেশ দখলদার বাহিনীর হাতে ছাড়খাড় হয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, সেই সংকটময় মুহূর্তে, আমাদের জাপানি বন্ধুরা আমাদের দুর্দশা বুঝতে পেরেছিল এবং মানবতার জন্য এগিয়ে এসেছিল।

তিনি স্মরণ করে বলেন, তারা (জাপানিরা) দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল, কিন্তু পিছিয়ে পড়েনি। হুমকির মুখে তাদের নিঃস্বার্থ আচরণ আমাদেও চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ছিল জাপানি স্কুলের শিশুদের দান যারা আমাদেও লোকেদের সাহায্য করার জন্য তাদের টিফিনের অর্থ সঞ্চয় করে দান করেছিল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে জাপানের জনগণের সমর্থনকে স্মরণ করে যা পুনঃনিশ্চিত করেছে  যে, আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সঠিক ছিল যা পদদলিত করা যায় না।

তিনি আরও বলেন, আপনারা ন্যায়বিচার, সম্মান, মর্যাদা এবং মানবাধিকারের জন্য আমাদের দাবির বিষয়ে সাড়া দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সোচ্চার কণ্ঠ আমাদের কণ্ঠে শক্তি যোগ করেছিল এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তা আরো জোরালো হয়েছিল। আপনারা আমাদের উদ্দেশ্য সমর্থন করে সমাবেশ করেছেন এবং একটি নিষ্ঠুর বর্বর শক্তির বিরুদ্ধে একটি মানব ঢাল গড়ে তুলেছিলেন। উদীয়মান সূর্যের দেশে, আমরা মর্যাদা ও মানবতাপূর্ণ একটি জাতির চিত্র দেখতে পাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, তার বাবার উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং সম্পর্ক আরও জোরদার করতে ১৯৯৭, ২০১০, ২০১৪, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে জাপান সফর করা ছিল তার জন্য সম্মানের।

তিনি বলেন, আমি আজ খুশি যে, আমার মেয়াদে, সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আমাদের বন্ধুত্ব একটি 'ব্যাপক অংশীদারিত্ব' থেকে গভীরতা ও মাত্রায় বিকশিত হয়েছে, 'কৌশলগত অংশীদারিত্ব' হয়ে ওঠেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও জাপান সাম্য, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক চর্চা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের বিষয়ে অভিন্ন মহৎ ধারণা ও নীতি অনুসরণ করে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করছি যিনি আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূলকথা ঘোষণা করেছিলেন ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরীতা নয়’ যা জাপানেও চর্চা করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রয়াসে জাপানের টেকসই অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং সমর্থনকে স্বীকৃতি দেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক জাপান সফর একটি সুদৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে  নেতৃত্ব দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধেও ৩০ লাখ শহীদ, অমানবিক নির্যাতন সহ্যকারী ২ লাখ নারী, ১৫ আগস্ট শহীদ সকল ব্যক্তি, জাতীয় চার নেতা, সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের সকল বিদেশী বন্ধু যারা আমাদের মুক্তির লক্ষ্যে অবদান রেখেছিলেন তাদের সকলের প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সত্যিকারের সোনার বাংলা এবং বাংলাদেশকে সুযোগের দেশে পরিণত করার জন্য আমরা নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছি। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, জাপান অতীতের মতোই আমাদের পাশে থাকবে।

এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। এছাড়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন চার জাপানীর সম্মানে প্রশংসাপত্র পাঠ করেন। তারা হলেন- জাপান রেড ক্রস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস তাদাতেরু কোনো, অধ্যাপক গ্যালপ পেমা, রাজনৈতিক নেতা হিদেও তাকানো (মরণোত্তর) এবং ফটো সাংবাদিক তাইজো ইচিনোসে (মরণোত্তর)।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //